==========================
আপনি, তুমি আর তুই
শুধু তিনটি সম্বোধন বা শব্দই নয়,  
চাকচিক্যহীন সাধারণ শব্দের মোড়কে
আসলে এক একটি স্বতন্ত্র পরিচয়,
এক একটি জীবন্ত অস্তিত্ব।
এ শব্দ ত্রয়ে 'আপনি' শব্দটি অন্য মাত্রার  
অভিজাত, নমস্য, পূজনীয়, সম্মানিত
এরকম একটি শব্দ শুধু বাবাকেই মানাতো  
তাইতো 'আপনি' শব্দটি
সবসময় শুধু বাবার জন্যই তোলা থাকতো।
'তুমি' শব্দটি ছিল,
মায়ার বাঁধনে জড়ানো, আদর মাখানো  
সুশীতল এক শান্তির স্পর্শ।
তপ্ত দুপুরে অশুথ গাছের একটু ছায়া,
বিস্তৃত নিঃস্বার্থ সতত ভালোবাসা।
এতো শুধু মায়েরই ভালোবাসা,
তাইতো শব্দটি ছিল শুধুমাত্র মা'র জন্য নির্ধারিত।
আর 'তুই'
'তুই' ছিল সবচেয়ে নির্বোধ, নিকৃষ্ট
নগন্য, তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা  
আর যাচ্ছে তাই রকমের উপেক্ষিত।
তাইতো 'তুই' ছিল  স্বেচ্ছাচারী, ইচ্ছেমতো।
তবে আপনজনকে তুই বলা আর
বাড়ির ভৃত্যকে তুই বলা যে এক ছিল না,
তা বুঝতে আমার অনেক সময় লেগেছিলো।
ততদিনে জেনেছি,
যা ভালোবাসার, যা আপন
যা পেতে ইচ্ছে করে
যার জন্য এ জীবন
তা শুধু তুমিতেই সীমাবদ্ধ।
আর তাইতো খুব অবজ্ঞার 'তুই' শব্দটি
শুধু ছিল তোর জন্য বরাদ্দ।
তোকে কখনো তুমি বলা যায়, বা বলা প্রয়োজন
কিংবা তুই যে আদতে আলাদা একটা সত্তা
তাই মনে হয়নি কখনো।
তুই ছিল আমার নিত্য দিনের অভ্যেস,
সকালের ধূমায়িত এক কাপ চা,
অলস দুপুরের একটু ঘুম,
বিকেলের জম্পেস আড্ডা।
আর রাতের বেলায়, চূর্ণ তারকার মেলায়
তোর ছায়া খুঁজে ফেরা।
তাই বলে, তোর জন্য আমার মনে
বিশেষ কোনো স্থান ছিল না।
কিংবা হয়তো তোর বিশাল আকাশকে
ধারণ করার স্বামর্থ আমার ছিল না।
শুধু সানাই এর করুন সুরের পালকি চড়ে,
যেদিন তুই চলে গেলি,
সেদিন,
তোর চোখের কোনের চিকচিক কষ্ট, যন্ত্রনা, বেদনা
আর বোবা কান্নার অবিশ্রান্ত স্রোতে,
আমি হঠাৎ বুঝেছিলাম,
যে ভালোবাসা ধারণ করা যায় না,
যে ভালোবাসা প্রতিদানের অপেক্ষা করে না,
যে ভালোবাসার প্রতীক্ষা কখনো শেষ হয় না,
অন্তহীন সে ভালোবাসা প্রকাশে ‘তুমি’ অক্ষম।
ভালোবেসে হয়তো সহজেই তুমি বলা যায়,
'তুই' বলা যায় না।
বুঝেছিলাম,
তুই শুধু তুচ্ছ তাচ্ছিল্লের 'তুই' ছিলি না,
তুই ছিলি তুমি'র চেয়ে অনেক বড়
অন্য কিছু, অন্য কেউ
অন্যরকম ভালোবাসার।  
===================================