===================


কৈশোরের দল ছুট চঞ্চল সময়ে,
লালবেনি দুলিয়ে যে কিশোরী
গদ্য ছন্দের ধারাপাতে হেটে যেত,
আমি মুগ্ধ আবেশে
নিত্য অবাক চোখে তাকে দেখতাম,
তাকে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করতো।
প্রতিদিন আবার দেখার জন্য
লাটাই, ঘুড়ি, মার্বেল ফেলে অপেক্ষা করতাম,
অপেক্ষা করতেও ভালো লাগতো।
এই অপেক্ষা আর দেখার পেন্ডুলামের কম্পনাংকের রহস্য
তখনও আমার মথিত হৃদয়ে দুর্ভেদ্য।
শুধু জানতাম,
দিনের ওই সময়টুকু আমাদের,
শুধু আমার জন্য।
সুবর্ণ এ সময়টুকু
ঝিনুকের বুকে লুকানো মুক্তোর মতো
সংগোপনে সঞ্চিত থাকলো বহুদিন।


তারপর একদিন,
কলেজের করিডোরে টুকরো একটি মুহূর্ত
হঠাৎ চোখাচোখি, একটু হাসি
গালে টোল, কোঁকড়ানো চুল
ফিরে ফিরে তাকানো
অবাক দুটি নীল চোখ
অচেনা আবেগের বাঁধভাঙা স্রোত
এলোমেলো করে দিলো সব।
নতুন ছন্দ, নতুন উপমা
ভেসে গেলাম একা একা
কবিতার পাতায়, কল্পনায়।
ছুঁতে পারিনি তাকে কিছুতেই,
দেখেছি শুধু দূর থেকে।
চঞ্চলা ঝর্ণা যেন সে,
চুইয়ে পড়া জ্যোৎস্না গায়
ডানা মেলে বৈশাখী হাওয়ায়
পানি ছিটিয়ে, গা ভিজিয়ে
মিলিয়ে যেত সাগরের মোহনায়।
খুব বুঝতাম,
কখনোই শুধুমাত্র আমার ছিল না সে।
সে ছিল না কারো,
আমরা সবাই ছিলাম তার,
মায়ার মন্ত্রজালে আবদ্ধ অনন্য মুগ্ধতার।
তবু তাকে একটু দেখার জন্য,
তার একটু প্রশ্রয়ের জন্য,
প্রহরের পর প্রহর, দিনের পর দিন
ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো অপেক্ষা করেছি,
অপেক্ষায় থেকেছি,
আর আমার ভালোবাসার নির্বোধ অনুভূতিগুলো  
অবিরাম অপেক্ষার সত্ত্বহীন নৈবেদ্যের স্তূপে  
ভালোবাসার দীর্ঘশ্বাস হয়ে বুকে জমে থাকলো।


একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগামহীন স্বাধীনতায় হারিয়ে ফেললাম নিজেকে
প্রতিবাদ, রাজনীতি, চিৎকার, মারামারি
ছন্নছাড়া মুক্ত জীবন অনিয়ন্ত্রিত।
সে জীবনেও একজন ছিল ছায়ার মতো
পায়ে পায়ে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত
মায়ার চাদরে জড়ানো।
হাত বাড়াতেই ছুঁতে পারতাম যখন তখন
চোখ তুলতেই দেখতে পেতাম
ক্লাসরুম, আড্ডা, হতাশা, রোগ, শোক
সে থাকতো অতি আপনার আপন
চায়নি কখনো কিছু
জড়িয়ে রেখেছে শুধু
সত্তহীন নিঃসংকোচ সানন্দ সমাপন।


তবুও কি থেমেছে অস্থির মন,
ফুরিয়েছে কি জীবনের নিত্য প্রয়োজন।
গতিময় অনুক্ষণ অবিরাম আয়োজন
মিটিয়েছে লেনদেন,
সাধ, সাধ্য আর স্বপ্নের সাতকাহন।
সেই জীবনেও এলো একজন,
লাজনম্র মেহেদি রাঙা চুপি চুপি
আলতা পায়ে রিনিঝিনি ঘুঙুর স্বরলিপি ।
অধিকারের বন্ধনে ছড়িয়ে স্পন্দন
বিনিসুতোয় ছন্দময় এলোমেলো জীবন
যত্রতত্র যাই কিছু, অতি আপনার আপন ।
চাইনি কিছু, তবু পেয়েছি সবটুকু
যখন যেখানে যেমন।
হয়তো ভালোবাসতে চাইনি,
হয়তো ভালোবেসেছি, বুঝিনি
শুধু আঁকড়ে থাকতে চেয়েছি প্রানপনে,
যতদিন বেঁচে থাকি।
তবু হারিয়ে গেলো সব অন্ধকারে
সময়ের জঠরে শুধু স্মৃতি আর স্মৃতি।


ফিরে তাকাই ফেলে আসা পথ
শুন্য জীবনের ছন্নছাড়া রথ
মিললো না জীবনের অঙ্ক কিছুতেই
হেলায় যে ক্ষণ করেছি অবহেলা
ভালোবাসার অন্বেষণে সাঙ্গ করেছি বেলা
পাইনি কি তবে অকৃপণ সে দান
পথে পথে, বারে বারে
ভালোবাসার পরশ পাথর
কখন যে ছুঁয়ে গেছে প্রাণ
জ্বেলে গেছে আলো, বেসেছে ভালো
বুঝিনি কখন কোন বালুতটে
ছুড়ে ফেলেছি তারে, পাথর ভেবে
এখন বৃথাই তারে খুঁজে ফিরি অহর্নিশ,
রিক্ত স্মৃতির বিবরে বেজে চলে  
নির্ঘুম দীর্ঘ রাত্রির একটানা শিস।


ভালোবাসা যে পরশ পাথর ছুঁয়ে যায় একবার
তারপর সময় শুধু অনন্ত অপেক্ষার।


=====================================
( একজন শ্রধ্যেয় কবির জন্য ... আকাশ দেখা যার পেশা... কবির একটি মন্তব্য থেকেই এ কবিতাটির জন্ম  )