তুমি সুফি না সাহিত্যিক মানসুর আল-হাল্লাজ
তুমি তো সামান্য সুতা প্রস্তুতকারকের ছেলে
তাই কি সরল জীবনসাধনা তোমার
বারো বছর বয়সেই কুরআন কণ্ঠস্থ
ইরান থেকে ইরাক , বসরায় কখনো ,
মক্কায় কখনো কোথায় থাকো কেউ জানেনা
এদেশ ওদেশ করতে চীনেও চলে গেলে
পবিত্র ভূমি ভারতেও তোমার পদার্পণ
মরমীবাদের গূঢ়তত্ত্ব সাধারণের কাছে
প্রকাশ করার অপরাধে 'আনাল হাক্ক'
আমিই পরম সত্য বলার অপরাধে
তোমার হাত তোমার পা তোমার জিভ
অবশেষে মাথাও যখন কাটে
তোমার মুখে সেই আমিই পরম সত্য
ছিল শেষ উচ্চারণ । তোমার হাত কাটলে
তুমি সেই রক্ত নিয়ে মুখে মাখলে
ওরা জানতে কেন ? তুমি বললে
মরার আগে মুখ যেন ফ্যাকাশে না দেখায়
মরার আগেও তুমি তোমার দর্শন থেকে
একচুলও সরে আসোনি । তুমি বলতে
তোমার পাগড়ির প্যাঁচে নাকি আল্লাহ
তুমি বলতে তোমার জোব্বার ভিতরে আল্লাহ
তুমি চেয়েছিলে স্রষ্টাকে অন্তরের অন্তঃস্থলে
খুঁজে পেতে , তুমি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বহু উর্ধ্বে
তোমার অন্তরে খোদাকে পাওয়ার আকুতি
তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হজ্বের বিরোধিতা
অথচ তুমি তিন তিনবার হজ্বপালন করেছো
তুমি বলতে ভালোবাসা মানে প্রিয়জনের পাশে থাকা
আর ইবাদত তো কেবল হুকুমের প্রতিফলন
এগারো বছর কারাভোগের পর এক ফতোয়ায়
তোমার মৃত্যুদণ্ড , তবুও তুমি তোমার সত্যে অনড়
তোমার লেখালেখিতেই তোমার দর্শন
তোমাকে টুকরো টুকরো করে কেটেও শান্তি পায়নি
তোমার ঘাতক ; ভস্মীভূত করে তোমার মাংসখণ্ড
সহস্র শতাব্দী পরেও তুমি বেঁচে আছ সুফিবাদে ।