প্রকৃতি এবং মানুষ একই বিধাতার সৃষ্টি l মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চলার মধ্যে পূর্ণতা পায় l মানুষের দু রকম চাওয়া আছে l দুটি চাওয়া পূরণ করার ক্ষেত্রেই প্রকৃতি তার একমাত্র অবলম্বন l একটি তার দৈনন্দিন বেঁচে থাকার জন্য l রসদ সংগ্রহের জন্য জীবনসংগ্রাম l তার বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হবার পরই মানুষ প্রকৃতিকে অন্য আর একভাবে পেতে চায় l সেই কামনা ভেতরে রেখে এক ভিন্ন দৃষ্টিতে প্রকৃতির দিকে তাকায় সে l প্রকৃতি এক অনন্য সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের আকর l সেই ঐশ্বর্য সে উজাড় করে রাখে l অঞ্জলি ভরে সেই দান ও উপহার মানুষ গ্রহণ করে l মানুষের কাছে প্রকৃতির এই উপহার অমৃতসম l তার জীবনের পবিত্রতম সঞ্চয় l


কবি স্বপন চক্রবর্ত্তী ''অমৃতদান' কবিতায় প্রকৃতির এই অপরূপ রূপের বর্ণনা করেছেন l কিভাবে মানুষ প্রকৃতির প্রতিটি বিচিত্র উপস্থাপনের কাছে তার পরম চাওয়া পেয়ে চলেছে, তার ঝুলি প্রকৃতির অমৃতসম ঐশ্বর্যে পূর্ণ হয়ে চলেছে এবং কিভাবে মুগ্ধকর এই গোপনতম ঐশ্বর্য্য আমৃত্যু তার দিন ও রাতের প্রতিটি প্রহরের মধ্যে জীবনের পরম শৌর্যকে খুঁজে নেবার বিষয়ে সহায়ক হয়েছে, কবিতাটিতে তার কাব্যময় বর্ণনা আছে l


প্রকৃতি তার কতো বিচিত্র শৌর্যময় রূপে উপস্থাপিত l ধবল মেঘ, শরতের আকাশ, শীতার্ত রাত, বসন্তের উতলা হাওয়া - সব রূপের কাছেই মানুষের কিছু চাওয়া থাকে, কিছু স্বপ্ন পূরণের বিষয় থাকে l একলা ঝর্ণার জলের স্রোত, মৌন পাহাড়, মৃতপ্রায় নদীর বালুচর, স্বরবৃত্ত ছন্দের হৃদয় - কোথাও সে তার চাওয়াকে ভাসিয়ে দেয়, তার বাসনাকে অক্ষর দিয়ে এঁকে চলে, অতল গভীরে একান্তে লুকিয়ে রাখে তার ছন্দময় হৃদয়ে রচিত কাব্যকথা l
প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের মধ্যে আছে যোগাযোগের সূত্র ও মিলনের সুর l আকাশ ও মেঘ পাশাপাশি আসে l তাদের মধ্যে গোপন কথার আদানপ্রদান হয় l শীতের রাত ও বসন্ত হাওয়ার মধ্যে মধুরতম সদ্ভাব বজায় থাকে l ঝর্ণা, নদী ও পাহাড়ের মধ্যে এক নিবিড় আত্মীয়তা লক্ষ্য করা যায় l এর গভীরতম অর্থের উপলব্ধি মানুষকে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে ভাববিহ্বল করে তোলে l


ঊষার পবিত্র প্রহরে প্রকৃতির সন্তান মানুষ আদুল গায়ে হেঁটে যায় ঝর্ণার কাছে, নদীর কাছে, পাহাড়ের কাছে l এক পরম কামনায় অঞ্জলি পেতে দেয় প্রকট শিশিরের কাছে, ক্লান্ত শিউলীর শুভ্রতার কাছে, চোখ রাখে শালিখের ঘুমভাঙা চোখে, অথবা, সদ্যফোঁটা কুঁড়ির পেলব মাধুর্য্যে !


প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের ডালি থেকে অঞ্জলি ভরে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ তুলে নেয় অমৃতসম দান ও উপহার l তার পরমতম চাওয়াগুলি পূরণ হয় l মানবজীবনের পবিত্রতম সঞ্চয়ে তার ঝুলি ভরে ওঠে l আমৃত্যু এই মুগ্ধকর গোপনতম ঐশ্বর্য্য দিন ও রাতের প্রতিটি প্রহরে অমৃতধারা বর্ষণ করে যায় l সেই অমৃত ধারাস্রোতে মানুষ জীবনের পরম শৌর্যের সন্ধান পায় l
অসাধারণ সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন !!!