'অবলম্বন' রচনায় অনতিক্রম্য নিয়তিকে কবিতায় বেঁধেছেন কবি সমীর প্রামাণিক l
সর্বদা সবকিছু নিয়ম মেনে হয় না l যার ভার নেবার কথা, সে আগে চলে যায় l অবলম্বন সঙ্গীহীন একা পড়ে থাকে l অসহায় l
জীবন গতিময় l কিন্তু এই গতি বহু ধারায় l জীবনের চলন অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চললেও কখনো আবার তার ব্যতিক্রম হয় l অনেক সহজ হিসাব এলোমেলো হয়ে যায় l দিবালোক অন্ধকারসম মনে হয় l
জীবনের শুরু থেকে মানুষ পরস্পর নির্ভরতায় বিশ্বাসী l প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই নির্ভরতাকে অবলম্বন করে মানুষ সংসার সমুদ্রে পাড়ি দেয় l হিসাবমতো উত্তরাধিকার আসে l উত্তর দায়িত্ব আসে l ছোট শিশু বড়ো হয়ে সংসারের হাল ধরে l কর্মচঞ্চল, সব আশঙ্কা বিনাশকারী পিতামাতা বার্ধক্যের কবলে সন্তানসন্ততিদের যত্ন পরিচর্যার ওপর নির্ভরশীল থাকেন l তখন সন্তানেরাই হয় অবলম্বন l দায়িত্ব, কর্তব্য স্থানান্তরিত হয় l যুগ যুগ ধরে এই ব্যবস্থায় মানবজাতি বেঁচে রয়েছে l এই ধরায় আসা আর যাওয়া - এক নিত্য দিনের খেলা l পরস্পর নির্ভরতায় সব দিক সামলে এভাবেই চলেছে মানুষ l
কিন্তু সময় সর্বদা সদয় নয়, সরলরৈখিক নয় l হিসাবের হয় ওলটপালট l যার নোঙ্গর ফেলার কথা, সে পাল গুটিয়ে জীবনের ইতি টানে l অমরত্ব নয় l মানুষের জন্য বরাদ্দ মেয়াদটুকু চাওয়া - সেটিও মঞ্জুর হয় না কিছু ক্ষেত্রে l অনেক স্বপ্ন ভেঙে যায় l প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকে l জীবননদী গতি পরিবর্তন করে l উল্টোপথে ছুটে l নির্ভরতার আবহ মুহূর্তে বায়ুবদল করে l এক সর্বনাশা ঝড় অত্যন্ত প্রিয়, একমাত্র অবলম্বনকে কেড়ে নেয় l জীবন সঙ্গীহীন হয়ে পড়ে l
সব মোহ, বিভ্রমকে অতিক্রম করে জীবন সম্মুখপানে এগিয়ে চলে l সেটা জীবনের ধর্ম l কিন্তু সাময়িকভাবে মনে হয় যেন গোটা আকাশটাই ভেঙে পড়েছে l
কবিতায় জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে ধরেছেন কবি l সব এলোমেলো করে দেয়া অঘটন - জীবনকে কিছুকালের জন্য গতিহীন, অর্থহীন করে তোলে l সেই উদভ্রান্ত বেদনার বোধকে শব্দে বাক্যে বেঁধেছেন কবি l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন !