বিগত ১৯/০৮/২০১৭ তারিখ আসরে নতুন যোগ দেয়া প্রতিশ্রুতিবান কবি মায়িশা তাসনিম ইসলাম-এর সেদিন পর্যন্ত আসরে প্রকাশিত ১৩ টি কবিতার ওপর স্বল্প আলোকপাত করেছিলাম l আজ তাঁর একটি কবিতার ওপর আলোচনার প্রয়াস করব l
মায়িশা তাসনিম ইসলাম এ পর্যন্ত আসরে যে কবিতাগুলি প্রকাশ করেছেন এবং করে চলেছেন, তার প্রায় সবগুলিতেই প্রেম-ভালবাসা বোধের অনুপম রূপ ফুটে উঠেছে l ভাষার মাধুর্য, শব্দ প্রয়োগের চাতুর্য, অনুভবের গভীরতা, প্রকাশের স্বচ্ছতা, সাবলীল গতিময়তা কবিতাগুলিকে পাঠকপ্রিয় করে তুলেছে l
বর্তমান কবিতায় দেখি প্রেম-অভিজ্ঞতার নাটকীয় এক মুহুর্তের অপরূপ কাব্যিক প্রকাশ l এক দুর্যোগ প্রাণের প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়েছিল বারো বছর আগে l আজ বারো বছর পর তার সঙ্গে আকস্মিক মিলনে মনের মধ্যে জেগে ওঠে বারো বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই দুর্যোগের স্মৃতি l প্রিয়জনের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে এই দীর্ঘকাল ধরে মনের মধ্যে অবদমিত ভালবাসা, কামনা লাভাস্রোতের মতো প্রকাশমান হয় l প্রবল সুখের এক যন্ত্রণাময় অনুভব গ্রাস করে সমস্ত সত্তাকে l  যেন শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যায় l
বিগত দীর্ঘ বারো বছর ধরে একাকী জীবনে কতো হাজার কোটি দীর্ঘশ্বাস পড়েছে l এখন এই বেদনাঘন সুখের মুহূর্তে খুশির শ্বাসগ্রহণে সেই অগণিত দীর্ঘশ্বাসেরা যেন বিদায় নেয় l কালো ধোঁয়া হয়ে তারা উড়ে যায় l সুখের স্পর্শে মন এখন অচেতন নয় l তাই চেতনার পথেই দীর্ঘশ্বাসেরা আকাশগামী হয় l
বিরহবেদনার অবসান l কিন্তু দীর্ঘ যে সময় হারিয়ে গেল চিরকালের জন্য, তার জন্য বেদনা থাকে, আক্ষেপ থাকে l স্নায়ুতন্ত্রে জমতে শুরু করে এই আক্ষেপের অনুভব l মনোমেঘ হারায় তার নরম শুভ্রতা, স্বচ্ছতা l
সময় তার ছাপ রেখে যায় শরীরে এবং মনে l দীর্ঘদিন পর এই মিলনে পরস্পরের চোখে সেই পরিবর্তন ধরা পড়ে l এই দীর্ঘ ব্যবধানে বয়স বেড়েছে, কিন্তু প্রিয়র চোখে এখনও চাঁদের মায়াবী জ্যোত্স্নার নেশা l অনেক সাধনার পর এই যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছে, তার প্রতিটি কণায় এখনও বয়ে যায় ঐ চাহনি-সৃষ্ট প্রাচীন প্রেমপ্রবাহ l
সুখের তীব্র অনুভব শরীর-মনকে বারবার ভেঙে চুরমার করে দেয় l যেমন একটি কথা আছে, "অল্প দুঃখে কাতর, অধিক দুঃখে পাথর l" এখানেও যেন অধিক সুখ অসহ্য মনে হয় l চরম এই সুখের মুহূর্তে মনে সাধ জাগে, জীবনটা এই মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাক l শেষ হয়ে যাক অদৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত প্রেম বিরহের এই খেলা l ভালবাসার সমস্ত অহংকার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাক l কিন্তু ভালবাসাকে হত্যা করা সহজ নয় l তার রক্ত থেকে ঘাতকের প্রতি বর্ষিত হয় উপহাস, ঘৃণা l ভালবাসাকে কোনোভাবেই মেরে ফেলা সম্ভব নয় l তাকে অস্বীকারও করা যায় না l তার কণ্ঠ রোধ করার প্রয়াস হলে সেটাও ব্যর্থ হয় l ফাঁস খুলে সে ঠিক তার প্রিয়জনের উদ্দেশে ভালবাসারূপ বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়ে l সেই ভালোবাসার বর্ষণে ভিজে যায় তার প্রেয়সী, তার শরীর থেকে নির্গত হয় সুখ-যন্ত্রণার অদ্ভুত সুগন্ধ।
বারো বছরের বিচ্ছেদের পর মিলন হয়েছে দুই প্রেমীর l অনুভবে অনুভবে বারো বছরের লক্ষ কোটি দীর্ঘশ্বাস l পরবর্তী জীবনে সর্বদা এই অনুভব তাদের সঙ্গে থাকবে l এই অনুভবে আছে অনেক যন্ত্রণা, বেদনার স্মৃতি l যা কাঁচের টুকরো হয়ে অতীতে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে বারংবার l কিন্তু ভবিষ্যতে তা সঙ্গে থাকলেও তার কষ্টবোধ থাকবে না l দীর্ঘশ্বাসেরা কাঁচের টুকরোর মতন ভেঙে ভেঙে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়বে, গড়াগড়ি খাবে। অথচ, কোনো যন্ত্রনার অনুভূতি আসবে না l


কবির দীর্ঘ সৃজনশীল ভবিষ্যৎ শুভকামনায়....