বাঙালি খাদ্যরসিক l বাঙালি অনুষ্ঠানপ্রিয় l এটা তার বৈশিষ্ট্য l এটা তার অভিমান l
কিন্তু খাবারের তালিকায় যদি অখাদ্য এসে পড়ে, অনুষ্ঠানের নামে যদি বাড়াবাড়ি, আদিখ্যেতা শুরু হয়ে যায়, সেখানে প্রশ্ন এসে যায় l
"একদিনের বাঙালি" রচনায় কবি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান এমনই কিছু সঙ্গত প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন l শাকপাতা, ভাত, ইলিশ মাছের ডিম খাবার জিনিস খায় ঠিক আছে l কিন্তু বাঙালি কখনো কখনো জাতিবিদ্বেষী হয়ে পড়ে এবং অন্য জাতির মানুষের জীবন নরক করে তোলে l এটা নিন্দনীয় l বাঙালির লোভ, লালসা মা, মাটি, দেশকে পর্যন্ত বিপন্ন করে তোলে l প্রতি মুহূর্তে তার নিজের স্বার্থ দেখতে দেখতে বৃহত্তর স্বার্থের কথা, দেশ, জাতির কথা সে ভুলে যায় l এক আগ্রাসী ক্ষুধা যেন দেশমাতৃকাকেই খেয়ে ফেলে l
সেই বাঙালি, সারা বছর ধরে যারা দেশকে শোষণ করেছে, অপশাসন করেছে, লুণ্ঠন করেছে একে অপরকে - সেই তারাই উত্সবের নামে, নববর্ষের দিনে এক একজন সংস্কৃতিপ্রেমীর বেশে মঞ্চ আলোকিত করে বসেন l মানুষ উত্সবের আবেশে ভেসে যায় l সারাটা বছর ধরে যারা দেশকে শুধু শোষণ করে গেছে, বৈশাখ এলেই বাঙালি সেজে তারা বৈশাখী উত্সবে মেতে ওঠে l সুকর্মে তাদের মতি নাই, নিজেদের অপকর্মের জন্য লজ্জাবোধ নাই, মানসম্মান বোধ নাই, এই নীচতার পরিণতি কি হতে পারে সে ব্যাপারে কোনো ভাবনা নাই, মনের মধ্যে নিঃস্বার্থ ভালবাসা নাই, সর্বদা শুধু নিজের স্বার্থচিন্তা, যা পায় তাই টপাটপ গিলে খায়, বাইরের চেহারায় একটা ভালোমানুষির ভাব ধরে রাখার চেষ্টা শুধু l
নববর্ষের প্রারম্ভে কবি তাদের আহ্বান করেছেন, ভালোমানুষের মুখোশটা খুলে ফেলে ভেতর থেকে প্রকৃতই ভালোমানুষ হয়ে উঠতে এবং নিজের দেশ, নিজের মাকে ভালবাসতে l
সুন্দর মানবিকতাবোধের কবিতার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন !!