বর্নবিদ্বেষবাদ মানবজাতির একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি । অন্য সকল গুণ থাকা সত্বেও শুধু গায়ের রঙের ভিত্তিতে মানুষের মূল্যায়ন করা অর্থহীন । অথচ এভাবেই যুগে যুগে দেশে দেশে এই অবমূল্যায়ন হয়ে এসেছে । কোথাও কম কোথাও বেশি । একশ্রেনীর মানুষের ওপর নেমে এসেছে অকথ্য অত্যাচার - ক্রীতদাস প্রথা বা অন্য কিছু নামে । আন্দোলন হয়েছে । এই মানসিকতার কিছুটা বদল হয়েছে । কিছু ঘৃন্য প্রথা বন্ধ হয়েছে । কিন্তু কালো রঙ এর প্রতি মানুষের সাধারণ বিরুপতা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে এমন বলার সময় এখনও আসে নি । রাষ্ট্রীয়, সামাজিক স্তর বাদেও একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে এই বর্নপ্রীতি বা বর্নবিদ্বেষ এখনও বর্তমান । সেটাই এই কবিতার প্রতিপাদ্য বিষয় ।


কবি কনিকা সরকার "আমি যে কালো" শীর্ষক রচনায় এমনই এক ব্যক্তি নারীর জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মেলে ধরেছেন । একটি মেয়েকে  তার গায়ের রঙ কালো থাকার কারণে সারাজীবন  ধরে গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে । কালো থাকার কারণে তার মনের মধ্যে ইচ্ছে, কামনা কিছু কম জাগে নি । অন্য সকল মেয়ের মতো স্বাভাবিকভাবেই সে দেহে মনে বড়ো হয়েছে । মনের মধ্যে অনেক আশার আলো ফুটে উঠেছে । কিন্তু সেই আশা পূরণের পথে সে পেয়েছে পদে পদে অন্তরায় । সমস্ত অন্তরায়গুলিই তার গায়ের রঙ কালো হবার কারণে । বিষয়টি অনুধাবন করে তার দুঃখ হয়েছে, মনে কষ্ট হয়েছে, অভিমান হয়েছে সৃষ্টিকর্তার ওপর । মনে অনেক যুক্তিগ্রাহ্য প্রশ্ন জেগেছে তার । সৃষ্টিকর্তা অন্য সকলের মতো ভালোবেসেই নিশ্চয় তার মতো কালো মেয়েদের  সৃষ্টি করেছেন । তাহলে জগত জুড়ে তার মতো কালো মেয়েদের এতো অনাদর, অবহেলা কেন ?
রাত্রিও তো কালো । কিন্তু সেই রাত্রেই তো অপরূপ চাঁদের উদয় হয় । সেই চাঁদের আলোয় গোটা পৃথিবী উজ্জ্বল সুন্দর হয়ে ওঠে । কোকিল কালো । কিন্তু তার মিষ্টি স্বর জগতের হৃদয় হরণ করে । প্রকৃতি নিজে তার সৃষ্টির মধ্যে বৈষম্য করে নি । যতো বৈষম্য এই মানুষের জগতে । মানুষ কালো রঙ হলেই তার অন্য সকল গুণকে অনাদর করতে শুরু করে । কালোর মধ্যে যে আলো রয়েছে তা উপেক্ষা করে যায় । কালো বলে তাকে গঞ্জনা দেয় ।


কবিকে জানাই অভিনন্দন ! !