শুভ জন্মদিন কবি !
যে কোনো জাতির জীবনে কতকগুলি দিন থাকে যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ l বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ৭-ই মার্চ, ২৬ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর এমনই গুরুত্বপূর্ণ দিন l দিন তিনটি পরস্পর সম্পর্কিত l বাংলাদেশের একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে ওঠার পথে দিন তিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে l কবি রায়হান আজিজ "আমরা কিছুই ভুলি নাই" কবিতায় এই পবিত্র জাতীয় দিনগুলির একটিকে, ১৬ই ডিসেম্বর, যা বিজয় দিবস নামে পরিচিত, স্মরণ করেছেন এবং দিনটির  সঙ্গে সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, মহান আদর্শের যে ইতিহাস যুক্ত আছে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন এবং চিরকাল দিনটির মর্যাদা রক্ষার শপথ গ্রহণ করেছেন l
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ২১ শে ফেব্রুয়ারির বলিদানের রেশ ধরে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ দানা বাঁধে l ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখো জনতার উপুস্হিতিতে ঢাকার রোসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য এক দিক নির্দেশনা দিলেন। মুলত বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান ছিল। পরবর্তী দু-একদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তাদের ধারনা ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলেই বুঝি স্বাধীনতা আন্দোলন থেমে যাবে l কিন্তু উল্টোটাই হলো l বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারের খবর শুনে মানুষ আরো শক্তভাবে একত্রিত হলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকলেন l মুক্তিবাহিনীতে হাজার হাজার যুবক-তরুন সহ সব বয়স লোকজন যোগ দেয় l ট্রেনিং নেয় এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে l
দেশের বিভিন্ন অন্ঞ্চলে হানাদারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধ চলতে থাকে। এমতাবস্হায় চট্রগ্রামের ক্যন্টনমেন্টের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, কর্ণেল আলী আহমেদ সহ বেশ কিছু আর্মি অফিসার বিদ্রোহ করে চট্রগ্রামের বেতারকেন্দ্র দখলে নিয়ে ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে মহান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। স্বাধীনতার ঘোষণার পর পরই মুক্তিযোদ্ধারা তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে একটির পর একটি স্হান মুক্ত করেন।
এভাবেই দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জেনারেল নিয়াজী আত্নসমর্থন করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন l এভাবেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়।
কবি ১৬ই ডিসেম্বরের এই দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন l জাতির র্দুদিনে যেসকল মুক্তিসেনারা দেশকে হানাদারমুক্ত করতে জীবন দিয়েছেন এবং যে সকল মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন l
বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীন মানুষ ঊনিশ শ একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর দিনটির নিগূঢ় মর্মকথা স্মরণে রেখেছেন l এদেশের বীরাঙ্গনা মা বোনেরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা ভুলে যান নি l তাঁদের সন্তান ও ভাইয়েরা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে রক্ত ঝরিয়েছেন সেই রক্তেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রঞ্জিত l অকপটে সবাই তা স্বীকার করে। বিজয় প্রাপ্তির এই আনন্দে বীর শহীদদের কষ্ট ভোলা যায় না l অনেক কষ্ট, অনেক বলিদান, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে এই বিজয়, এই স্বাধীনতা l লাল সবুজের পতাকা এই ত্যাগ ও কষ্টের কথাই ঘোষণা করে l "জয় বাংলা" ধ্বনি মেঠোপথ থেকে রাজপথ এই অর্থেই কেঁপে ওঠে l মহান ত্যাগের এই ঋণ প্রতিটি প্রানে মিশে গেছে তুমুল প্রতিবাদের মুক্তির চেতনা হয়ে। মায়ের বুকের ফুটফুটে মানিক, আদরে রাখা জঠরের শিশুকে বুলেটের আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল l সেকথা ভাবলে শরীরে শিহরণ জাগে l তাজা রক্তের ঘর্ষণে আগুন লেগেছিল সারা দেশ জুড়ে l যুদ্ধের দামামা ছড়িয়ে পড়েছিল মেঠোপথ হয়ে রাজপথে l ছোট ছোট ছেলেদেরও হাতে স্টেনগান ধরতে হয়েছিল l সেই সাহসের পরিণতিতেই এই বিজয়। অনেক আগের ঘটনা l কিন্তু কালের অতলে তলিয়ে যায় নি কিছুই। ইতিহাস হয়ে আছে l সেই দুঃসহ দিনগুলি এখন  মুক্তির উল্লাসে হাসে । সম্মিলিত হাসিতে মুখর হয় সারা বাংলা। প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রাণের উচ্ছ্বাসে আনন্দের মেলা বয় l অবুঝ শিশুদের গালে  সেই তৃপ্তি শোভা পায় l নীল আকাশের বলাকা যেন মেলে ধরে সেই বিজয়ের আভা। স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে রাত শেষে ভোর নেমে আসে, আবার সন্ধে বেলায় সূর্য অস্ত যায় l তাজা রক্তের অগনিত ফোঁটা, যা সবুজের বুকে যত্ন করে সুরক্ষিত l লক্ষ শহীদের মর্মস্পর্শী দীর্ঘশ্বাস এখনো প্রতিটি দেশবাসীর হৃদয়ে স্পন্দিত হয় l তারা কিছুই ভোলে নি। সেই বীরত্বের ঐতিহ্যে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নৌবহর, সেনা ঘাঁটি l আকাশের বুকে গড়ে তোলা হয়েছে কঠিন প্রতিরোধ। আর প্রতিটি মায়ের বুক থেকে শেষ সীমানা পর্যন্ত দেশপ্রেমিক সন্তানেরা চিরজাগরুক রয়েছে l অন্যায়ের পাহাড়কে তুলার মত উড়িয়ে দিতে শিখেছে তারা l দেশজননী শান্তিতে ঘুমাতে পারে l
তার নিরাপত্তার দায়িত্ব সন্তানদের l বীরত্বের চেতনায় পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের এক বিশেষ স্থান রয়েছে l পুরুষ ও নারীজাতি উভয়েই এই মর্যাদার শরিক l বাংলাদেশের প্রতিটি পুরুষ বীরপ্রসবা নারীদের কাছে এজন্য প্রতি মুহূর্তে ঋণী ও কৃতজ্ঞ l চিরদিন থাকবে l


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l