শুভ জন্মদিন কবি !
এই পৃথিবীতে প্রায় সব কিছুই অনিশ্চিত l যা নিশ্চিত তা হলো সময়ের গতি এবং মৃত্যু l যার  জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য l চিকিত্সাবিদ্যার কল্যাণে নানা জটিল রোগ ব্যাধি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মৃত্যু বিলম্বিত হতে পারে, কিন্তু মৃত্যুকে এড়িয়ে যাবার কোনো বিদ্যা মানুষ এখনও আয়ত্ত করতে পারে নি l  
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ তার আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে স্নেহ প্রেম শ্রদ্ধার সম্পর্কে জুড়ে থাকেন l যখন মৃত্যু এসে আঘাত করে, তখন সেই শূন্যতা মেনে নিতে কষ্ট হয় l শোকে ভেঙে পড়েন আত্মীয় পরিজন l বিশেষ করে যাঁর সঙ্গে জীবন জুড়ে গেছিল প্রেমের সম্পর্কে, বিবাহ বন্ধনডোরে, সেই প্রিয়জনের ব্যথা বেদনার কোনো অন্ত থাকে না l পরিবারের এক সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে এমনই এক কাল্পনিক হৃদয়বিদারী চিত্র 'বিদায়বেলা' কবিতায় এঁকেছেন কবি সনেট সেন্টু l
মানুষ যতদিন জীবিত থাকেন, তাঁর একটি নাম থাকে, একটি পরিচয় থাকে l কিন্তু যখনই কেউ মারা যাচ্ছেন, পৃথিবীর সব মানুষের তখন একটিই পরিচয় - লাশ l লাশকে কফিনে পোরা হয় l তারপর নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস মতো তার সত্কার করা হয় l কবিতায় বর্ণিত মৃত্যুটির ক্ষেত্রে কফিনটিকে কবরস্থ করা হয়েছে l সেই কবরই তার  শেষ গন্তব্য l সেখান থেকে বেরিয়ে যাবার কোন রাস্তা নেই। একবার যে মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেখান থেকে আর তাঁর জীবিত মানুষের ভিড়ে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই l
প্রতিটি মৃত্যু আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধবের কাছে হৃদয়বিদারক l বিশেষ করে যিনি ছিলেন জীবনসাথী, তাঁর পক্ষে এই মৃত্যু মেনে নেয়া খুবই কঠিন হয় l নিকটজনকে হারানোর শোকে দুঃখে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে যান l কান্নায় ভেঙে পড়েন l কবি কল্পনা করছেন শোকার্ত প্রিয়ার কান্নার সেই আওয়াজ যিনি মারা গেছেন তিনি কবর থেকে শুনতে পাচ্ছেন, হয়তো দেখতেও পাচ্ছেন l কিন্তু ব্যস, এপর্যন্তই l কবর থেকে তাঁর পক্ষে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় l
যিনি মারা গেলেন, হয়তো আকস্মিকভাবে, কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই - তাঁকে, তাঁর সব ভুল ভ্রান্তিকে ক্ষমা করে দেবার চল আছে l কোনো অভিশাপ নয়, দুহাত তুলে সেই মৃতজনের জন্য দোয়া করা হয় l চিৎকার করে পরলোকে তাঁর সুখ, শান্তি কামনা করা হয় l হাত নেড়ে তাঁকে বিদায় দেয়া হয় l ভালবাসার আশিষচুম্বন দেয়া হয় কপালে l কবি সেই মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ সবকিছুই প্রার্থনা করছেন l
কফিনটিকে যখন কবরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হবে, দূর থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকবেন বিশেষ প্রিয়জন l দাফন দেখবেন l শোকে কাতর হয়ে তিনি বারবার ছুটে আসবেন, পিছন থেকে অন্য পরিজনেরা তাঁকে টেনে নিয়ে যাবেন। সবাইকে ছিটকে ফেলে আবার তিনি কফিনে মাথা রাখবেন। তাঁর প্রিয়জনকে আটকানোর চেষ্টা করবেন। কিন্ত সে প্রয়াস ব্যর্থ হবে l কারণ যিনি মারা গেছেন, ইহজগতের মানুষের ভিড়ে তাঁর আর ফিরে আসার কোনো রাস্তা নেই l
কিছুদিন সদ্যপ্রয়াত স্বামীর কথা  ভেবে ভেবে বিরহী স্ত্রী'র সকাল, বিকেল, রাত গড়িয়ে যাবে। তাঁর জন্য সারা পৃথিবী যেন থেমে গেছে। হাজার হাজার ফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়বে তাঁর চোখ থেকে l যন্ত্রণায় ছটপট করবেন বিছানায়। প্রয়াত স্বামীর কথা ভেবে ভেবে শারীরিক মানসিক যন্ত্রণায় উন্মাদের মতো হয়ে যাবেন l অন্ধকার কবরে শুয়ে থেকে তাঁর স্বামী সব দেখতে পাবেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আকস্মিকভাবে সঙ্গ ছেড়ে যাবার জন্য হয়তো তিনি অনুভব করবেন যে তাঁর প্রিয়া তাঁর প্রতি চরম ঘৃণা বর্ষণ করছেন l কিন্তু তাঁর কিছু করার নেই l কবর থেকে তাঁর ফিরে আসার কোনো রাস্তা নেই l


কবিকে জানাই শুভকামনা l