ধর্মভাবনার উপর কবিতা l তরুণ কবির নবীন চোখে ধর্মের তাত্বিক ও ফলিত রূপের মধ্যে যে বৈষম্য বর্তমান তা বিসদৃশ ঠেকে l ধর্ম অর্থাৎ ধারণ করা l প্রকৃতির মধ্যে প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি জীব তার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী জীবনভর ধারণ করে রাখে l জল নিম্নগামী, কুকুর প্রভুভক্ত, পুষ্প সৌরভদায়ী, বাতাস প্রবহমান, বাঘ-সিংহ মাংশাসী, গবাদি পশু নিরামিষাশী - প্রতিটি জীব, প্রাণী, বস্তু প্রতি মুহূর্তে তার ধর্ম মেনে চলে l ধর্মের অনুশাসন না মেনে চলার যত দৃষ্টান্ত সব ঘটে মানুষের বেলায় l
জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ l জ্ঞান, বুদ্ধি, সৃজনশীলতায় অনন্য l অন্য সব জীব ও প্রাণী প্রকৃতিকে যেভাবে পেয়েছে, যুগ যুগ ধরে সেভাবেই তাকে ব্যবহার করে চলেছে l তাদের ধর্ম কোনো পুঁথিতে তারা পড়ে না l তবু সেটা ব্যতিক্রমহীনভাবে তারা মেনে চলে l
মানুষ তার আবির্ভাবলগ্ন থেকে প্রকৃতির ওপর খবরদারি করে এসেছে l প্রতিনিয়ত নিজ প্রয়োজনে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন করেছে l সর্বব্যাপী ধর্মবোধকে পুস্তকবন্দী করেছে l দেশে দেশে যুগে যুগে মানবগোষ্ঠী নানা ধর্মবিশ্বাসের সৃষ্টি করেছে l সেই ধর্ম পালনের কতো নিয়ম, কতো অনুশাসন l আছে কিছু মূল নীতি l সকল ধর্মেরই মূল কথা মানবপ্রেম, শান্তি l কিন্তু ধর্মের এই তাত্বিক বাণী মানুষের ফলিত জীবনে সুর হারিয়ে ফেলছে l
বর্তমান দিনে দেশে দেশে ধর্মবিশ্বাস পালনের, ধর্মের নামে নানা অনাচারের ঘটনা "ধর্মরাজ" কবিতার কবি আতাম মিঞাকে ব্যথা দেয় l মনে নানা প্রশ্ন জাগে l কবির মনে হয় ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান মানুষ বিস্মৃত হয়েছে l জ্ঞান আলোর রূপক l এই জ্ঞানের অভাবে মাথায় বুদ্ধি-বিবেচনার দীপ নিভে গেছে l গুবরেপোকা-রূপ দুর্বুদ্ধির পাহাড় মানুষকে ধর্ম আচরণের মূল পথ থেকে বিচ্যুত করছে l
কবি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন পৃথিবীর কোনো ধর্মবিশ্বাসেই বিভেদের অনুমোদন নেই l
বিশ্ব-ব্রম্ভাণ্ডে যতো প্রাণী আছে সকলের প্রতি বিশ্বাস, প্রেম ও ভ্রাতৃত্বভাবের অনুমোদন আছে প্রতিটি ধর্মবিশ্বাসে l কোনো ধর্মেই অস্ত্র প্রয়োগ করে বা কোনভাবে হিংসাকে সমর্থন করা হয় নি l অস্ত্র হাতে তুলে দেয় নি অপর একটি মানবকে হত্যা করার জন্য l কোনো দেবতা তার চরণে মানবপ্রাণের বলি কোনোদিন চায় নি l প্রকৃতির নিজের রচনা ফল-মুল,গাছ-গাছালির
মধ্যে কোনো বিভেদ নেই l রক্তের রঙ সর্বত্রই এক l আব্রাহাম, ইব্রাহিম - উভয়ের রক্তই লোহিতবর্ণ । ঈশ্বর যেখানে মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ রাখেন নি, তখন ধর্মের ফলিত প্রয়োগে মানুষ যে নিজেদের মধ্যে এই যোজন সমান ব্যবধান রচনা করে নিয়েছে - মানবকৃত এই বিষয়টি কবিকে বিষন্ন করেছে, প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছে l


যা আমাদের তৃষ্ণা মেটায় তাকে আমরা কতো নামেই তো চিনি l জল, পানি, ওয়াটার - এগুলি কি সত্যিই পৃথক জিনিস ? ঈশ্বরও তাই l যে নামেই ডাকি - তিনি তো সেই একজন l যেমনটা জল l
সেই এক জগৎপিতার সন্তান সব মানবসন্তান, সহোদর l তবু মিথ্যা এক ধর্মবিশ্বাসের ভ্রমে বন্দুক, ত্রিশূল, তরবারি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে হানাহানি চলছে l রক্ত ঝরছে l প্রাণহানি হচ্ছে l ভাই ভাইকে হত্যা করছে l
কোরআন বাইবেল মানবপ্রেমের কথা বলে l ঈশ্বর মানুষকে ভালোবাসার কথা বলেন l সকলকে আলিঙ্গন করেন l
কিন্তু ধর্মান্ধ মানুষ ধর্মের এই মূল কথা বিস্মৃত হয়ে
বিভেদ-প্রত্যাখ্যানের নীতি নিয়ে চলে l
মানবপ্রেমের সুন্দর একটি কবিতা উপহার দেবার জন্য কবি আতাম মিঞাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন l