ভালোবাসা হলো আপনত্বের অনুভব l সেই একান্ত আপন যখন ব্যথা দেয়, তাও অমৃতসম মনে হয় ভালবাসার গভীরতায় l ছোটখাটো মান অভিমানের পর্ব প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ককে নিবিড়তর করে l নিরন্তর পরস্পরের ভাবনা জীবনকে করে তোলে মধুময়, অর্থবহ l ভালোবাসার কারণেই অধিকারবোধ জন্মায় l অধিকারবোধ থেকে পরস্পরের জীবনাচরণে দখলদারির প্রয়াস হয় l ছোটখাটো কিছু মৃদু ভুল বোঝাবুঝি, তৎকেন্দ্রীক মন কষাকষি, মান অভিমানের পালা, তারপর সেই অভিমান ভাঙ্গানো, তিক্ত মধুর এই যাপনে সংসার চলে তার নিজের পানে l


"কেউ তোমাকে...." কবিতায় কবি হায়দার আলী লিটন প্রেমজীবনের এরকম বিচিত্র কিছু অনুভবের কথা মেলে ধরেছেন l প্রেমের পরশ প্রেমিকের সহনশক্তি অনেক বাড়িয়ে দেয় l প্রিয়ার কাছ থেকে যখন তিনি পান ব্যঞ্জনা-গঞ্জনা,অপমান -অপবাদ, আঘাত -প্রতিঘাত - এগুলি তিনি অবলীলায় সহ্য করেন l তাঁর প্রতি প্রিয়ার ভালোবাসার গভীরতা এখানে স্পষ্ট হয় l মানুষ যাকে ভালোবাসে, তার ওপরেই অভিমান হয় l তাকেই অভিমানের বশে দুটি কথা শোনায়, গঞ্জনা দেয়, হাল্কা অপমানজনক অপবাদমূলক অভিযোগের আঘাত করে l প্রত্যাঘাত হয় l কিন্তু এ সব কিছুর মধ্যে দিয়ে ভালবাসার সম্পর্ক নিবিড় হয় l পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের বাঁধন দৃঢ় হয় l
ভালোবাসার এই শক্তিতে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত. বিপদ বিপর্যয় এর সঙ্গে সংগ্রাম করেন l দুর্দিনে ধৈর্য্য রাখেন দিনের পর দিন সুদিনের আশায় l জীবনের দাবদাহে যখন তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, জীবনযন্ত্রণা ব্যথা দেয়, তখন দুঃখহরণ মন্ত্রশক্তি আয়ত্ত করেন তিনি l পাহাড়সম ব্যথা যন্ত্রণা বুকে নিয়েও সুখের অনুভব পান l সুখের জগত নির্মাণ করেন এবং মুক্ত বিহঙ্গের মতো পাখা মেলে ওড়েন সেই সুখের আকাশে l এও সম্ভব শুধু ভালোবাসার শক্তির প্রেরণায় l
একজন প্রকৃত প্রেমিকের সহ্যশক্তি অসাধারণ l সব সহ্য করতে পারেন তিনি l অভিমান, রাগ -অনুরাগ
হেলা-অবহেলা সব l যখন ভালোবাসার আবেশে, বৃষ্টির দিনে প্রিয়ার স্পর্শ কামনায় বৃষ্টির জলের ঝাপটা দিয়ে তাকে মোহিত করার প্রয়াস করেন, তখন প্রিয়া সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে দূরে সরে গেলে. ভালোবাসার আবেদনের সেই প্রত্যাখ্যানের যে অপমান, ব্যথা, সেটাও তিনি সহ্য করেন l এই পর্বে হয়তো প্রিয়ার কাছ থেকে কিছু গালিও শুনতে হয় l তাও সহ্য করেন তিনি l শুধু সহ্য নয়, তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন প্রেম সম্পর্কের এই জটিল রসায়ন l সুখের এই অনুভব অবিমিশ্র নয় l কখনও হৃদয় বিদারী আঘাতও আসে l তবু যন্ত্রণার সরব প্রকাশ করেন না তিনি l নিজের মধ্যেই সেই ব্যথা যন্ত্রণা গোপন করেন l


না, প্রেমিকের এই সহ্যশক্তি অসীম নয় l তিনি অনেক কিছু সইতে পারেন l কিন্তু সব সইতে পারেন না l সইতে পারেন না যখন বিশ্বাসের ওপর আঘাত আসে, তার ভিত যায় নড়ে l সইতে পারেন না যখন তাঁর প্রিয়া তাঁকে ত্যাগ করে অপর কাউকে অবলম্বন করে l অপর কারো হাত ধরে জীবনের পথে পাড়ি দেয় l এই প্রত্যাখ্যান, এই অপমান তিনি সইতে পারেন না l তিনি এটা মেনে নিতে পারেন না অপর কেউ তাঁর প্রিয়াকে তাঁর থেকে বেশী ভালবাসতে পারে l তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর প্রিয়া যখন অন্য কারো কাছে বেশী ভালোবাসা প্রত্যাশা করে, তখন সেটা সহ্য করার মতো শক্তি, ধৈর্য্য তিনি দেখাতে পারেন না l তিনি বিষাক্ত সাপের কামড়ও সহ্য করতে পারেন l সেই বিষের প্রভাবে তাঁর দেহ নীল হয়ে যায় না, জীবন সংশয় হয় না l কিন্তু তাঁর প্রিয়াকে অন্য কেউ ভালোবাসছে, আদর করছে, তাঁর প্রিয়া তা অনুমোদন করছে, এই বিষয়টি সহ্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় l তাঁর কাছে এটা মৃত্যু যন্ত্রণার সমান l বিশ্বাসভঙ্গের এই আঘাত তাঁকে মৃত্যর মুখে নিয়ে যায় l
গভীর ভালোবাসার বোধের আবেগঘন সুন্দর কবিতাটির জন্য কবি হায়দার আলী লিটন মহাশয়কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন l


**
কবিতাটির কিছুু বানান সংশোধন প্রয়োজন -
আপবাদ - অপবাদ
যপতে - জপতে
ঝপটা - ঝাপটা
গালিগাজে - গালিগালাজে
তারিয়ে  - তাড়িয়ে