আসরে ৫০০ তম কবিতার জন্য কবিকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন !  
মানুষের সমাজে সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে ভাবনার আধিক্য l যে কোনো বিষয় নিয়ে একটা তত্ত্ব সৃষ্টি করা মানব বৈশিষ্ট্য l মানুষ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন l আবার মানুষই সেই তত্ত্বের বিপরীতে আর একটি তত্ত্ব সৃষ্টি করেন l উভয় তত্ত্বেরই প্রচুর প্রচুর অনুসরণকারী ভক্ত জুটে যায় l এরকম এক দুটি নয়, যুগে যুগে শয়ে শয়ে দর্শন, বিচারবোধ, বিপরীত দর্শন, বিপরীত বিচারবোধ গড়ছে আর ভাঙছে - এই নিয়ে মানবসমাজ, মানবসভ্যতা এগুচ্ছে, পিছাচ্ছে, আবার এগুচ্ছে - এভাবেই চলছে l
এই চলার যে ধারা - সেখানে কে যে ঠিক, কে ভুল, কে বুদ্ধিমান, আর কে যে বোকা - ইতিহাস দীর্ঘ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তার কিছুটা মাত্র প্রকাশ করে, সবটা নয় l আর অনেকটাই থাকে ব্যক্তি মানুষের অনুভবে l যিনি যেরকমটা মনে করেন, বিষয়টি তাঁর কাছে সেভাবেই প্রতিভাত হয় l অনেকটা ব্যক্তিগত পছন্দের মতো l মানুষ আসেন, যান l নিজ নিজ মতো করে জগৎ সংসার সম্বন্ধে, মানবজীবনের কর্তব্য সম্বন্ধে অনুভব বলে যান l সেই কথাগুলি ভিত্তিমূল্যে নয়, পরবর্তী প্রজন্ম নিজ নিজ পছন্দ, প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতা বিচার করে গ্রহণ করেন বা বর্জন করেন l খুব যে মানুষ অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হন এমন নয় l তাঁর নিজের অবস্থানটাই সবক্ষেত্রে চূড়ান্ত হয় l যিনি যা করলেন, করে গেলেন তাঁর নিজের মতো l তাঁর অনুসরণকারী বা বিরুদ্ধ আচরণকারীরাও নিজ পছন্দকেই গুরুত্ব দেন সর্বাগ্রে l
এর মধ্যে কিছু মানুষ এমনও থাকেন, যাঁরা সর্বদা ন্যায়ের পথে, সাম্যের পথে চলেন l তাঁরা আশা করেন বাকি সকলেও সেভাবে চলবেন l তাঁদের এই সরলতা অনেক ক্ষেত্রেই শেষে বোকামি বলে প্রমাণিত হয় l
"কিছু বেওকুফ তবু" কবিতায় কবি শ্রীতরুণ এরকম কিছু সরলবিশ্বাসী মানুষের কথা তুলে ধরেছেন যাঁরা মনে করেন যে শুধু ভালবাসার বাঁধনে সকলকে ধরে রাখা সম্ভব l কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন, ভালবাসা যাঁদের কাছে সবকিছু নয় l তাঁরা ব্যবহারিক প্রয়োজনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন l ঠুনকো ভালবাসার চেয়ে নিত্যদিনের জীবনধারণের জন্য যা প্রয়োজন, সেটা তাঁদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ l পার্থিব জিনিসের আকর্ষণে তাঁরা অপার্থিব ভালবাসাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন l
অনেক মানুষ আছেন ধর্মান্ধ l মানবিক বিষয়গুলি তাঁদেরকে নাড়া দেয় না l ধর্মবিশ্বাসটাই তাঁদের কাছে মুখ্য l অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের কারণে তাঁরা যুক্তি, তর্ক, দয়া, মমতা, ভ্রাতৃত্ববোধ সব বিস্মৃত হন l
কতো বিচিত্র রকমের মানুষের দেখা মেলে এই সমাজে l কিছু মানুষ আছেন যাঁরা ভুল করলে সেই ভুল স্বীকার করেন l আচরণে বিনম্র ভাব এনে লজ্জিত হন l ক্ষমা প্রার্থনা করেন l কিন্তু সবাই এরকম হন না l ভুল স্বীকার তো দূরের কথা, উল্টো তাঁরা চোখ গরম করেন l রাগান্বিত হন এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন l
কিছু মানুষ আছেন, অতি সাবধানী l যুক্তিহীনভাবে ভীত হন l সাধারণ বোধও কাজ করে না তাদের l যেখানে ভয়ের কোনো কারণ নেই, সেখানেও ভয় পান l হাস্যকর ভাবে অতি সাবধানতা দেখান l এক তালা ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না, সেটা বারবার পরীক্ষা করেন l আবার এমন মানুষও বিরল নন, যাঁরা শ্রদ্ধাকেও বিক্রি করেন l অনুগত ভক্ত মানুষের কাছ থেকে অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করেন l


কতো মহাপুরুষরা সব বলে গেলেন, সব মানুষ সমান, সকলের রক্তের রঙ লাল l কিন্তু মানুষের হাজার হাজার কর্মে, তার আচরণে বারংবার প্রমাণিত হয়েছে যে সব মানুষ এক নয় l এক হতে পারে না l রক্তে লাল রঙটুকু বাদ দিলে আরো বহু কিছু বিষয় থাকে l রক্তের ডিএনএ, জিন সবকিছু আলাদা রকম l তাই সব মানুষ সমান এই যে কথাটি বারংবার বলা হচ্ছে, তা সঠিক প্রমাণ হয় নি l এই কথার ফাঁক গলে যে যেমন পেরেছে, দুনিয়া থেকে সুবিধা নিয়ে গেছে l নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে l সব শাঁসটুকু নিজেরা ভোগ করে অন্যের জন্য রেখেছে ভালো কথার গুঠি l নিজেরা নিরাপদে থাকতে চেয়ে অপরকে করেছে আহত l


এর পরেও কিছু মানুষ রয়ে গেছেন, ভালোর ওপর যাঁদের বিশ্বাস এখোনো অটুট রয়ে গেছে l তাঁরা এখনো মানুষকে ভালোবেসে যান l অন্যের ভালবাসায় আস্থা রাখেন l যুগে যুগে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন l মানুষকে ভালোবেসে মৃত্যুকে পর্যন্ত বরণ করে নেন l তবু ভালবাসায় অন্ধ মানুষকে দৃষ্টিদান করতে তাঁদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই l অন্ধদের মেলায় তাঁরা ভালবাসার আয়না ফেরি করে বেড়ান চিরকাল l


সুন্দর কবিতাটির জন্য কবিকে জানাই প্রাণভরা ভালবাসা ও অভিনন্দন l