সময় যতো এগোয় ততোই অতীতকে আকর্ষনীয় মনে হয় । আমরা বর্তমানে বাঁচি এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও সত্য যে আমরা অতীতকে নিয়ে বাঁচি । আর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলা যায় যে আমরা ভবিষ্যৎ এর জন্য বাঁচি ।
ইংরাজিতে একটি অতিশ্রুত কথা আছে "Old is gold." ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে কথাটির প্রাসঙ্গিকতা বোঝা যায় যখন জীবনের পথে অনেকটা পথ অগ্রসর হয়ে মানুষ অতীতকে স্মরণ করে । অতীত শতগুণ বেশি আকর্ষনীয় বলে মনে হয় । অতীত যেন তাকে তাড়া করে বেড়ায় ।
জীবনের প্রতিটি পর্বের আলাদা আলাদা আকর্ষণের বিন্দু আছে । সমকালে বিরাজমান থেকে সেগুলি উপভোগ করা যায় । কিন্তু সেই আকর্ষণ, সেই ভালো লাগার বিষয়টা যেন অনেকগুণ বেড়ে যায় যখন সেটা অতীত হয়ে যায়, ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় । ব্যক্তির জীবনে শিশুকাল, কৈশোরকাল, যৌবন - প্রতিটি পর্বের আলাদা মহত্ব আছে । জীবনকে উপভোগ করার যে বৈচিত্র্য কৈশোরকালে উপলব্ধ, বৈষয়িক প্রাচুর্যের অভাব যেভাবে প্রাকৃতিক প্রাচুর্য দিয়ে পূরণ হয়ে যায়, জীবনের ছোট ছোট আনন্দমুহূর্তগুলো যেভাবে জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে, পরিনত বয়সের প্রাপ্তি, তার উপভোগ যেন সেই তুলনায় খাটো পড়ে যায় । মন ফিরে যেতে চায় কৈশোরের সেই আনন্দঘন দিনগুলিতে ।


জীবনের পথে অনেকটা এগিয়ে এসে, সফলতার সিঁড়িতে অনেকটা আরোহণ করেও এমন শৈশবদিনের আনন্দময় দিনগুলির স্মৃতি কবিকে ব্যাকুল করে তুলেছে । সেই ভাবনাই ফুটে উঠেছে কবি আরিফ নীরদ রচিত 'কৈশোর' রচনায় ।


শৈশবের সেই দিনগুলিতে বাউন্ডুলে জীবন যাপন করতেন কবি । তার মধ্যেই এক বিচিত্র আনন্দ উপভোগ করতেন, বর্তমানের যান্ত্রিক জীবনে যে আনন্দ তিনি খুঁজে পান না । কিশোরকালে একঝাঁক বন্ধুর সঙ্গে পড়াশোনা ফেলে সারাদিন বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি । সিনেমার ভক্ত ছিলেন । প্রেক্ষাগৃহে নতুন সিনেমা এলে দলবেঁধে সেই সিনেমা দেখতে যাওয়া এক নিত্য অভ্যাস ছিলো । ছিলো ছবি ও গান সংগ্রহ এবং তা দিয়ে এলবাম তৈরির নেশা । বন্ধুদের মধ্যে এই নিয়ে একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব ছিলো । গান ভালো লাগতো । সকলেরই প্রিয় গায়ক ছিলো কেউ না কেউ । যতো নতুন গান আসতো, সব যেন মুখস্ত হয়ে যেত তাঁদের । বিকেল কাটতো মাঠে ক্রিকেট খেলে । তারপর চলতো আড্ডা । সকলেরই নিজ নিজ প্রেমিকা ছিলো । তাদের সঙ্গে নিয়ে দূর কোনো গাঁয়ে বেরিয়ে পড়তেন তাঁরা । কিভাবে যেন আনন্দ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে সময়গুলো পার হয়ে যেত ।
কিশোরকালে যেমন হয়, খাবারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে । বিশেষ করে ভোজবাড়ির খাবার । কোনো বিয়েবাড়িতে এক বন্ধু নিমন্ত্রণ পেলে দল বেঁধে সেখানে সকল বন্ধু গিয়ে হাজির হতেন । লজ্জা শরমের কোনো বালাই ছিলো না ।


সেই দিনগুলি এখন আর নেই । সময়ের স্রোতে ভেসে আজ কবি অনেকদূর এগিয়ে এসেছেন । অনেক কিছুই পেয়েছেন জীবন থেকে । তবু মাঝে মাঝে কৈশোরের সেই দিনগুলিতে ফিরে যেতে সাধ জাগে ।


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !