আমাদের জাগরন সময় কাটে সক্রিয়তার মধ্যে নানা সাংসারিক, ব্যবসায়িক কাজের মধ্যে দিয়ে । সাংসারিক ও ব্যবহারিক সূত্রে কতো মানুষের সঙ্গে আমরা সম্পর্কে জুড়ে যাই । এই সম্পর্ক দর্শনের জগতে নানা পারস্পরিক কাজকর্মের সুবাদে ভালোবাসা শ্রদ্ধা ও স্নেহের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে চলে ।
কিন্তু আমাদের যিনি পরম আত্মীয়, এই জগতের সকল জিনিসের সঙ্গে যিনি আমাদেরও সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয় নীরবে, নির্জনে একান্ত অনুভবের মধ্যে দিয়ে । জগতের যাবতীয় কাজকর্ম দায়িত্ব পালন করে একান্তে ধ্যানের মধ্যে তাঁকে পাওয়া যায় । এই ইহজগতে তিনি দৃশ্যমান নন । তাঁকে অনুভব করতে হয় হৃদয় মন দিয়ে । তাই ব্যস্ততার মুহূর্তে খোলা চোখে নয়, শান্ত মনে চোখ বন্ধ করে তাঁকে স্মরণ করলেই তাঁকে উপলব্ধি করা যায় । এইভাবে পরম ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর প্রিয় সন্তানের সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেছেন কবি তাহলীল তৌফিক "নিকট আত্মীয়" রচনায় ।


রূপক কবিতায় ধর্মীয় বোধ উচ্চারিত হয়েছে । জগতের সকল কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে ঈশ্বরের জন্য সময় বার করে আমরা যখন চোখ বন্ধ করে তাঁর ধ্যানে নিমগ্ন হই, তখনই সুস্পষ্টভাবে তাঁকে আমরা প্রত্যক্ষ করি । আমাদের মানবীয় অনুভবে মানব আকারেই তাঁকে আমরা পাই । বন্ধ চোখেই আলোর উপস্থিতিতে তাঁকে আমরা উপলব্ধি করি সামগ্রিকতায় ।


রাত্রিবেলায় কখনও ঘুমের ঘোরে, স্বপ্নে তাঁকে পাওয়া যায় যেন নিঃশব্দে শিশির পতনের মতো তিনি আমাদের মাঝে আসেন । কল কোলাহলের মধ্যে নয়, নীরবতার মধ্যেই তাঁর অস্তিত্বের উপলব্ধি সম্ভব । আর তাঁর সঙ্গে এই যোগাযোগ জীবিতকালেই সম্ভব । চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মধ্যে দিয়ে । কিন্তু চোখ যখন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, নিজের থেকে চোখ বন্ধ ও খোলার ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তখন আর এই যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না । তখন নিজ সত্বা আর কাজ করে না । নিজেকেই চলতে হয় অন্য চারজনের কাঁধে চেপে । নিজের সক্রিয় অবস্থায় সময় বার করে সচেতনভাবেই তাঁর সঙ্গে চোখ বন্ধ করে যোগাযোগ করা সম্ভব ।


চোখ বন্ধ করলেই তাঁর সঙ্গে প্রগাঢ় নৈকট্যের বোধ উপলব্ধি করা যায় ।  


কবিকে জানাই আন্তরিক.শুভকামনা ! !