সব প্রতিভাবান ব্যক্তিরাই শুনেছি একটুখানি পাগল থাকেন l আপাত লাভহীন কাজে তাঁরা যেভাবে আত্মনিয়োগ করেন, ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশ, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানচর্চায় যে ভাবে বিভোর হয়ে থাকেন, নিজেরা দারিদ্র্য-পীড়িত থেকেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেমন নানামুখী সমৃদ্ধির অমৃত-খনির সন্ধান দিয়ে যান - পাগল ছাড়া এ-কাজ আর কে-ই বা করতে পারে ?
জন কিটস, এমিলি ডিকেন্স, অ্যাডগার এলেন পো, ভার্জিনিয়া উলফ, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের মতো বিশ্বখ্যাত কবি-সাহিত্যিক-চিত্রশিল্পীরা সবাই নাকি  পাগল ছিলেন। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে গবেষকরা জানিয়েছেন, জিনিয়াস বা প্রতিভাবানদের সঙ্গে পাগলামির এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কেন এবং কিভাবে দুইয়ের মধ্যে এই যোগসূত্র রচিত হয়, তা জানতে বিজ্ঞানীদের একটি দল বেশ কিছুদিন গবেষণা চালান। ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় l এই ফেস্টিভ্যালে স্নায়ুবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপকরা নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে  মানসিক অসুখের সঙ্গে সৃষ্টিশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তির সম্পর্ক বিষয়ে আলোকপাত করেন l
সুন্দর পাগলামি ভরা এই ভুবনে আর এক পাগল কবি হলেন আসরের মাননীয় অ্যাডমিন l নিজের বুদ্ধি, মেধা, প্রযুক্তিজ্ঞান, সংস্কৃতিপ্রেম দিয়ে বাংলা কবিতাচর্চার এই ওয়েবসাইট গড়ে তুলেছেন, যেটি নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে বাংলা কবিতাচর্চার এক সর্ববৃহৎ অনলাইন মাধ্যম l পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো বাঙালি কবিদের কবিতাচর্চার এক মুক্ত অঙ্গন l আসরে বর্তমানে প্রায় ৮০০০ এরও বেশি নিবন্ধিত কবি আছেন l প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩০-১৪০ টি নতুন কবিতা প্রকাশিত হয় l এছাড়া কবিতার ওপর আলোচনা, কবিতাচর্চাকেন্দ্রিক প্রবন্ধ, মন্তব্য, প্রতি-মন্তব্য - সবকিছু মিলে আসর জমজমাট থাকে l মাঝে মাঝে মন্তব্য প্রতি-মন্তব্য নিয়ে ছোটোখাট মান অভিমান পর্ব চলে l মাননীয় অ্যাডমিন সুচারুভাবে নিষ্পক্ষ অবস্থান নিয়ে সেগুলি সামলেও নেন l উৎসবে অনুষ্ঠানে আসরের কবিদের লেখায় সমৃদ্ধ ই-পত্রিকা প্রকাশিত হয় l আসরের অন্য বহু পাগল কবি এই বাড়তি কাজের বোঝা হাসিমুখে নির্বাহ করে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট মুহূর্তে এই পত্রিকাগুলির প্রকাশ সম্ভব করে সকলের জন্য আসরে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাকে সৃষ্টি-সুখকর করে তুলেছেন l
আসরের প্রাণপ্রিয় কবি পল্লবের এই পাগলামিতে, এই মজার মাতলামিতে আসরের সকল কবি বেশ সৃজনশীল কর্মে মেতে আছেন l এই পাগলামিকে কখনোই মন্দ বলা যায় না l এবং এই পাগলামি ঘিরে আমাদের মনে কোনো দ্বন্দ্বও নেই l  
পাগল নিয়ে কেউ গান লিখছেন, কেউ ভালবাসায় পাগল হচ্ছেন l তবে সত্যিকারের অসুখ হিসেবে যদি কেউ পাগল হয়, তার থেকে সাবধান তো থাকতেই হয়, পাছে সে কামড়ে দেয় l সে এক হ্যাপা হয় তখন ! ফলে, কে কিরকম পাগল, কোন্ ধরনের পাগলামি ঝুঁকিপূর্ণ - তার খবর, তার হিসাব তো নিতেই হয় l যখনই পাগল পাগল গন্ধ পাওয়া যায়, পাগলামির কাজের চরিত্র দেখে সেই পাগলামি দেশের জন্য, দশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুভ হবে, নাকি সেই পাগলের বিষাক্ত কামড় খেয়ে কেউ বিপন্ন হয়ে পড়বেন, তার প্রাণ সংশয় হবে - এইসব কিছু বিচার বিবেচনা করে কোনো পাগলামি ভালো বা মন্দ - এই সিদ্ধান্তে আমাদের পৌঁছুতে হবে l
আর যাঁরা প্রকৃত প্রতিভাবান, সৃজনশীল কাজের জন্য পাগলহৃদয় যার, কোনো বাঁধনেই সেই প্রতিভাকে ছাইচাপা করে রাখা সম্ভব নয় l জীবনযাপনের দায়বদ্ধতার খোলস ছেড়ে সেই প্রতিভার বিচ্ছুরণ জগৎকে আলোকিত করবেই l মনের ভিতর এইজাতীয় পাগলামি যার আছে, তা বন্ধ করে কাজ নেই l দেশ দশের কল্যাণে এই ধরনের পাগলামি চলুক দিনভর, দিনের পর দিন l এতে করে ভালো বই মন্দ হবে না কারুর l
গতকাল ২৮-০৮-২০১৭ তারিখ কবির জন্মদিন গেছে l আসরে কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে ২৭-০৮-২০১৭ তারিখ l যদিও কবির জন্মদিনেই কবিতাটি পাঠ করেছি l


পাগলামির রকমফের নিয়ে এই বিচিত্র রসাত্মক মনোরম কবিতাটি উপহার দেবার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা l