'সংকট' শিরোনামে কবি মল্লিকা রায় এর কবিতাটি ছন্দের বাঁধনে বর্তমান দিনের সভ্যতার দ্বিচারিতা দুষ্ট সংকটকে তুলে ধরার প্রয়াস করেছে l
মেরুদন্ডহীন মানুষ আর ঘুনধরা বর্তমান সমাজব্যবস্থার রূপ প্রস্ফুটিত হয়েছে কবিতাটির প্রতি ছত্রে l উপযুক্ত উপমার ব্যবহার বক্তব্যকে দৃঢ় করেছে, প্রকাশভঙ্গি কিছুটা তির্যক, সমাজের মুখ আর মুখোশ উন্মোচনে যা প্রাসঙ্গিক l
আজকের দিনে মানুষ বড়ো বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর l নিজে সুখে থাকাটাই তার কাছে মুখ্য l অপরের দুঃখ কষ্ট তাকে বেদনাহত করে না l বরং নিজের ঘরে আরামকেদারায় বসে বিভিন্ন মাধ্যমে অপরের দুঃখ কষ্টের সংবাদ পাঠ বা দর্শন তাকে বিনোদনের তৃপ্তি প্রদান করে l কারো জন্য কোনো দায় সে অনুভব করে না l অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা নেই, ফলে তার সামর্থ্য সে আড়াল করে রাখে l অপরের অসুবিধার খোঁজটুকু তার দরকার শুধু আত্মতৃপ্তির জন্য l অপরের জন্য মেকি দুঃখপ্রকাশ করে নিজের খাসমহল রাঙিয়ে নেয়াটাই মানুষের কাছে মুখ্য l
পোশাক আশাক, চলনে বলনে মানুষরুপি হলেও আজকের দিনে মানুষের মনের ভেতরে রয়েছে বিষের ভাণ্ডার, সর্বদা যা অন্যের অনিষ্ট চিন্তায় মগ্ন l ব্যক্তিত্বশূন্য l শুধু নিজের কিছু সুখ ও আয়েশের জন্য যে কারো কাছে নত হতে প্রস্তুত l আত্মমর্যাদা নেই l মুহুর্মুহু কুর্নিশে অভ্যস্ত l যে কোনো ভ্রষ্টাচার এর সঙ্গে আপোষ করতে কোনো সঙ্কোচ নেই l আপন সুখের জন্য স্বৈরাচারী হতে বা স্বৈরতন্ত্রকে মদত দিতে প্রস্তুত l অথচ বাইরে সদাচারী, হৃদয়বান এক আবরণ জড়িয়ে রাখে l
স্বৈরাচার, ভ্রষ্টাচার এর সঙ্গে আপোষের সূত্রে নিজের এক হাই প্রোফাইল ইমেজ গড়ে ওঠে আজকের সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী মানুষের l কিন্তু নিজের মনের গভীরে সে এক শূন্যতা অনুভব করে l মনের সেই শূন্য বালুচরে নিজের সমস্ত ভন্ডামি, নোংরামি সে টের পায় l মনের মধ্যে তার কাজের সমর্থনে সে কোনো ভাষা খুঁজে পায় না l মনের চারপাশ এক খাঁ খাঁ মরুর শূন্যতা ঘিরে ধরে l  ঘুন ধরা সমাজের মেকি সুখের অসারতার বোধ তার হৃদয়ে যেন পাথর দিয়ে আঘাত করে l হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায় l
কিন্তু এ সবই সাময়িক একটা অনুভূতি l যে বিষচক্রের মধ্যে সে আবদ্ধ, তার থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারে না l অন্তঃসারশূন্য মানুষ বাইরের কৃত্রিমতা দিয়ে মনের শূন্যতা পূরণে বৃথা চেষ্টা করে যায় l
সুখের সন্ধানে, সমৃদ্ধির সন্ধানে আজকের মানুষ এইভাবে প্রেমসম্পদের দিক থেকে নিঃস্ব হয়ে চলেছে l অন্যায় পথে তার সমস্ত পার্থিব অর্জন তাকে এক চরম অপ্রাপ্তির দিকে নিয়ে চলেছে l বাইরের আমিকে তুষ্ট করতে গিয়ে ভেতরের আমিকে সে খুন করেছে l মেরুদণ্ড খোয়ানো এই মানুষ তাই শেষপর্যন্ত জীবনের পরম প্রাপ্তির সন্ধান পায় না l


সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন !!