প্রকৃতির উপাদান থেকে মানুষের জন্ম l মৃত্যুর পর আবার সেই প্রকৃতির মধ্যেই মিশে যাওয়া l তবু প্রকৃতি যে ধারায় চলে মানুষ তা অনুশরণ করে না l প্রকৃতি নিঃস্বার্থ l প্রতিটি উপাদান অপরের জন্য নিবেদিত l কিন্তু মানুষ সর্বদা তার স্বার্থ নিয়ে চলে l নিজ স্বার্থের বাইরে সে কিছু ভাবে না l মানুষের এই স্বার্থপরতা বিষয়ে কবিতা বেঁধেছেন কবি নূর ইমাম শেখ বাবু তাঁর 'স্বার্থপর' শীর্ষক রচনায় l


প্রকৃতির প্রতিটি অংশ যে অপরের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ তার অপরূপ প্রকাশ রয়েছে রজনীকান্ত সেন এর 'পরোপকার' কবিতায় -


"নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল,
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ, দগ্ধ হয়ে, করে পরে অন্নদান,
স্বর্ণ করে নিজরূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজস্বরে অপরে মোহিত,
শস্য জন্মাইয়া, নাহি খায় জলধরে,
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত-তরে।"


বর্তমান কবিতাটিতে তারই অনুরণন শুনি l
মানুষ সর্বদা তার স্বার্থ দ্বারা চালিত l ন্যায় এর পথ ভুলে গিয়ে, নিয়মকানুন বিসর্জন দিয়ে সে তার সকল শক্তি, বুদ্ধি নিজের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োগ করে l তার সকল যুক্তি সে সেই অনুযায়ী উপস্থাপন করে l

আকাশে রাশি রাশি মেঘ জমা হয়, অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে, তাপপ্রবাহে মৃতপ্রায় জগত জীবন শীতলতার পরশ পেয়ে সতেজ হয়ে ওঠে l এখানে মেঘ বা বৃষ্টির কোনো স্বার্থ নাই l নিঃস্বার্থভাবে যুগযুগান্তর ধরে এভাবেই জগতকল্যাণ করে চলেছে তারা l


আঁধার রাত্রিতে যখন পথ চলা দায়, তখন চাঁদের স্নিগ্ধ জ্যোত্স্না পথ আলোকিত করে, পাখির গানে মন ভরে যায়, রাত্রিকালে ফুটে ওঠা ফুলের সুঘ্রাণে সকলের প্রাণ জুড়ায় l এ সকলই প্রকৃতির নিঃস্বার্থ কাজ - জগতকে সুরে আলোয় সুগন্ধে ভরিয়ে তুলে বাসযোগ্য করে তোলা l


নদী কলকল করে অনর্গল বয়ে যায় l পাহাড়ি ঝর্ণা এসে সেই নদীর সঙ্গে মেশে, নদীর জলধারাকে পুষ্ট করে তোলে l বহমান নদীর উভয় পার্শ্বে সভ্যতা গড়ে ওঠে l নদীর জলধারায় মাটি উর্বর হয় l সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা পৃথিবী সেজে ওঠে l দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি বাতাসে প্রাণদায়ী অক্সিজেন যুক্ত করে l মানুষ উপহার হিসাবে এই প্রকৃতি পায় l


প্রকৃতির এইসকল উপাদানের নিজেদের জন্য কোনো চাওয়া থাকে না l মানুষের কল্যাণে সব তারা বিলিয়ে দেয় l অথচ সেই মানুষ এই পৃথিবীতে যতদিন থাকে, শুধু তার স্বার্থ নিয়ে চলে l


জীবনমুখী সুন্দর শততম রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন !!