কবি শাজাহান কবীর শান্ত "শুকনো পাতা" কবিতাটিতে পাতার রূপকে মানবজীবনের বয়সের বিভিন্ন অবস্থাকে তুলে ধরেছেন l কচি পাতা, সবুজ পাতা জীবনের সেই বয়সের রূপক যখন মানুষ সংসারে, সমাজজীবনে সক্রিয় থাকেন l সবুজ পাতা গাছের রান্নাঘর l গাছের যাবতীয় খাদ্যের যোগান খাদ্যরস রূপে তার সারাদেহে সঞ্চারিত হয় পাতায় তৈরি রান্না করা খাবার থেকে l সেই পাতা গাছ অর্থাৎ তার পরিবার ছাড়িয়ে মানবসমাজেরও উপকারে আসে l গাছের পাতা পথ্য হিসাবে, ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয় l অনেক দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময়ে কাজে আসে l ঠিক তেমনই নিজ কর্মশক্তি, বুদ্ধি, পরিকল্পনা দিয়ে মানুষ তার যুবকবয়সে পরিবারের দায়ভার নেন, তার যাবতীয় প্রয়োজন মেটান l যুবকবয়সে, উপার্জনক্ষম বয়সে ব্যক্তি পরিবারের শক্তি, সাহস সৌন্দর্য্য এবং আরও অনেক কিছু l সমাজজীবনে, তাঁর নিজ কর্মস্থলে মানুষ নিজ ভূমিকা পালন করে দেশকে, সমাজকে সামনের পথে, প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান l
কিন্তু বয়স বাড়ে l যেমন পাতার, তেমনি মানুষের l পাতা বিবর্ণ হয়, শুকিয়ে যায়, বৃন্তচ্যুত হয়ে ঝরে পড়ে l মাটিতে, ধুলায় গড়াগড়ি খায় l মানুষ, অন্যান্য জীবের পায়ের তলে দলিত হয় l অনেকটা এরকম অবস্থা হয় মানুষের যখন তাঁকে বার্ধক্য গ্রাস করে l পরিবারে তিনি এখন অপাংক্তেয় l কাউকে এখন তার কিছু দেবার থাকে না l তাই সকলের কাছেই তিনি অনাদরের পাত্র l সমাজের কোনো কাজে তিনি আসেন না l তাই সমাজের কাছেও তিনি বিস্মৃত l পরিবার থেকে, সমাজ থেকে বৃন্তচ্যুত হয়ে ঘরের কোনো অন্ধকার কোণ, বা হয়তো কোনো বৃদ্ধাশ্রম হয় তাঁর ঠিকানা l অনেকগুলি শুকনো পাতা যেমন গাছতলে লুটোপুটি খায়, তেমনই অনেক বৃদ্ধ মানুষ বৃদ্ধাশ্রমে পরিবারের, সমাজের অনাদর নিয়ে বেঁচে থাকেন l এই বেঁচে থাকা যেন নিত্য এক দহনযন্ত্রণা দেয় l যেমন চুলার মধ্যে শুকনো পাতা জ্বলে l
যৌবনের রূপ, সেই তেজ এখন স্তিমিত l যে সন্তান সন্ততিদের কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন, প্রতি মুহূর্তে তাদের প্রয়োজনকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার, আজ নিজের বৃদ্ধ বয়সে তারা কেউ তাঁর দিকে ফিরেও দেখে না l যেন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তাঁকে শুকনো পাতার মতো l প্রতি মুহূর্তে বাড়ির সকলের কাছে শুনতে হয় গঞ্জনা l তাঁর অস্তিত্বের কোনো মূল্য, মর্যাদা পান না তিনি l বুড়ো, অথর্ব হয়ে গেছেন বলে তাঁর সবকিছুই যেন শেষ হয়ে গেছে l শুধু শুধু বেঁচে থেকে পরিবেশকে বিষাক্ত করছেন l তাই অদৃষ্টের হাতে সকলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন তাঁকে l সকলেই তাঁর দ্রুত মৃত্যু কামনা করছেন l
জীবনের কঠিন কঠোর বাস্তবতাকে, ব্যক্তি-পরিবারের  অমানবিক দিককে, বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা ও যন্ত্রণার দহনকে কবিতায় এনেছেন কবি l


কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা l