প্রেম ভালবাসা কবিতার এক সাধারন বিষয়। বোধ করি যত বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা হয়, প্রেম নিয়ে লেখা হয় সর্বাধিক সংখ্যক। প্রেম মানুষের এক সহজাত অনুভূতি। তরুণ বয়সে প্রেমের অনুভব মনকে নানা রঙে রঞ্জিত করে তোলে। সৃজনশীল মানুষের মধ্যে প্রেমের এই বোধ বয়সের সীমা পেরিয়ে সব বয়সেই মনকে সতেজ ও রঙ্গীন করে রাখে। প্রেমের কবিতাগুলিতে এই প্রেম তার নানা অভিঘাতে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে বৈচিত্র্যপূর্ণ মায়াজাল সৃষ্টি করে। দেহজ, প্লেটনিক, সফল, ব্যর্থ, প্রেমের শুরুর পর্যায়, তার প্রগতি, মান অভিমান, সংকল্প, প্রতিজ্ঞা, বিশ্বাস, বিশ্বাসঘাতকতা, সাহসী প্রেম, ভীত প্রেম, প্রেমে বাধা, অবাধ প্রেম - কবিতা উপন্যাস নাটকে এরকম বহুবিধ স্বরূপে প্রেম যুগ যুগ ধরে মানবমনকে বিনোদন দান করে চলেছে।
কবি আতাম মিঞা রচিত "সুখস্মৃতি" কবিতাটির বিষয় সেই প্রেমের অনুভব। এখানে প্রেম সাহসী নয়। দোদুল্যমান ভাবনায় ভীত। সরল দোলকের ন্যায় এগোয়, আবার পিছিয়ে যায়। হৃদয়ের দ্বারে কাল্পনিক এক চুম্বনের সুখস্মৃতিকে সম্বল করে বেঁচে থাকে।
নিশুতি রাতে আলোর জ্যোৎস্না গায়ে মাখা প্রেয়সীর দেখা মেলে। প্রথম দর্শনেই তাকে মায়াবী, বায়বীয় মনে হয়। এই প্রেম যে পূর্ণ পরিণতি পাবার নয় তার আভাস বুঝি এখানেই থাকে l প্রেয়সীর এই রূপকে স্থায়ী করবার প্রয়াস হিসাবে তার একটি চিত্র এঁকে রাখার ভাবনা মাথায় আসে l কিন্তু তার জন্য তো চিত্রকর হতে হয় ! প্রেমিকের সে কুশলতা নেই l তাই এই দর্শনকে চিরন্তন করে রাখতে প্রেমিক নির্ভর করেন তার স্মৃতির ওপর l সেখানেই জমা থাকে আজকের এই দৃশ্য ও তৎকেন্দ্রিক প্রেমিকের যাবতীয় অনুভব l
বায়বীয় সেই প্রতিবিম্ব প্রেমিকের চেতনার ধমনীতে কামনার শিহরণ তোলে। হেমন্তের হিমঝরা রাতে তার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু সাহস হয় না। অগ্রপশ্চাৎ নানা চিন্তা মনকে আচ্ছন্ন করে। প্রেয়সীর রূপালী হাসির চাহনিতে প্রেমিকের হৃদয়ে ভালো লাগার আলপনা অঙ্কিত হল এমন অনুভব জাগে । সেই সুখস্মৃতিতে হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সযত্নে সেই স্মৃতি হৃদয়ের মণিকোঠায় সংরক্ষিত হয়।
ভালোলাগা ও ভালোবাসার বোধকে আশ্রয় করে সুন্দর সুখপাঠ্য এক মনোরম কবিতা উপহার দেবার জন্য কবি আতাম মিঞাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন l