"স্বপ্নের ফুল" এ এস এম আব্দুল্লাহ রচিত একটি প্রেম বিষয়ক কবিতা । নিজের মতো করে প্রেমের অনুভবকে তিনি কলমের আঁচড়ে ধরতে চেয়েছেন ।


প্রতিটি নর নারীর জীবনে প্রেম এক পবিত্র অনুভব । প্রতিটি সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রেম দেহজ এবং মনজ - একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি নয় । প্রেমের রূপসাগরে যখন মানুষ নিমজ্জিত থাকে, তার অনুভূতির অনেকটাই জুড়ে থাকে প্রিয় মানুষটির উপস্থিতি । তার চিন্তা, চেতনা, ভাব, ভাবনা, তার জাগরণে বা স্বপ্নে - শরীরের প্রতিটি রোমকূপে রক্তের ধারার মধ্যে দিয়ে বয়ে যায় প্রেমের অনুভব ।


প্রেমের এই অনুভব কবির দেহমনকে রন্জিত করে । রোমান্টিক এক আবেশের বশীভূত হন । তাঁর ক্লান্ত, শ্রান্ত দেহ মনোরম আশ্রয় খোঁজে প্রেমের ভেতর । প্রেমের এই বোধ থেকে কাব্যিক প্রেরণা পান তিনি ।


তবু প্রেম অনিশ্চয়তায়পূর্ন । কতোটা প্রেম সামাঞ্জস্যপূর্ন এ বিষয়ে মনের দোলা শেষ হবার নয় । মনের গোপনে চিরকাল থেকে যায় একটা শীতলতা, একটা অতৃপ্তির বোধ । প্রেমকে যেন অধরাই মনে হয় । মনে হয়, তা যেন ধরা দেবার নয় । বনফুলের মতো । গৃহপ্রাচীরের মধ্যে তাকে যেন আবদ্ধ করা যায় না । এমন মনে হয়, প্রেম পাবার জন্য অনেক প্রেমিকই যুগ যুগ ধরে প্রয়াস করে যাচ্ছেন, তার অন্বেষন করে চলেছেন, সেই দৌড়ে কবি নিজেকেও একজন হিসেবে দেখছেন । অন্য অনেক প্রেমিকের তুলনায় কবি নিজেকে দুর্বল ভাবছেন । যেন একটা প্রতিযোগিতা । সেখানে তাঁর হেরে যাবার ভয় । নিরাশার বুকভাঙা ব্যথার বেদনা অনুভব করেন কবি । অকুল প্রেমসাগরে যেন প্রেম তাঁর হাতছাড়া হয়ে  যাচ্ছে । প্রেমের রত্নভান্ডার হারিয়ে ফেলছেন তিনি ।


এক ভ্রমের শিকার হয়ে কবির এই পরিণতি হয়েছে । যে প্রেম তাঁর আয়ত্তের মধ্যে ছিলো, গৃহপ্রাচীরের চার দেয়ালের মধ্যে তাঁর প্রতি নিবেদিত ছিলো, সেই প্রেমকে উপেক্ষা করে তিনি ছুটেছেন এক মরীচিকার সন্ধানে । ঘরের লক্ষ্মীকে অস্বীকার করে বনের লক্ষ্মীর মধ্যে প্রেম অন্বেষণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন । বনলক্ষ্মী তো হাতে আসে নি । আসে না । কারণ তা মরীচিকা ছাড়া আর কিছু নয় । এদিকে উপেক্ষায় উপেক্ষায় গৃহলক্ষ্মী বিরূপ হয়ে গেছেন । নাগালের বাইরে চলে গেছেন । যে প্রেম ঘরেই ছিলো, সেই জহরত, মুক্তা, কাঞ্চন ছেড়ে শৈবালের খোঁজে বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে কবির হাতে কিছুই আসে নি । নিরাশার শিকার হয়েছেন । এদিকে হারিয়েছেন গৃহলক্ষ্মীর নিশ্চিত ভালোবাসা ।


নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন কবি । আত্মগ্লানিতে ভুগছেন । নিজের ভাঙা ঘরে বসে আছেন এই আশায় যে তাঁর প্রেম নিশ্চয় একদিন ফিরে আসবে । প্রতীক্ষায় আছেন । স্বপ্ন দেখেন আবার তাঁর প্রেয়সীর সঙ্গে মিলিত হবার । নিজের কুঁড়েঘরকে আবার প্রেমের আলোয় আলোকিত হতে দেখেন । আশা রাখেন তাঁর প্রেম হারিয়ে যাবে না, আবার তাঁর দেহজ ও মানসিক ক্ষুধার নিবৃত্তি করবে । তাঁর প্রেম লক্ষ্যে পৌঁছুবে এই আশায় বুক বাঁধেন কবি ।  জীবনের পথ বেয়ে তাঁরা আবার একসাথে চলবেন এই স্বপ্ন দেখেন কবি ।
চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ প্রেমই যে তাঁর চির আকাঙ্ক্ষিত, শুভ্র পবিত্র প্রেম, তাঁর স্বপ্নের আরাধ্যা - বোধের এই উত্তরণে পৌঁছে কবি স্বস্তি অনুভব করেন ।


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ! !