পৃথিবীর লক্ষ কোটি প্রাণপ্রজাতির মধ্যে মানবজীবন প্রকৃতির দয়ায় বিভিন্ন অসাধারণ শক্তি দ্বারা অন্বিত । জন্ম, বৃদ্ধি এবং মৃত্যুবরণ - জীবনের এই তিন লক্ষণ দ্বারা অন্য সকল জীব বা প্রানীকে চিহ্নিত করা গেলেও মানবজাতিকে সেই সীমার মধ্যে আঁকা যায় না । জন্ম থেকেই সে তার মস্তিস্কে এমন কিছু ক্ষমতাপ্রাপ্ত, যার প্রকাশ ও বিকাশ চলতে থাকে আজীবন । জগত জুড়ে যুগে যুগে মানুষের যাবতীয় সৃষ্টি তার সাক্ষ্য বহন করছে । শুধু বেঁচে থেকে জীবনধারণ নয়, তাকে ছাড়িয়ে গিয়ে অসীমের মাঝে মিশে যাওয়া তার শিল্প, তার সাধনা । সবক্ষেত্রেই মানুষের কর্ম জগতের কল্যাণ করেছে এমন নয়, কিন্তু তার প্রতিটি কর্মে, তার ভাবনায়, তার চেতনায় সৃজনশীল শিল্প ও সৌন্দর্যবোধে সে অনুপম ।


পার্থিব বন্ধন, জাগতিক শক্তিকে ছাড়িয়ে মানুষের মধ্যে নিজেকে অতিক্রম করে যাবার যে শক্তি রয়েছে, যার দ্বারা সে অনেক অনেক সমস্যার সমাধান করে উঠতে পারে, অনেক রহস্যের উন্মোচন করতে পারে, তারই প্রতি নির্দেশ করেছেন  কবি কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম "তৃতীয় নয়নের উত্তপ্ত শিখায়" রচনায় ।


মানুষ জন্মসূত্রেই অনেক বিরল শক্তির অধিকারী । কিন্তু চর্চা ও অনুশীলনের দ্বারা তাকে নিজের মধ্যে এই শক্তিকে জাগ্রত করতে হয় । তার যাবতীয় সমস্যা হালকা হয়ে যায় যখন তার মধ্যে এই শক্তি জেগে ওঠে । কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এবিষয়ে সচেতন নন । তাঁরা পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে পছন্দ করেন । তাঁদের ধারণা নিজেদের সমস্যা, অসুবিধার কথা অপরের কাছে নিবেদন করলেই তাঁদের কাজ উদ্ধার হয়ে যাবে । ফলে নিজেরা নিশ্চেষ্ট থেকে তাঁরা শুধু আশায় থাকেন অপরের কাজ করে দেবার অপেক্ষায় । তাঁরা দুঃখ কষ্ট সহ্য করেন, আবেদন নিবেদন করেন, নিজেদের স্থূল অবলম্বনটুকুকে আঁকড়ে থাকেন । নিজের ভেতরে যে অসীম শক্তি রয়েছে, অনুশীলন চর্চা করে তাকে জাগ্রত করার প্রয়াস করেন না ।


তাঁদের উদ্দেশে কবির নিবেদন, কান্না থামিয়ে বরফশীতল রাত্রিতে তাঁরা যেন তাঁদের স্থূল দৃষ্টির বাইরে গিয়ে তাঁদের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলার প্রযত্ন করেন । অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা নয়, আপন শক্তিতে মুক্তির পথ খুঁজে নেবার কথা বলেছেন কবি । যা যাবার তা চলে যাক । তার প্রতি মোহ বর্জন করে প্রতিনিয়ত নতুনের সাধনার প্রতি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে বলেছেন । এই পথে পার্থিব শক্তিকে ছাড়িয়ে অপার্থিব শক্তির অধিকারী হবে মানুষ । কেউ তাঁর জন্য কিছু করে দিবে সে আশায় না থেকে নিজেকেই নিজের জীবনের চালক হতে হবে । শীতকাতরতা ঝেড়ে ফেলে মনের শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে হবে । শারীরিক শক্তির চেয়ে মনের শক্তি অনেক বেশি । এই মনের শক্তির অধিকারী হয়েই অনেক আপাত দুর্বল ব্যক্তি জগতে কতো অসাধ্য সাধন করে চলেছেন । সেই মনের শক্তিকে জাগিয়ে তোলার প্রয়াস করতে হবে মানুষকে । সেটাই হবে তাঁর তৃতীয় চোখ । মানবের তৃতীয় চোখ খুলে যাওয়ার অর্থ হলো পশুত্ব ত্যাগ করে তার দেবত্বে উত্তরণ হওয়া । দিব্যদৃষ্টি লাভ করা । চর্মচক্ষে যা দেখতে পাওয়া যায় না তা দেখার শক্তি অর্জন করা । অর্থাৎ আপাত অনেক কঠিন কাজ ও রহস্যের জট খুলে যাওয়া । প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই দেবত্ব আছে । এই পূর্নতা নিয়েই সে জন্মায় । দরকার তার বিকাশের । নিয়ত অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে মানুষ তা অর্জন করতে পারে ।


মনের সেই চোখকে জাগ্রত করে দুই চর্মচক্ষুর দৃষ্টি সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে যায় সে ।


কবিকে জানাই অসীম শুভকামনা !