শুভ জন্মদিন কবি !
এক পলাতক প্রেমিকের বহুদিন পর তাঁর প্রেমিকার শহরে ফিরে আসা এবং তৎকেন্দ্রিক নানা অভিজ্ঞতা অনুভূতির বিষয় আছে কবি এস এইচ হীরা দাস রচিত "তোমার শহর" কবিতায় l
ভালবাসা বিশ্বাসের কঠিন ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত l  দুজন অচেনা মানুষ যখন ভালবাসার সম্পর্কে পরিচিত হন, তখন পরস্পরের প্রতি এই বিশ্বাস, নির্ভরতাই তাঁদের সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখে, দৃঢ়তর করে l মাঝে আসে কিছু সঙ্কট, নানা টানাপোড়েন l পারিবারিক, সামাজিক চাপ l নিজেদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি l জীবন জীবিকার তাগিদ l সবকিছু অতিক্রম করে ভালবাসার সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস l কোনো পক্ষেই এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে এই বিশ্বাসে চিড় ধরে l অনেক বাধা টপকে, অনেকের সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে এই সম্পর্ককে টেনে নিয়ে যেতে হয় l বিশ্বাসের ভিত খুব মজবুত হলেই এটা সম্ভব l
যদি ভালবাসার নামে চলে শুধু অভিনয়, শুধু কালক্ষেপণ, তাত্ক্ষণিক সঙ্গলাভের মজা অনুভব, একপক্ষ ভালবাসার প্রশ্নে আন্তরিক হলেও অপরপক্ষে যদি থাকে শঠতা, তাহলে সেই ভালবাসার সম্পর্ক পূর্ণতা পেতে পারে না l সময় বুঝে মিথ্যা ভালবাসা কেটে পড়ে, পালিয়ে যায় l এই পালিয়ে যাবার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে l কিছু কারণ যুক্তিসঙ্গত হতে পারে l কিন্তু যেটা থাকে না, সেটা হলো ভালবাসার জনের অনুমোদন l যেটা প্রকটভাবে ধরা পড়ে তা হলো বিশ্বাসভঙ্গ l ভালবাসা যখন পরিণতির পথে, দুজনে মিলে এক নতুন জীবন শুরু করবার প্রস্তুতি চলছে, কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে যে কারণে এই সম্পর্ককে অবিলম্বে একটি নাম দেয়া প্রয়োজন, ঠিক এরকম এক সংবেদনশীল মুহূর্তে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে একা ছেড়ে শহর ত্যাগ করছে l গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রিয়জনের থেকে পালিয়ে যাবার অনেক সম্ভাবনার মধ্যে এটি একটি মাত্র l অন্য কারণও থাকতে পারে l একা প্রেমিকা কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলে উঠলেন, আদৌ সামলে উঠতে পারলেন কি না, আর একজন জীবনসাথী তিনি পেলেন কি না, এই নতুন জীবনসাথীটিই বা কিরকম, তাঁর সঙ্গে সুখী সংসারজীবন সম্ভব হয়ে উঠল কি না, নাকি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন, অকালেই তাঁর জীবনসমাপ্তি ঘটল - যে কোনোটাই হতে পারে l নিজের পলাতক, বিশ্বাসঘাতী প্রেমিকের প্রতি তাঁর মনোভাবটা কিরকম, তিনি তাঁকে ক্ষমা করলেন, নাকি তাঁর প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করে গেলেন - সেটিও ব্যক্তিনির্ভর l
বহুদিন পর সেই পলাতক প্রেমিক সেই শহরে ফিরে এসেছেন l শহরের বহু বাহ্যিক পরিবর্তন তাঁর নজরে এসেছে l যেন অচেনা একটি শহরে এসেছেন তিনি l নিজের প্রেমিকার কথা ভাবছেন তিনি, যাঁকে এক জটিল মুহূর্তে ত্যাগ করে গেছিলেন l প্রেমিকটি ভাবছেন, তাঁর প্রেমিকা এখন অন্য কারো জীবনসঙ্গী হয়ে হয়তো সুখেই আছেন, নিশ্চয় অনেকটাই পাল্টে গেছেন এই শহরটার মতোই l সব নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন l
এই শহরে নিজের প্রেমিকাকে খুঁজে বের করার জন্য কোনো প্রয়াস করবেন না তিনি l তাঁকে খুঁজতেই তিনি ফিরে এসেছেন এমনও নয় l তবে প্রয়াস করেও কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না l কারণ শহরটি এতটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে যে শহরের প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি বস্তু তাঁর অচেনা l বিষয়টি এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে l শহর এখানে তাঁর প্রেমিকার রূপক l যে প্রেমিকা ছিল তাঁর খুব কাছের, অতি পরিচিত, তাঁর সঙ্গে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন l এখন সেই প্রেমিকার সম্বন্ধে তাঁর কোনো জ্ঞান থাকার অধিকার নেই l নিজের দোষেই তিনি এই অধিকার হারিয়েছেন l তাই সবকিছু তাঁর অচেনা লাগছে l তিনি এটা জানেন ও বোঝেন যে তাঁর প্রেমিকার সামনে দাঁড়ানোর সাহস বা অধিকার দুটিই তিনি হারিয়েছেন l তিনি শুধু জানতে চান যে তাঁর প্রেমিকা বর্তমানে কেমন আছেন l এজন্যই আজ এতদিন পর তাঁর শহরে আগমন l
প্রেমিক বুঝতে পারছেন প্রাকৃতিক যে বিষয়গুলো একসময় তাঁদের প্রেম ভালোবাসার মুহূর্তগুলিতে সঙ্গ দিত, রাতজাগা তারাগুলো, সেগুলিও এখন তাঁকে ত্যাগ করেছে এবং তাঁর প্রেমিকার নতুন জীবনের সাথী হয়েছে l মনের অজান্তে করা ভুলের জন্য অনুতপ্ত তিনি l যে বিশ্বাস তিনি হারিয়েছেন তার জন্য ব্যথিত l নিজের করা ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী l ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকার প্রতি এখনও অনেকটা ভালবাসা অনুভব করেন তিনি, সেই ভালোবাসার কাছে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করেন l


কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!