13/1. বৃষ্টি মানে :
শ্রাবণ দিনে মেঘ ডেকেছে বৃষ্টি এলো বলে
হঠাৎ কেমন চঞ্চলতা ভিড়টা গেলো গলে
দোকানপাট গুটিয়ে নিয়ে যে যার নিজের ঘর
আঁধার আকাশ ফুটো হয়ে জল ঝড়ে ঝর ঝর
নদীর পারে ও ভাই মাঝি নৌকা টেনে চলো
ঝড়ো বাতাস জলের ফোঁটা পাল তোলো পাল তোলো
গাছের পাতা সবুজ ঘন বৃষ্টি জলে ভেজে
ধুলো ধোঁয়া মুছে ফেলে ওঠে সবাই সেজে l
জলের তোড়ে মাঠের ফসল নতুন খোরাক পেয়ে
তরতরিয়ে বাড়ছে দ্রুত নতুন জলে নেয়ে
পাড়ার যতো বখাটে সব বৃষ্টি জলে ভেজে
পথে ঘাটে নেচে বেড়ায় আদুল গায়ে সেজে
গরম ভীষন দম চলে যায় শীতল বাতাস এসে
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামায় ভুখা আকাল দেশে
বৃষ্টি মানে সব পেয়েছি প্রিয়ার গালে টোল
বৃষ্টি মানে নবযৌবন হৃদয় জুড়ে দোল l
13/2. মিলন :
ঝম ঝম ঝম বাদল দিনে
ঘরবন্দী আর বাঁচি নে
মন চলে যায় কোন্ সে দূর
প্রিয়তমার অন্তঃপুর l
ঝম ঝম ঝম বৃষ্টি তানে
মন নেচে যায় সুরে গানে
প্রিয়ার স্মৃতি দোলায় মন
দোলনচাঁপা সর্বক্ষন l
মেঘের ডাকে বৃষ্টি বোলে
গুমোট হৃদয় সপাট খোলে
মেঘের চলন জলের খাতে
হৃদয় মেলে হৃদয় সাথে l
13/3. ঝম ঝম :
কড় কড় গর্জন
মেঘেদের তর্জন
ঝম ঝম বৃষ্টি
বাংলার কৃষ্টি
নদীবুক ভরপুর
জল যায় দূর দূর
কতো জল কতো মাছ
জেলেদের মহানাচ l
ঐ মাঠ ডুবছে
ঘরে জল ঢুকছে
কৃষকেরা ব্যস্ত
নাই কোনো রেস্ত
জলতলে দেয় ডুব
কাজ করে নিস্চুপ
গোছা গোছা ওপরে
দম ধরে ফোঁপরে l
স্কুল বন্ধ
বিদ্যুৎ অন্ধ
পথঘাট নাই তল
সবদিকে ঐ জল
জল শুধু জলময়
জলধর সুসময়
ঐ জল নাচছে
বুদ্ধিটা ভাঁজছে l
13/4. পাগলপারা :
প্যাঁক প্যাঁক করে হাঁস
ব্যাঙ করে কোয়াক
আকাশে যে মেঘ জমেছে
এবার সেটা খোয়াক
মেঘের জলে বান ডেকেছে
নদী সাগর কূলে
প্রানীসকল গাছগাছালি
হৃদয় তাদের দুলে
বার্তা পাঠায় বিরহী মন
মেঘকে বাহন করে
দূরদেশে তার প্রিয়ার কাছে
মেঘমল্লার সুরে
বৃষ্টি ঝরে ঝম ঝমাঝম
বিরতিহীন ধারা
মন ছুটে যায় সেদিকপানে
হৃদয় পাগলপারা
13/5. বৃষ্টি কেমন সৃষ্টিছাড়া :
বৃষ্টি কেমন সৃষ্টিছাড়া
দৃষ্টি যায় না দূরে
ঝমঝমাঝম সারাটা দিন
পড়ছে একই সুরে ।
সরোজ গাজি গরজ করে
দরাজ গলায় হাঁকে
বৃষ্টিভেজা পথটি ধরে
সব্জিঝুড়ি কাঁখে ।
বৌদিমনি ঠিক তখনই
চিনি দেবেন চায়ে
দাদামনি যাননি অফিস
বিষম ব্যথা পায়ে ।
তিন্নি রানী বিন্নি তুলে
গিন্নী হয়ে বলে
রান্নাবাটি ঘটিমাটি
সব ভেসেছে জলে ।
জল ছলাছল কল কলাকল
রাস্তা জুড়ে নদী
ঝড়ো বাতাস ঝাপট মারে
ভীষণ সে আমোদী ।
এমন দিনে সুজন বিনে
কাটবে কেমন বলো
বন্দী ঘরে একলা মরে
মনের মানুষগুলো ।
** সেতু জুনিয়র - ৩ আগস্ট ২০১৯ এ প্রকাশিত
13/6. বৃষ্টির গান :
গুপীদের বাড়িতে চড়ে সব গাড়িতে
চলে নাকো হাত কিম্বা পা
কাঁচা পাকা দাড়িতে ব্যথা নিয়ে মাড়িতে
গায় শুধু সা রে গা মা পা l
চাল নেই হাঁড়িতে সেজেগুজে শাড়িতে
আড্ডাটা চলে এন্তার
কতো ভাব আড়িতে নানা রাশভারিতে
জমে যায় কথার পাহাড় l
গাড়ি ভরা কাঁড়িতে নদীপার খাঁড়িতে
দলদল চলা ভারি দায়
গারোয়ান তাড়িতে কাঁড়ি ভরা গাড়িতে
বৃষ্টির গান গেয়ে যায় l
13/7. বৃষ্টি এলো বলে :
শূন্য শূন্য মহাশূন্য শুষ্ক তরুশাখা
দূর দিগন্তে মেঘেরা সব আকাশ বুকে আঁকা l
বৃক্ষশাখে ছোট্ট চাতক জল চেয়েছে জল
জলের ডাকে সাড়া দিতে ছুটছে মেঘের দল l
মেঘ ছুটেছে মাটির টানে বৃষ্টি এলো বলে
নীল আকাশে মেঘের সারি খুশিতে মন দোলে l
বৃষ্টি হবে সারাটা দিন বৃষ্টি হবে রাতে
শুকনো গাছে পাতার কুঁড়ি বৃষ্টি বজ্রাঘাতে l
কুঁড়ি থেকে ফুল ও ফলে ভরল ভাঁড়ার ঘর
মেঘ বৃষ্টির সমদৃষ্টি নেইকো আপন পর l
** টার্মিনাস শুধু কবিতার জন্য বই পার্বণ ২০২০ তে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা - ৩৪
13/8. বৃষ্টি নামে :
বৃষ্টি নামে বাইরে দূরে
বৃষ্টি নামে মনে
বৃষ্টি মানে ধৌত ধরা
শুদ্ধ মনের কোণে ।
জমছে কতো আবর্জনা
নিত্য চারিধারে
জমছে মনে বিষভাবনা
চক্র নীতি হারে ।
বৃষ্টি যেন আন্দোলনে
আন্দোলনে থেকে
বাহির তথা ভিতর থেকে
নোংরা ফেলে ছেঁকে ।
সব যুগেতে বৃষ্টি নামে
অমানিশার পরে
বাঁধন ছিঁড়ে সৃজনমুখী
সৃষ্টি মেলে ধরে ।
13/9. বৃষ্টিসখা :
নীল আকাশ ও নীল সাগরে
নীলের সমাহার
শুকনো গাছ ঐ আকাশপথে
জলের হাহাকার ।
গাছের মাথায় চাতক সারি
দিচ্ছে বারি ডাক
বৃষ্টি আসুক আকাশ ফুঁড়ে
ঝরুক ধারাপাত ।
সবুজ ধরা রুক্ষ এখন
চাষের অনটন
খালে বিলে নদী নালায়
সবার অনশন ।
চাষির ঘরে চিন্তারেখা
মাটি ফেটে কাঠ
কবির লেখায় তাই আহ্বান
ঝরুক বৃষ্টিপাত।
নীল আকাশে মাথা তুলে
বলছে বৃক্ষশাখা
মেঘের মেলা নিয়ে এসো
আমার বৃষ্টিসখা ।
13/10. বৃষ্টি এলো ঝম ঝমাঝম :
বৃষ্টি এলো ঝম ঝমাঝম বৃষ্টি এলো বনে
বৃষ্টি পেলো অনেক ফুটো মেঘের আচ্ছাদনে l
এমন হাজার লক্ষ ফুটো গলছে সারাটা দিন
বৃষ্টি নাচে ঝম ঝমা ঝম নাচে তাধিন তাধিন l
বনের যতো জীব ও জন্তু পাখপাখালি সকল
বৃক্ষরাজি লতাগুল্ম ভিজে হলো নাকাল l
বৃষ্টি পড়ে সকাল দুপুর বৃষ্টি পড়ে রাতে
বৃষ্টি থেকে বাঁচার রাস্তা নেইকো কারুর হাতে l
আকাশ থেকে পড়ছে ধারা বইছে সে জল বনে
জলের ধারায় ভাসছে কুটো ভাসছে মৃতজনে l
বিজলী চমক মেঘের ডাকে প্রাণটা ধড়াস ধড়াস
পারলে তোরা আকাশ থেকে মেঘটা একটু সরাস l
বনের মাঝে বইছে নদী এ পথ সে পথ ধরে
হন্যে সবাই ভেবে ভেবে বাঁচবে কেমন করে l
কীট পতঙ্গ মাটির শরণ উঠছে গাছের উপর
বৃষ্টিধারায় যাচ্ছে ধুয়ে আবার জলের ভিতর l
হা হতোস্মি এমন ধারা থামবে কি না আবার
বনের যতো পশুপাখি হবে কি সব সাবাড় ?
প্রলয়কালে এমন ধারায় ভেসেছে জীবজগৎ
আবার করে যুগের অন্ত দেখছে নব ভারত l
পাপের ভারা পূর্ণ হলে প্রলয় নেমে আসে
ঝম ঝমাঝম বৃষ্টি মাঝে মেঘের অট্টহাসে l
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা মেঘ ঝরেছে জলে
সারাটা বন মিশছে যেন মহাসাগর দলে l
13/11. ব্যাঙ আমাদের বৃষ্টি খরা :
ভোপালে কি হলো রে
খরা খরা সেই খরা জান প্রাণ গেলো রে l
করে এক বুদ্ধি
দুটো ব্যাঙ জড়ো করে প্রকৃতির শুদ্ধি l
ফুল মালা সিঁদুরে
পুরোহিত বিয়ে দেন যেন তারা হিঁদুরে l
তারপর ওরে বাপ
দুই মাস ধরে চলে প্রকৃতির অভিশাপ l
ঝম ঝম বৃষ্টি
তেরোর রেকর্ড ভেঙে একি অনাসৃষ্টি l
সকলেই নিরুপায়
জল জল শুধু জল বন্যায় ভেসে যায় l
শেষে সেই বুদ্ধি
দুটো ব্যাঙ ফের ধরে পুনরায় শুদ্ধি l
ডিভোর্সটা লক্ষ্য
ফের আসে পুরোহিত গড়া ভাঙা দক্ষ l
বিয়ে দিয়ে জুড়েছেন
চাপে পড়ে এইক্ষণে মন্ত্রতে ঘুরেছেন l
ব্যাঙেদের ক্ষমতা
বিবাহ ডিভোর্স করে প্রকৃতিতে সমতা l
প্রশ্নটা সমীচীন
দুটো ব্যাঙ বিয়ে দিয়ে বর বউ মেনে নিন l
কিন্তু পথের থেকে
দুটি ব্যাঙ ধরে নিলে স্বামী স্ত্রী কোন চেকে ?
হয়তো যুগল কলা
পরকীয়া নয় সেটা জোর দিয়ে যায় বলা ?
যদি নয় বর বউ
এমনি পথের ধারে ডেট করে যে কেউ l
তাদের ডিভোর্স করে
বৃষ্টি কি থামবে গো এই ভুয়া পথ ধরে ?
যদি এতো শক্তি
বিবাহ ডিভোর্সেতে এতো যদি ভক্তি
করো ড্যাং ড্যাং
যাও ধরে নিয়ে এসো সেই দুটি ব্যাঙ l
সাত পাকে বেঁধেছিলে
বিয়ের বাঁধনে বেঁধে বৃষ্টিতে মেতেছিলে l
ব্যাঙ আমাদের বৃষ্টি খরা ব্যাঙ হলো মাই বাপ
ব্যাঙে ভাসি ব্যাঙে শুকাই ব্যাঙেরই চাপ তাপ l
13/12. বৃষ্টি এলো গঞ্জে গাঁয়ে :
বৃষ্টি এলো গঞ্জে গাঁয়ে
বৃষ্টি এলো বনে
বৃষ্টিধারায় ভিজলো সকল
ভিজলো প্রতি জনে l
মেঘ কড়কড় ঐ এলো ঝড়
জলের ভীষণ তোড়ে
ওলোটপালোট জীবনযাপন
স্রোত বইছে দোরে l
বইছে জলে ঘর সংসার
বইছে আনাজপাতি
ভর দুপুরে ভর আঁধারে
জ্বলছে সাঁঝের বাতি l
একলা পথে পথ হারিয়ে
পথের প্রাণীসকল
মিলেছে আজ উচ্চ ভূমে
সইছে জলের ধকল l
13/13. ঝমঝম বারিধারা :
রোদে বসে রোদ্দুর
ডিমভাজা খায়
ডিমভাজা সুস্বাদু
পিলা চমকায় ।
আকাশেতে মেঘদল
ডেকে যায় জোর
কড় কড় কড় করে
বুকে ধড়পড় ।
ঝমঝম বারিধারা
দিনরাত ঝরছে
রাস্তায় কাদাজলে
পথিকেরা মরছে ।