1. শরৎ এসেছে :


শরৎ হেসেছে গাছের পাতায়
শরৎ হেসেছে ফুলে
শরৎ এসেছে গ্রাম বাংলায়
শরৎ এসেছে দুলে l


শরৎ খেলেছে কিশোরীর পায়ে
কিশোরের চোখে মুখে
শরতে আকাশ নির্মল সাদা
তুলো মেঘ তার বুকে l


নদী কলরোল জন হিন্দোল
শরতে মেতেছে ধরা
মৃদু বায়ু আসে যেন ভালোবাসে
পূর্ণ খুশির ঘরা l


পুজোর আমেজ আকাশে বাতাসে
খুশিতে নেচেছে মন
গ্রামে ও শহরে সেই এক দোলা
মেতেছে মানুষজন l


2. পুজো এসে গেছে :


দূরে ঐ দূরে বহু বহু দূরে সূর্য যে যায় ডুবে
আভাখানি তার ছড়িয়ে পড়েছে সারাটা আকাশ জুড়ে l
মেঘমালা ঐ হাত ধরে ধরে শূন্য আকাশে ভাসে
লালচে আভায় মেখে গেছে সব কাশবন মেঘাকাশে  l
আলো আঁধারির মায়াবী দোলায় প্রকৃতি মায়ের খেলা
ছায়াপথ জুড়ে অসীম অশেষ শূন্যপথের ভেলা l
পুজো এসে গেছে শরতের শোভা সাজিয়েছে পথ ঘাট
জীবনের গতি বাঁধন ভেঙেছে উৎসবে তল্লাট l
মানুষের ঢল বিপণি বাজারে কেনা বেচা হুল্লোড়
উৎসব রঙ মনে গেঁথে গেছে ক্লাবে ক্লাবে তোড়জোড় l
অসীম নীলিমা অনন্ত পথে গুলে দেয় খুশি রঙ
কাজ অবসানে দেউলে দেউলে ছুটির ঘন্টা ঢং l
মিলে মিশে সব একাকার হয়ে খুশি আনন্দে মাতে
পুজো এসে গেছে পুজো এসে গেছে থাকবো না ডালভাতে l


3. পুজোয় চাই :


পুজোর পোশাক পুজোর খাবার
বছর বছর আসুক আবার l
একেক দিনে একেক সাজ
পুজোয় সবাই পোশাকবাজ  !
পুজোর ক'দিন নতুন সাজে
শহর জুড়ে আড্ডাবাজে
সেজে সবাই ঘুরলো শহর
সাজপোশাকের জবর বহর !!
সঙ্গে খানা পাঁচতারাতে
ঠাকুর দেখে গভীর রাতে l
এই না হলে পুজো কিসে
সাজের চোটে হারায় দিশে !
নবমীটা বিদায় নিলে
সাজপোশাকে পড়বে ঢিলে l
আবার কাজে কর্মে মেতে
উপায় করে হবে খেতে l


4. পুজোয় কেমন :


পুজোয় কেমন ঘুরছি ফিরছি
খাচ্ছি নিজের ইচ্ছেমতো
সাজপোশাকে পরিপাটি
হঠাৎ ঢাকে পড়লো কাঠি l


বৃষ্টি তারও নেইকো বিরাম
ঝমঝমাঝম ঝরছে কেবল
ঢাকের বোলে ড্যাডাং ড্যাং
দীঘির জলে ডাকছে ব্যাঙ l


কোয়াক কোয়াক ব্যাঙের ডাকে
বর্ষাকালের আবহাওয়াতে
সমস্বরে উঠছে হাঁক
পুজোয় বৃষ্টি নিপাত যাক l


ঢাকের বোলে উঠলো ডাক
সবাই এসে প্রসাদ খাক l


5. হঠাৎ বৃষ্টি :


রোদ জ্বল জ্বল সকাল বেলায় হঠাৎ আকাশ কালো
ঝম ঝম ঝম বৃষ্টি ধারায় নিভলো দিনের আলো l  
বৃষ্টি ধারায় বিশাল ফোঁটায় ঝম ঝমা ঝম ঝম
ভিজলো সকল দর্শনার্থী ভিজে আলুর দম l
বৃষ্টিভয়ে পুজোর জোগাড় সাবধানে পা ফেলে
এটা হয় তো ওটা হয় না নাকাল সকল ছেলে l
যাহোক কোনো রকম করে জোগাড় একটা হলো
ষষ্ঠী থেকে আকাশ যেন হাসিতে চমকালো l
কিন্তু এ সপ্তমীর দিনে আবার হলো কি
পুজো এখন সবে শুরু ভুললে চলবে কি ?
এতো এতো আয়োজনের হবে দফা রফা
বৃষ্টি যদি এমনধারা পড়ে কয়েক দফা l
নতুন নতুন পোশাক পড়ে পুজোর সাজে সেজে
চলছে মানুষ পুজোর পথে উৎসাহে সতেজে l
ঘুরে ঘুরে দেখছে ঠাকুর পথে পথে কতো
খাচ্ছে পথে দোকান পেয়ে নিজের ইচ্ছেমতো l
এসব কিছুই পন্ড হবে অকালবৃষ্টি হলে
বৃষ্টি রে তুই যা না বাড়ি আসিস বর্ষা এলে l
বর্ষাকালে মাঠ ভিজাবি ফলবে নতুন ধান
কথা দিলাম তোকে নিয়ে লিখবো নতুন গান l


6. পুজোর এ ক'টা দিন :


মেঘ কেটে গিয়ে দেখো সোনা রোদ উঠেছে
শিউলি ফুলের গাছে থোকা ফুল ফুটেছে l
খোকাখুকু ছুটে ছুটে পূজামণ্ডপে যায়
কুমোর দাদাটা দেখো শেষ পোচ সামলায় l
পুজোর বাজারে সব মেতে গেছে এইবার
এটা কেনো সেটা কেনো দরদাম জোরদার l
পিসি এলো মাসি এলো আরো কতো আসবে
পুজোর এ ক'টা দিন হুল্লোড়ে কাটবে l
দিন যায় মাস যায় কাজ নিয়ে দূরে থাকে
পুজোর এ ক'টা দিন আনন্দ নেয় মেখে l
ঘোরা হবে খাওয়া হবে হবে নাচ গান কতো
মণ্ডপে মণ্ডপে ঠেলাঠেলি খাবে গুঁতো l
সপ্তমী অষ্টমী নবমীর দিনরাত
জেটগতি কেটে যাবে প্রতিদিন প্রতি রাত l
শরতের আকাশটা নির্মল থাকবে
পেঁজা সাদা মেঘগুলো সারারাত জাগবে l
পুজো সংখ্যার ভিড়ে পাঠকেরা যুঝবে  
বইপাড়া ঘুরে ঘুরে শারদীয়া খুঁজবে l
আলো ঝলমল পথে লাখো লোক হাঁটবে
সব শোক ভুলে গিয়ে শুধু খুশি বাঁটবে l


7. মেলা :


এক পা দু পা তিন পা করে চলছে মেলায় বুটুন
চলছে মেলায় পায়ে পায়ে সঙ্গে পোষ্য পুটুন l
পুটুন যে তার ছোট্ট ডগি নিত্য সাথে থাকে
পাড়ায় মেলায় সান্ধ্য পার্কে প্রতি পথের বাঁকে l
মেলায় চলে ছোট্ট বুটুন সঙ্গে বাবা মায়ে
সঙ্গে দিদি বন্ধু ক'জন লেপ্টে গায়ে গায়ে l
পুজোর মেলা দীঘির পাড়ে বিশাল আয়োজনে
চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় এবং প্রসাধনে l
খেলনাপাতি বাসনকোসন নিত্য প্রয়োজনের
রাইডে চড়ে হরেক রকম আজব আয়োজনের l
ভেলকিবাজি সাধুবাজি ভাগ্য মেলাও খেলা
বুটুন ঘোরে সারা মেলা ঘোরে সারা বেলা l
হঠাৎ মাইকে ঘোষক বলে দয়া করে শুনুন
একটি ছেলে খোয়া গেছে নামটি যে তার বুটুন l
বুটুন দেখে একলা যে সে মা বাবা নেই পাশে
বন্ধুরা সব তারাও হাওয়া পুটুন শুধু কাছে l
শব্দ ধরে বুটুন পুটুন সব পেয়েছির দেশে
দীঘির পাড়ে শীতল বাতাস মেলায় তাদের হেসে l
মেলা মানে হারাই মিলি চিন্তা খুশির দোলার  
সারা বছর হিসেবী মন মেলায় হিসাব ভোলার l


8. নকল :


কিনলো পুজোয় মস্ত দেখে দোনলা এক বন্দুক
খেলনা হলেও আকার প্রকার দেখে কাঁদে এ বুক l
নাছোড়বান্দা বুটুন সেটা আদায় করে ছাড়ে
বিবশ বাবা কি করে আর হাজার টাকা ঝাড়ে l
বন্দুকের যে রকম সকম গুড়ুম গুড়ুম গুলি
এ পাড়া আর ওপাড়াতে ছোটে ছেলেগুলি l
ছেলের দলে সেরা ছেলে বুটুন ছাড়া কে আর ?
বন্দুকটা তার সুনাম রাখে কারণ হাজার টাকার l
বাকিগুলো দু দশ টাকার এ হাত ও হাত চলে
হাজার টাকার বলে এটা এক হাতেতে খেলে l
সেই দোনলার গুলি ছোটে নদী পাহাড় বনে
আবার ছোটে পথে ঘাটে ক্ষণে প্রতিক্ষণে l
পুজোয় নতুন জামা জুতো এ সব কিছুর স্থানে
বুটুন এবার জেদ ধরেছে বন্দুকে মনপ্রাণে l
ভীষণ খুশি সেটা পেয়ে পেয়ে গেছে সকল  
ছেঁড়া জামা জুতোয় করে গব্বর শিং এর নকল l


9. আনন্দ নেয় গায়ে মেখে :


ছাদে এবং নিজ উঠানে
দিদি সবার মনকে টানে
অঞ্জলিটা দিতে যাবে
সেটা দিয়ে প্রসাদ খাবে l
পুজোয় ঘুরে ঠাকুর দেখে
আনন্দ নেয় গায়ে মেখে l
ঠাকুর দেখতে খুঁজে পায়
কোথায় আছে প্রাণের ভাই l
তারা কোথায় করছে কি যে
ছবি তোলে নিজে নিজে
হোয়াটস্যাপে পাঠায় ছবি
প্রাপক প্রেরক সবাই কবি  !


10. অশ্রু :


আজ নবমী তাই আকাশের মুখ ভার
বৃষ্টি তো নয় অশ্রুজল তা মা মেনকার l
বছরের দিন উমা মাতৃগৃহে এসে
সন্তান সহ থাকে সুখে ভালোবেসে l
সাথে থাকে বাহন যতো, মহিষাসুর
দেবীর পূজায় পূজা প্রাপ্তি সব দেবাসুর l
গিরিরাজও কন্যা অন্ত প্রাণ, তাই কাঁদে
নবমীর দিন গেলে কন্যা বিদায় ফাঁদে l
চারদিন সুখে, ষষ্ঠী থেকে যায় নবমী
সরস্বতী লক্ষ্মী কার্তিক নয় একদমই
খুশী তারা দশমীর এই বিদায় বেলায় l
কিন্তু বিধি ! খন্ডাবে কে তা ? নিরুপায় l
দশমীতে যাবার জোগাড় হলো শুরু
বিদায়ব্যথায় সজল মেঘের গুরু গুরু
তাই তো বৃষ্টি পড়ছে দেখো ঘন ঘন
কন্যা বিদায়, মায়ের ব্যথার অশ্রু যেন l


11. জয় দুর্গা মাই :


আজ দশমী
আজকে উমার বাড়ি ফেরার দিন,
হিমালয় পর্বতে আজ
মেনকার নাই কোনো কাজ
সকাল থেকে বিষন্নতা
মাথাতে ঝিন ঝিন l


ছেলেপুলে সঙ্গে নিয়ে
বাপের বাড়ি এই তো ক'টা দিন,  
হিমালয়ের খুশির পারা
বৃষ্টিরূপে অঝোর ধারা
সেই ধারাতেই দুঃখ ঝরে
বিদায়বেলায় দশমীর এই দিন l


সারা বছর দুঃখে সুখে
ভোলা শিবের ঘরণী সে
কৈলাশের ঐ পর্বতে তো
এই আছে এই নাই,  
চারটি দিনে মেয়েকে পেয়ে
আনন্দে যায় সময় বেয়ে
আসছে বছর আবার হবে
জয় দুর্গা মাই !!


12. পুজোর খাওয়া :


ক'দিন ধরে খেয়ে যাচ্ছি খাচ্ছি বসে সারাদিন
পেটটা ফুলে ঢোল হয়েছে বাজছে পেটে তাধিন ধিন
পুজোর ছুটি সেই অবসর রকম সকম খাবার পাই
যাচ্ছি খেয়ে যা পাচ্ছি তাই আর তো কোনো কাজ নাই l
খাচ্ছি বসে নিজের বাড়ি খাচ্ছি কুটুমবাড়িতে
বন্ধু স্বজন পাড়ায় পাড়ায় খাচ্ছি মুখ ও দাড়িতে l
খাচ্ছি মিষ্টি ঝালও খাচ্ছি নোনতা টকে বিরাম নেই
টাটকা বাসি নেই অরুচি ঠান্ডা গরম চলছেই l
বাড়ির রান্না টাটকা তাজা কিম্বা কেনা দোকান থেকে
পাচ্ছি যখন পুরছি তুলে গবগবাগব সেটাই মুখে
এই ক'দিনে বেশ হয়েছি বাবু আমি নাদুসনুদুস
মধ্যপ্রদেশ জেগে ওঠে উঠতে বসতে হাপুস হুপুস l


বাবা বলেন পুজোর পরে উপোস হবে নির্জলা
এমন নিদান শুনে আমার চাপ হয়েছে ঢোক গেলা l


13. শারদীয়া নং তং : যাদব চৌধুরী


শরৎকালে শারদীয়া যতো নং তং সমাহারে
ভক্তবৃন্দ মানুষ যতো বিরাজিত চরাচরে
দুর্গা লক্ষী কালী মাতা সকল দেবী শরনং
শারদীয়া কোজাগরী দীপাবলী বরনং
রাত্রি জেগে ঠাকুর দেখা দোকানে খাবার গ্রহনং
টো টো করে গোটা রাতে সারা শহর ভ্রমনং
চরকি ঘোরে পটকা ফাটে তার মধ্যে চলনং
বন্ধুর সাথে পরিবারে দল করে ঘুরনং
বাচ্চা নারী ভয় পেয়ে কানে আঙ্গুল দিবিতং
চকলেট বোমা বহুত শব্দে রাস্তার মধ্যে ফাটিতং


পূজার ছুটি একমাসে অনেক পূজা পাবিতং
মহালয়া থেকে শুরু হয়ে পরপর ধাবিতং
দিনে রাতে সকল সময় কেবল খুশি পাবনং
পূজা শেষে ঠাকুর মূর্তি নদীর জলে বিসর্জনং
শোভাযাত্রায় নাচের তালে অনেক খুশি মিলিতং
রাস্তার ধারে কতো মানুষ তাদের খুশি দিবিতং
বাচ্চা বুড়া জোয়ান ছুঁড়া সবাই দলে থাকিতং
নারীশক্তি কম কিসে তারাও ভিড়ে নাচিতং
বছর বছর প্রতি বছর এই খুশি মিলিতং
দেবী দেবী যতো দেবী মর্তে নেমে আসিতং


14. আলো রে তুই :


দীপাবলীর আঁধার রাতে
নেইকো আলো যার বাড়িতে
তারসকলের ক্রমিক ক্ষয়ে
হঠাৎ আলোর বিপর্যয়ে
বাড়ি জুড়ে আঁধার নামে
অমানিশার ঘন যামে l


পাড়া জুড়ে আলোর বহর
প্রতি ঘরে আলো জ্বলে
কেবল আঁধার একটি ঘরে
বাড়িয়ালার কর্মফলে l


সেই সেবছর বহু আগে
তখন চালু মন্দ তারে
আলোর সেটিং করলো যারা
সেটাই এখন এদের ঘাড়ে l


দক্ষ লোকের বাড়ি আসায়
স্বপ্ন দেখে আলোর আশায়
করছে সারাই নিয়ে যতন
আলো রে তুই আয় বাবাধন l


15. শহর গ্রাম কাঁপে বোমায় :


ফাটছে বোমা ফাটছে বাতি
দীপাবলীর সারা রাতই l


পাড়া এবং বেপাড়াতে
পথের পাশে পথের মাঝে
ফুটছে বোমা বেদম জোরে
সকাল দুপুর এবং সাঁঝে l


প্রশাসনের দাবি তারা
সফল শব্দ যোগবিয়োগে
কিন্তু মানুষ ভুগছে দেখো
শ্বাসের কষ্ট কানের রোগে l


নিয়মটুকু করে দিয়ে
শাসন ঘরে শুয়ে ঘুমায়
দিবসরাত্রি শব্দ ধোঁয়া
শহর গ্রাম কাঁপে বোমায় l


দিনে দিনে প্রতিদিনে
পরিবেশের হচ্ছে ধোলাই
প্রকৃতিকে মেরে দিয়ে
আলতো করে আদর বোলাই l


মানুষ মরে নিজের দোষে
দায়ী করে অন্যজনে
দুঃখ ভীষণ আসবে নেমে
আনন্দের ঐ চোরা টানে l