1. সংখ্যায় অন্ধ : যাদব চৌধুরী


এ্যাই ভাই শোন্ তো
এক থেকে পঞ্চাশ
ধীরে ধীরে গোন্ তো !


কি বললি ? তোর ঘরে
কেউ যদি গোনে কিছু
তাকে এসে ভূত ধরে ?


যতো তার গোণা হয়
একে একে ভূতগুলো
এসে নাকি জমা হয় ?


বাবার ঠাকুরদার ?
দশ ভূত ভেঙেছিল
ঠ্যাঙ দুইখানা তার


এক দুই বলা যেই
দুই ভূত কিম্ভূত
জুড়ে নাচ ধেই ধেই ?


সেই থেকে এই ঘরে গোণা কাজ বন্ধ
প্রাণটুকু থাক বেঁচে, থাক সংখ্যায় অন্ধ l


** সম্পর্কের শিকড় পাবলিকেশন থেকে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ও অজয়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী সম্পাদিত - ভুত যখন ভূতকে ধরে - সংকলনে ২০২১ প্রকাশিত, পাতা - ৭৪


2. ভূতের আইন : যাদব চৌধুরী


ভূতের রাজ্যে জারি হলো
নতুন রকম আইন
কবিতা গদ্য চলবে না আর
লিখলে জারি ফাইন ।
ভূতের রাজা ভূতের মন্ত্রী
চালান ভূতের দেশ
কবি ভূতের নেই কোনো কাজ
লেখায় ছড়ায় দ্বেষ ।
যতো কর্মী ভূতের দেশে
দিবারাত্র খাটে
লেখক ভূত কাগজ জুড়ে
আবোল তাবোল লেখে ।
কবিতা গদ্য পড়ে পড়ে
অলস হচ্ছে সবাই
ভূতের রাজা দিলেন বিধান
ভাঙলে পরে জবাই ।


3. তিনপূর্নির ঘাটে : যাদব চৌধুরী


শুনছি নাকি বলছে সবাই
তিনপূর্নির ঘাটে
সূর্য ওঠে সকাল বেলায়
সন্ধ্যা হলেই পাটে ।


আকাশ যখন ঘন কালো
বৃষ্টি ঝরে পড়ে
মাঝে মাঝে বাজের চমক
ভয়টা ধারায় ধরে ।


জ্যোৎস্না রাতে ভুবন জুড়ে
মনমোহিনী রূপ
অমাবস্যার রাতে আবার
আঁধার ছড়ায় ধূপ ।


সেখানে নাকি শ্যাওড়া গাছে
ভূতেরা সব আছে
প্রকৃতি মাঝে ওলটপালট
তারাই করে থাকে ।


4. ভূতের কালী পূজা : যাদব চৌধুরী


ভূতের হলো শখ ভীষণ
করবে কালী পূজা
জীবিতকালে করেছে যা
বাজা রে বাজনা বাজা


ভূতের জন্য ভূত কালী
গড়লো কুমোর ভূতের
সেই কালী কাঁধে চড়ে
এলো ভূতের পূতের ।


চোদ্দো শাকে শাকচুন্নী
রাঁধেন রান্না আজও
মামদো ভূতে ঢাক বাজায়
বেম্মদত্যি পূজো ।


জোনাক ধরে আলোকসজ্জা
করে যুবক ভূতে
প্রসাদ সাজায় পেত্নীসকল
ধরে মানুষ পূতে ।


পূজা অবশেষে
বিসর্জনের হাটে
ভূতের কালী বিসর্জিত
তিনপূর্ণির ঘাটে ।


5.  ভূতকে ভীষণ ভালোবাসি : যাদব চৌধুরী


ভূতকে ভীষণ ভালোবাসি
ভয় পাই না মোটে
ভূতের কথা ভাবলে পরে
কবিতা ছড়া ছোটে ।
আছেন কিছু বন্ধু আমার
লেখেন ভীষণ ভালো
ভূত বিষয়ে ছড়া কবিতা
দারুণ জমকালো ।
আঁধার রাতে টিপির টিপির
বৃষ্টি যখন নামে
হঠাৎ আজব শব্দ আসে
পরিবেশ ছমছমে ।
কালো বিড়াল পথ কেটে যায়
আশঙ্কা অজানা
ছায়ামূর্তি আজব রকম
আঁধারে দেয় হানা ।
এমন নানা পরিস্থিতি
লেখার মাঝে আসে
ভূতের ছড়া গল্প বই
পাঠক ভালোবাসে ।
পড়ি ভূতের ছড়া গল্প
ভালোবাসা বাড়ে
ভূতের সাথে পরিচয়ে
ভয় পিছন ছাড়ে ।


6. ভূত গেলো বাজারে : যাদব চৌধুরী


ঘুটঘুটে আঁধারে
ভূত গেলো বাজারে
শ্যাওড়ার তলাতে
পুরো ভাঙা গলাতে
কেনাবেচা চলছে
ভূত কথা বলছে ।
মাছ খাবে পেত্নী
আবদার আজ তার
এদিকে সবার কাছে
ভূতের রয়েছে ধার ।
নগদের টাকা চাই
নাহলে তো মাছ নাই
তাই এক বুড়োকে
দেয় ঘাড় মটকে
কুড়ি টাকা পকেটে
সেই টাকা ফোকটে
মাছ পায় ভূত টা
সাথে পেত্নীর মন টা ।


7. ভুতুড়ে বাড়ি : যাদব চৌধুরী


আঁধার রাতে পোড়ো বাড়ির
দরজা খোলে ক্যাঁ..উ
হুমদো হুলো কালো বিড়াল
আওয়াজ করে মিয়াও ।
ঘরের কোণে ছায়ামূর্তি
পষ্ট দেখে চোখ
ঝাপটা মাড়ে আদুর বাদুড়
হিংস্র দন্ত নখ ।
জাল ছড়িয়ে মাকড়শারা  
প্রাচীর গেছে তুলে
যতো রাজ্যের ভূত বাবাজি
জুটেছে দলবলে ।
বাতিল ঘরে রাজ্যপাটে
তাদের দখলদারি
মালিক হঠাৎ এক রাতেতে
আসে নিজের বাড়ি ।
ভূতে মানুষে মালিকানার
লড়াই চলে জোর
লড়তে লড়তে রাত্রি কাবার
রাত্রি শেষে ভোর ।
দখলস্বত্ত্বে ভূতের বাড়ি
কাগজস্বত্বে কার
ভয়ঙ্কর সেই রাত্রিজুড়ে
বিচারটা হয় তার ।


8. রাতদুপুরে : যাদব চৌধুরী


রাতদুপুরে মাঝপুকুরে
উঠলো একটা ঢেউ
বোয়াল মাছে চড়লো গাছে
দেখলো না তো কেউ ।


সেই গাছেরই ঠিক ওপরই
থাকতো একটা ভূত
ভূতের দেশে মাছের পেশে
খুশি ভূতের পূত ।


ছোটো সংসার ঘরকর্নার
নেইকো কোনো খুঁত
মাছটি রাঁধেন ভূতের বেগম
মাছ খায় তার পূত ।


9. ভূতেরা আন্দোলনে : যাদব চৌধুরী


রাত মাঝবেলাতে শ্যাওড়া গাছতলাতে
ভুতেদের বসলো মিটিং
ইসু বড্ড জবর পেপারে দিয়েছে খবর
তা নিয়ে তাইতো সিটিং ।
শ্যাওড়া প্রান্তরেতে যেখানে ভুতেরা মেতে
তা হবে জবরদখল
জমিতে পড়েছে টান  মানুষের তাই অভিযান
গড়বে আবাস সকল ।
ভূতেদের মুখিয়া যিনি কর্তা শাঁকচূন্নির
বললেন বিশদে টানা  
ভূতেদের দখল কেড়ে জমিটা নিবে ঝেড়ে
এ তো ভাই যায় না মানা ।
যুগ যুগ অতীত থেকে এ জমি তাদের বটে
এখানে বসত তাদের
এ জমি ছাড়বো নাকো হার তো মানবো নাকো
দেখি জয় হয়টা কাদের ?
সুতরাং তৈরি থাকো লড়াইএর ছকটা আঁকো
এ লড়াই বাঁচার লড়াই
বললো বাকি ভূতেরা এ জমি যাবে না ছাড়া
আছি আছি সাথে সবাই ।
মানুষের বুদ্ধি বিকার ভূতেদের কাড়ে অধিকার  
কেড়ে নেয় বাস্তুভিটা
শ্যাওড়া গাছতলাতে হাতে হাত ধরলো সাথে
যতো সব ভূতের বেটা ।
এ লড়াই চালিয়ে যাবো মানুষের মুন্ডু খাবো
শিক্ষা দিতেই হবে
ঘুঘু দেখেছে ফাঁদ দেখেনি টেরটা পাবে তখনি
যখন প্রাণটা যাবে ।


10.  ভূতের কথা : যাদব চৌধুরী


ভূতের কথা শুনলে পরে
শিউড়ে উঠে গা
গল্পে পড়া ভূতগুলো সব
এবং তাদের ছা
রাত দুপুরে শ্যাওড়া তলায়
কিংবা ঝোপের অাড়ে
বৃষ্টিবাদল নিঝুম রাতে
বিজন পথের ধারে
যতো রাজ্যের ভূতগুলো সব
বইএর পাতা ছেড়ে
ঘাড়গুলো দেয় মটকে এসে
জানগুলো নেয় কেড়ে ।


11. বাপরে কি দাপ / যাদব চৌধুরী


বাপরে কি দাপ
করেছি কি পাপ
কতো কতো ভূতে মিলে
জাতে ভাতে মিলে গিয়ে
রাত্রিটা কাঁপালো
গোটা ঘর দাপালো ।


আন্নাকালি শ্যাওড়া গাছে
মেছোভূত পুকুরজলে
ব্রহ্মদত্যি পৈতে কানে
মামদো ভূত সদলবলে
একানড়ে, কন্ধকাটা, বেতাল, কালাভুলো
নিশিভূতকে সাথে নিয়ে আমার ঘরে এলো।


রাত্রিজুড়ে করলো তারা আমার ঘরে ফুর্তি
ছুঁড়লো ঘরের জিনিসপত্তর যেন রুদ্রমূর্তি
ঘুমের ভানে চুপটি করে
প্রাণটা নিজের ভিতর ধরে
দেখি তাদের নক্সাকদম তাদের সমাজরীতি
খেলা খাওয়া বিরোধ বিচার বিচ্ছেদ ও প্রীতি ।


কখন যে ফের সকাল হলো ঘুম ভাঙল যেই
দেখি চেয়ে ঘরের জিনিস নিজের জায়গাতেই ।


12. ন্যাড়া বেলতলায় : যাদব চৌধুরী


ভূতের দেশে যাবেই যাবে
অটল ন্যাড়ার পণ
বেলের তলার কথামালা
ভাঙবে বিলক্ষণ ।


রাতদুপুরে শ্যাওড়াতলায়
ন্যাড়ার পদার্পন
পেত্নী করে স্বাগত তাকে
হেসে ভোলায় মন ।
মামদো ছিলো ছাতিম গাছে
তরতরিয়ে নামে
শাঁকচুন্নি ঝোপের অাড়ে
কাজ করে আর ঘামে ।


স্কন্ধকাটা দিঘীর পারে
জাল ছড়িয়ে মাছ মারে
ধরে মেছোভূত
ভূতের ছানা বোম্বাকাঁটা
আরো কি সব ফুটাফাটা
ন্যাড়ার পাশে নাচতে থাকে
যতো ভূতের পূত ।


আদরে আর আপ্যায়নে
ন্যাড়ার খুশি বাঁধ না মানে
খেল ভূতের মাছ
হলো জবর নাচ ।


কিন্তু এটা বুঝলো না সে
ঘরেই সে তো রাত্রিশেষে
নিজের বিছানায়
কোথায় গেলো ভূতের সে দেশ
শ্যাওড়াতলা, আনন্দ রেশ
কোন্ বেলতলায় ?


13. জনা কয় পাবে দন্ড : যাদব চৌধুরী


আঁধার রাতের নিশুত ক্ষণে পা টিপে টিপে ঐ
কলঘর পাশে এসে হলো জমা ভূত কিছু  নিশ্চয় l
নানা নামে তারা পরিচিত জানি মানবসমাজ মাঝে
তবু তারা সব বিভেদটা ভুলে এক হলো শুভকাজে l
ইদানিং দেখে মানুষের পুত ভূতকে পায় না ভয়
এ কেমন জ্বালা ছেলেপুলেগুলা বিপথেই নিশ্চয় l
দাদু দিদা যতো সাত পুরুষের ভূতকে পেয়েছে ভয়
আজকের শিশু জন্মেই যীশু নাস্তিক হয়ে রয় l
তারা জানে ভূত নাই কোনোখানে শুধুই মনের ভ্রম
এ কি কথা হায় ভূতেরা তাহলে করে কি পন্ডশ্রম l
আজ কলঘরে জমা হয়ে তারা দুঃখের কথা বলে
মানুষের ভয় বড়ো দরকার ধরায় টিকতে হলে l
জমা হয়ে আজ ঠিক হলো তাই জনা কয় পাবে দন্ড
কলঘরে ধরে ঠিকঠাক করে ঠুকে দাও কিছু মুন্ড |


14. এপিঠ ওপিঠ : যাদব চৌধুরী


ভূতকে কেবল ভয় পেয়ে যাই ভিত্তি নেই তো এই ভয়ের
যতোই ভূতকে জানবো আমরা পাবো বুদ্ধি ভয় জয়ের l
অনেক ভালো মানুষ যেমন তেমনি অনেক ভূত ভালো
মানুষেও তো খারাপ থাকে এমন কিছু ভূত কেলো l
ভালো মানুষ মরেন যাঁরা ভূত হিসাবে তাঁরা নরম  
পাজি নচ্ছার মানুষ যতো ভূতের রাজ্যে দেখায় গরম l
ভূতের রাজা দিলেন বিধান মানুষ তাকে আঘাত নয়
তাঁদের কোনো ক্ষতি নৈব মানুষ থেকেই ভূত হয় l
তবু রাজার বিধান ভেঙে বিচ্ছু কিছু পাজি ভূতে  
কেবল শুধু মানুষ ডরায়, রাজার কানেও খবর ছোটে l
বিচার চলে বিচারশালায় ভূতের রাজা কঠিন তাই
মানুষ জ্বালায় যে ভূতসকল কঠিন কঠোর শাস্তি পায় l


তাই তো বলি মিথ্যে শুধু ভূতকে কেন ভয় পাওয়া
মানুষ ও ভূত এপিঠ ওপিঠ এপার ওপার আসা যাওয়া l


15. আম ভূত : যাদব চৌধুরী
(** শব্দলিপি প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা উৎসব ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত)


ভূত দেখেছে ছোট্ট বুটুন আজ সকালে সত্যি
দিব্যি দিয়ে বলছি কথা মিথ্যে নয় এক রত্তি ।
ঝড়বাদলে রাতের শেষে আম কুড়াবার ধুমে
বস্তা ঝুড়ি নিয়ে তারা আমবাগানে জুমে ।
উড়লো ধুলো উড়লো বালি উড়লো কতো কিছু
জোর বাতাসে আমের পতন কুড়ায় যতো শিশু ।
আম কুড়ালো শিশু বুড়ো এ পাড়া ও পাড়ার
সবার হাতে আমের ঝুড়ি লড়াইটা আম কাড়ার ।
এই বাতাসে সব উড়ে যায় দুলছে ডালের সারি
ধপ ধপা ধপ আমের গুটি পড়ছে বোঁটা ছাড়ি ।
আলোর ঝলক জলের ফোঁটা শুকনো পাতার ঝড়ে  
ধুলোবালি উড়ছে কতো সবার দেহের পরে।
ধুলোবালি কালিঝুলি মেখে একাকার
ভূত ভূত ভূত ভূত হলো সব মানুষ কেউ নয় আর ।
সোঁ সোঁ শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বুটুন আসে এদিক  
সামনে দেখে একশো ভূতের আম কুড়ানোর হিড়িক ।


16. ভূতের হোলি : যাদব চৌধুরী


খেলছে হোলি ভুতেরা সব মানুষ সেজে দেখো
রঙ বেরঙের সঙ সেজেছে বড়ো মেজো ছোটো ।  
বোতলে রঙ ভরে তারা নাচের তালে তালে
এ পাড়া ও পাড়া ঘোরে রঙের ছিটা গালে ।
ঘুরে ঘুরে দেখে তারা মানুষরও হোলি
মানুষগুলো ভূত সেজেছে সকল অলি গলি ।
কে যে আসল কে যে নকল বড্ড ভুলের বিষয়
ভুতেরা কি মানুষ হলো নাকি মানুষ ভূত হয় ।
গানের সুরে বাজনা দোলে 'হোলি হ্যায়' রব তুলে
বসন্তে আজ মেতেছে সব সব বেদনা ভুলে ।
কাজের তাড়া নাই তো এদিন নাইকো চাপের পড়া
যা খুশি তাই সেজেগুজে শুধুই পথে ঘোরা ।
কালি ঝুলি হলুদ সবুজ রঙের আড়াল থেকে
মানুষ তারা অথবা ভূত ? কঠিন বলা কি কে !
রোদ উঠেছে রঙ ফুটেছে হাসছে সবাই তারা
আজ হোলিতে ঘরে কেন বাইরে এসে দাঁড়া !


পিচকারিতে রঙ ভরেছে ছুটছে জলের কামান
অনেক হলো সন্ধ্যে হলো এবার তাদের থামান ।


17. ভূতের ভোজ :  যাদব চৌধুরী


শ্যাওড়া গাছের উঁচু ডালে তিনটে ভূতের বাস
সন্ধ্যা হলে মানুষ পেলেই করে সর্বনাশ ।
ওই ওখানে তিনটে ভূতের ঝগড়া শুরু রোজ
সন্ধ্যা হলে মানুষ মেরে যেই শুরু হয় ভোজ ।
বাবা ভূতের আজব খিদে পিন্ডি চটকে খান
মা ভুতানির নরম হৃদয় হৃদয় খুঁজে যান ।
ছোট্ট তাদের ভূতের পোলা যেই নেড়েছে মুখ
মায়ের হৃদয় দুলে ওঠে তাই দেখে পান সুখ ।
সবাই জানে শ্যাওড়া গাছে ভূতের এই বিষয়
সন্ধ্যা হলে এই এলাকায় নামে ভীষণ ভয় ।
কেউ আসে না শ্যাওড়া গাছের পাশের পথে আর
ভুলের বশে আসে যারা তারাই পগার পার ।
তিনটে ভূতের পরিবারে মানুষ খাবার খোঁজ
সন্ধ্যা হলেই শিকার ধরে মানুষ মেরে ভোজ ।


18. ভূত প্রেমিক : যাদব চৌধুরী


ভূতেরা সব পেত্নী নিয়ে
ঘর সংসার করে
পাড়ার মোড়ে আবাস তাদের
পুরনো এক ঘরে l
কিন্তু সে এক পাজি ভূতের
স্বেচ্ছাধারী বরে
করলো বশে মানবী এক
মনের আপন করে l
বছর বছর বহু বছর
চললো প্রেমের খেলা
কেমন করে পেত্নী যেন
টের পেলো শেষ বেলা l
তার ধমকে তার চমকে
ভূত ঘরের ভেতর
সুন্দরী আর পায় না প্রেমিক
জ্বলে ভেতর ভেতর l
তাই তো এসে ধর্ণা দিয়ে
ভূতের বাড়ির কাছে
ঠায় দাঁড়িয়ে সুন্দরীটা
সকাল থেকে আছে l


ভূতের প্রেমে মানুষ পাগল
কেমন আজব শুনি
এমন যদি চলতে থাকে
ভীষণ প্রমাদ গুণি l


19. নিগ্রহ : যাদব চৌধুরী
(আজকাল উত্তরণ এ প্রকাশিত)


ভূতের ছড়া লিখবো বলে যেই নিয়েছি কলম খাতা
তিনটা ভূতে জটলা করে শুরু করলো বেদম যা তা l
বোম্বাকাটা খাতা টানে মেছো ভূতে কলম কাড়ে
মামদো ভূতের নৃত্য শুরু পড়ে এসে আমার ঘাড়ে l
বলি তাদের ঠান্ডা মাথায় - লেখার সময় এটা আমার
তারা এখন বিদায় নিলে লিখতে পারি ভূতের গ্রামার l
ভূতের ছেলে মেয়ে যতো পড়াশোনা ইস্কুলেতে
তাদের জন্য গ্রামার বই লিখতে হবে আজকে রাতে l


তাদের ভালো হবে এতে বোঝাই তাদের বারে বারে
- আমরা তো সেই ছেলে মেয়ে বই এর বোঝা দিচ্ছ ঘাড়ে ?
- পড়বো না তো ইস্কুলেতে খেলবো শুধু মাঠে ঘাটে
লিখবে যারা বই আমাদের থাকবে নাকো এ তল্লাটে l
এমন পিটন দেবো তাদের ভাঙবো মাথা ভাঙবো কলম
এমন ব্যথা দেবো শোনো যে ব্যথাতে নেইকো মলম l


তিনটা ভূতে জটলা করে ভাঙলো আমার লেখার টেবিল
ফোন করে যে ডাকবো পুলিশ ছিঁড়লো আমার ফোনের কেবল্ l
ভূতের ভালো করতে গিয়ে ভূতের হাতে নিগৃহীত
রকম সকম তাদের দেখে হলাম আমি ভীষণ ভীত l
শুনলো নাকো আমার কথা তিনটে ভূতে নৃত্য করে
খাতা কলম ফেলল ছুঁড়ে যতো ছিলো আমার ঘরে l


20. ভূতেরা কি জিনিস : যাদব চৌধুরী


তিনটা ভূতে জটলা করে শ্যাওড়া গাছের তলে
এবার ভোটে লড়বে তারা নতুন তৈরি দলে l
দলে থাকবে সকল ভূতের আপন প্রতিনিধি
দল চালাতে গড়বে তারা নতুন কিছু বিধি l
ভোটের আগে করবে প্রচার সব এলাকায় গিয়ে
সামনে আনবে বিষয়গুলো সাধারণ ভূত নিয়ে l
ভূতের যতো দুঃখ কষ্ট যতো অসুবিধায়
সব হবে দূর ভোটটা দিলে তাদের বিনা দ্বিধায় l


একটি ক্ষেত্র স্পষ্ট করে বলবে সব মিটিংএ
মানুষ জাতের বিরুদ্ধে আজ জোর দিবে সেটিং এ l
মানুষগুলো বড়োই পাজি বিজ্ঞানের দৌলতে
বলে কিনা ভূত বলে আজ নাই কিছু জগতে l
যতো সকল আঁধার জমি খানা খন্দ যতো
উন্নয়নের নামে ভরে আলো দিয়ে শত l


এই পৃথিবীর মলিক কিন্তু একা মানুষ নয়
ভূতের আছে সমান দাবি এটা সুনিশ্চয় l
মানুষ কিন্তু মানছে না তা ভাঙছে বিধির বিধান
জবরদখল রুখতে হবে জবর প্রতিবিধান l
ভোটের ফলে আসে যদি তারা শাসকদলে
উন্নয়নের ফলবে ফসল সকল ক্ষেত্রফলে l
সার্জিক্যাল এর আক্রমণে মানুষ হবে ফিনিস
টেরটি পাবে সকল মানুষ ভূতেরা কি জিনিস l


21. ভূত চাপলো ভূতের মাথায় : যাদব চৌধুরী


হঠাৎ সেদিন তিনটি ভূতের
ভূত চাপলো মাথায় ভোটের
নিত্যদিনই দেখছে তারা
মানুষসকল সর্বহারা
কিন্তু যারা ভোটে জেতে
ক্ষমতা বিত্ত তাদের হাতে
যা খুশি তা করে তারা
বাকি মানুষ সর্বহারা
কিন্তু কিছু ভোটের নীতি
যাকে বলে রাজনীতি
হাসিল সেটা করতে হবে
রাজ সিংহাসন মিলবে তবে


তিনটা ভূতে মিটিং করে
যাবে তারা সবার ঘরে
স্বপ্ন ফেরি করবে তারা
থাকবে না কেউ সর্বহারা
সকল ভূতের সুখের দিন
আসবে নেচে তাধিন ধিন
যদি তারা ভোটে জেতে
ভাসবে স্বদেশ খুশির স্রোতে
সকল ভূতের মিলবে কাজ
আসবে দেশে স্বর্গরাজ


- সত্যি সত্যি করবে কি তা ?
আমরা তবে চাটবো সূতা ?
একটি ভূতের প্রশ্ন তুণ
ভূতের নেতা হেসেই খুন
- করবো কি তা আমরা জানি
করবো শুধু রাহাজানি
কিন্তু জানি ভোটের আগে
এসব কিছু বলতে লাগে
জ্যান্তকালে দেখেছি তো
নেতাদের সব ছল ও ছুতো
সে রাজনীতি আপন করে
সকল বিত্ত নিজের ঘরে


22. তিন ভূত কিম্ভূত : যাদব চৌধুরী
(** ভূত কুটুম সংকলন ২০১৯ বইমেলা প্রকাশিত)


তিন ভূত কিম্ভূত
বাকি তিন জ্যান্ত
মাঝরাতে প্যান্ডেলে
শিষ্ট ও শান্ত ।
হাসিমুখ ছয় ভূত
আলোকের ঝর্ণা
হাতধরে পাশাপাশি
দাঁড়িয়েই ধর্ণা !
ঐক্যবদ্ধ তারা
কি জানি কি চাইছে
সুর তাল এক করে
অধিকার গাইছে ।
ভূতে কোনো ক্ষতি নেই
মানুষের মিত্র  
শারদীয়া উৎসবে
মেলে জাত গোত্র ।


23. ভূতকে পাই না ভয় :


ভূতকে আমি পাই না মোটেই ভয়
যদি থাকে আমার সাথে জনা পাঁচ ছয় ।
আঁধার রাতে কবরখানায় যাবোনা তো একা
তাই বলে কি ভাবছো আমায় ভীতু ?
দিনদুপুরে হাটের মাঝে চাও দেখতে ?
ভূতকে আমি পিটিয়ে করবো ছাতু ।


শুনেছি ঐ ভাঙা পোড়ো বাড়ি
গভীর রাতে বৃষ্টি বাদল দিনে
সেইখানেতে ভূতেদের আস্তানা ।
- অমন স্থানে যাবোনা তো আমি ।
আসুক না ভূত আমার কাছে নিজেই
যখন আমি আছি হয়তো ভিজেই
বাবা আছেন মাও থাকেন সাথে
থাকেন কাকা আরও কতো আপন
সবার সাথে করি যখন গল্প
আসুক না ভূত সাহস করে
দেখবে মজা তিনপূর্নির ঘাটে
ভূতের ব্যবসা উঠিয়ে দিবো লাটে l


24) ভূত কি হয় সত্যি ?


ভূত কি হয় সত্যি ?
মানো কি এক রত্তি ?


দেখি না তো ভূত কখনো পড়ি শুধু গল্প
ঘুরে ফিরে একই কথা বানানো রূপকল্প !
কতো সব ভূতের ছবি আঁকেন শিল্পীজন
রোমহর্ষক ভয়ঙ্কর নির্জন বিজন ।
গল্প হলেও সত্যি বলে চালান কতো তত্ত্ব
ন্যাকামোর রকম দেখে জ্বলে গা পিত্ত ।


কিন্তু যখন নিশুতি রাতে হাওয়ায় কাঁপন ওঠে
অদ্ভুত সব শব্দগুলো দিগ্বিদিকে ছোটে
অন্ধকারে জ্বলে ওঠে হঠাৎ কারো চোখ
ছায়ামূর্তি ঘাড়ের কাছে এমনটা হয় বোধ
সারা শরীর কেঁপে ওঠে অজানা এক ভয়ে
এই বুঝি ভূত চাপলো ঘাড়ে আতঙ্ক হৃদয়ে ।


ভূত নেই এই কথাটা তখন কি আর মানার ?
টিপির টিপির বৃষ্টিতে যে বুক ঢিপ ঢিপ আমার ।
কখন আছি সদলবলে কখন আমি একা
কখন আছি আলো ঝলমল অন্ধকারে বোকা ।
সেই হিসাবে ভূতের তত্ত্ব হাজির করি আমি
আসলে ভূত আছে কি নেই জানেন অন্তর্যামী ।


25) দুই ভূত কিম্ভুত :


কেউ কেউ পেরে যায় অনেকেই পারে না
সবকিছু জানে বুঝে তবু তো সে ছাড়ে না
দুই ভূত কিম্ভুত
সংসার কবিভূত
কি পেলো বা পেলো না কি সে হিসাব করে না
ধরেছে যে একবার কোনো ধার ধারে না