ষড়ঋতু বিচিত্রতায় মোড়ানো বাংলাদেশ  
তাপদাহ সূচনা তার বসন্ত আমেজে শেষ l  
সুজলা, সুফলা, শ্যামলা বাংলা
রূপসী এক দেশ l


কতো বিচিত্র রূপ রস গন্ধ বাহার তার
ঘুরে ঘুরে ছয়টি ঋতু আবহবিকার
সাজের বদল সব ঋতুতে
সজীব সতেজতা
সকল দেশের রানী সে যে
আবেগে আপ্লুতা l


ধুলা ধূসর রুক্ষ গ্রীষ্ম পিঙ্গল জটাজাল
স্নিগ্ধতায় ভরে তোলে তাকে সজল বর্ষাকাল l
শরৎ জুড়ে মেঘ ও রোদের লুকোচুরি খেলা
শিউলি শিশির দোয়েল শ্যামা ডাক দেয় দুই বেলা ।
বৈরাগী রঙ হেমন্তদিন সর্ষে ফুলের দোলা
সোনালী রঙ পাকা ধানে ভরে চাষীর গোলা ।
কুয়াশা চাদর মুড়িয়ে নিয়ে শীতের আগমন
শীতের সকাল রৌদ্রস্পর্শ সতেজ প্রানমন ।
রাজার বেশে আসে বসন্ত সেজে ওঠে গাছপালা
দখিনা বাতাস মৃদু সুরতাল মনে দিয়ে যায় দোলা ।


সব ঋতুতে পরব বাহার আনন্দ রাশি রাশি
পোশাকের চল খাবারের ঢল মুখে মুখে আলো হাসি l


গ্রীষ্ম :


ষড়ঋতুর প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল নাম
ধূলাধূসর রুক্ষ পিঙ্গল জটাজাল অবিরাম ।
বাংলা মাস বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ইংরাজি মে জুন
গ্রীষ্ম - দূরন্ত দুর্দম রুদ্র অতিগুণ ।
দাবদাহে খাল-বিল, নদী-নালা শুকায়
মাটি ফাটে, গাছের পাতা রুক্ষ অসহায়।
অসহ্য গরম শুধু শীতল বাতাস ছায়ার কামনা
মানুষ পশু-পাখি কাতর আনমনা l
আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ রসালো
মধুমাস গ্রীষ্মকালের অন্য নাম হলো ।


বর্ষা :


ষড়ঋতুর দ্বিতীয় ঋতু সজল বর্ষাকাল
গ্রীষ্মবিদায় শীতল আবেশ স্নিগ্ধতার সকাল ।  
দূর আকাশে জমতে থাকে মেঘ সারি সারি
আষাঢ়-শ্রাবণ দু-মাস জুড়ে অবিরাম বারি ।
গ্রীষ্মদগ্ধ মাঠ-ঘাট ফিরে পায় প্রাণ
নদী-নালা ভরে ওঠে জলধর দান ।
কৃষকেরা হেসে ওঠে ফসলের টানে
শুরু হয় বীজ বোনা হাসি আর গানে ।
বাতাসে সুবাস আসে কেতকী কদম
গাছে গাছে ফলমূল ময়ূর পেখম ।
বাংলার মাঠঘাট সবুজ কোমল
মেতে ওঠে বরষায় খুশি ঝলমল l


শরৎ এসেছে ঐ :


কাশফুলে ঐ সেজেছে নদীর পার
ছুটির আমেজ এনেছে শরৎ হাওয়া
ছুটেছে কিশোর মাঠ ঘাট পথ ধরে
প্রকৃতির মাঝে খুশি রঙ ফিরে পাওয়া ।


শিউলি ফুলে যে শিশির শরৎ হাসে
পূজোর আমেজ নেচে যায় মন প্রাণে
সোনালী রোদের শুভ্র মেঘের দলে
সৃষ্টিটা খেলে ছবি রঙ আর গানে ।


শরতের সাজে সেজে ওঠে মাটি ঐ
রঙে রূপে হাসে ঐ দূর নীলাকাশ
সেজে ওঠে ঘর আপন ও পর
ধুয়ে যায় গ্লানি যতো হাহুতাশ ।


দেবতার গান খুশি মনপ্রাণ
প্রলেপ আঘাত ও বিষম ঘায়ে ।  
শরতের বায়ু বাড়ে পরমায়ু
কচি প্রাণ তার সে ধবল গায়ে ।


হেমন্ত :


বিদায় শরৎ বিদায় পরব বৈরাগী বেশ নিয়ে  
হেমন্ত টোকা দিয়ে যায় প্রতি দরজায় গিয়ে ।
কার্তিকে শুরু অগ্রহায়ণ দু মাস ব্যাপ্তি তার
বৈরাগী রঙে সেজে ওঠে ঋতু বিদায় বিলাসিতার ।  
সর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠ সোনালি রঙের ধান ফসলের ঋতু মাঠে ঘাটে ঘরে আমোদের আসে বান।
সোনালি সে ধানে ভরে ওঠে গোলা কৃষকবধূর হাসি নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে সব গ্রামবাংলার বাসী ।
ঘরে ঘরে চলে পিঠা উৎসব সঙ্গে পুলি ও পায়েস
কতো শ্রম গেছে ফসল ফলাতে এখন এসেছে আয়েস l


শীত :


হেমন্ত বিদায়ে কুয়াশায় মোড়া উত্তুরে হাওয়া ধরে  
শীত এসে জোটে পৌষ মাঘ মাসে বাঙলার ঘরে ঘরে
হিমেল শীতল কনকনে শীতে সকলেই জড়োসড়ো
বিবর্ন পাতা ঝরে পড়ে শুধু সারাদিন ঝর ঝর
শীতের প্রকোপে শিশু বুড়ো যতো কষ্টেতে বেসামাল
গরীব মানুষ দীন দুখী যতো সকলের এক হাল ।
তবু সকালের রোদ খেজুরের রস পিঠাপুলি সংযোগ
ফল ফুল শাক সব্জির ডালি শীতের বিরল ভোগ ।


বসন্ত :


শীতরিক্ততা হিমকাতরতা মুছে ফেলে ঋতুরাজ
ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতির কোল ফাগুন চৈত্র মাস।
গাছে গাছে শুরু পাতার বিকাশ দখিনা সমীরণে
দোলা দিয়ে যায় দখিনা বাতাস মানুষের প্রাণমনে ।
কোকিলের তান ফূলেদের ঘ্রাণ বসন্ত ঋতুর রাজা  
শত ফুল রঙের বাহার কতো নব রূপে তার সাজা ।
মল্লিকা মালতী পারুল পিয়াল চাঁপা করবীর ঝাঁপি  
ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহে প্রজাপতি মৌমাছি। আমের মুকুল মৃদু সৌরভ বাতাসেতে তার আভা
অফুরান প্রাণ বাঙলার গান চারিদিকে কতো শোভা
চিরযৌবনা বসন্ত প্রকৃতি মোহময় তার রূপ
ফোটে ফুল বাজে বাঁশি পাখিগান অপরূপ l