বিগত ০৯-০৩-২০১৮ শুক্রবার RCTV চ্যানেলে "সুরে সুপ্রভাত" অনুষ্ঠানে ৮ টি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছি l সঙ্গে কবিতাচর্চা সম্বন্ধীয় কিছু কথা ও আড্ডা l
কবিতাগুলি সবই বিভিন্ন সময়ে এই আসরে প্রকাশিত l
আজ অনুষ্ঠানের সিডি হাতে পেলাম l সেটিকে ইউটিউবে আপলোড করে তার লিঙ্ক এখানে দিলাম l অনুষ্ঠানের দিন অর্থাৎ ০৯-০৪-২০১৮ তারিখ এই আটটি কবিতা আসরে পোষ্ট করেছিলাম l সেদিন যেহেতু ভিডিও লিঙ্ক দিতে পারি নি তাই আজ সেদিনের পোস্টটি মুছে দিয়ে নতুন করে আবার কবিতাগুলি পোষ্ট করে ইউটিউব লিঙ্ক যোগ করে দিলাম l


১) একুশে ফেব্রুয়ারি / যাদব চৌধুরী


মাতৃভাষা সবার কাছে মায়ের মতো মান
এমন জিনিস সবার প্রিয় মায়ের কোলে স্থান l
মায়ের কোলে শুয়ে বসে আদর সাথে শেখা
সেই ভাষাতে জগত জীবন সকল কিছু দেখা l
আপন সত্তা আপন সৃজন সেই ভাষাতে আসে
বিশ্ব মাঝে সকল ভাষা আপন স্বরে হাসে l
শত্রু যদি নেয় গো দখল আপন সীমার পরে
মাতৃভাষা আঁকড়ে নিলে মুক্তি মেলে ঘরে l
ভাষার জন্য বাহান্নতে দিলেন যাঁরা জীবন
পাক সেনাদের গুলির ঘায়ে বরণ করে মরণ
সালাম বরকত রফিক জব্বার এবং সফিক ভাই
বিশ্ব মাঝে ভাষার জন্য তার তুলনা নাই l
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ মাটি ভিজে লাল
শহীদ রক্তে মাতাল হলো বাংলার যতো দামাল l
মায়ের ভাষার মান রাখতে এমন মহান বলি  
দেশটা জুড়ে আগুন জ্বলে সকল অলি গলি l
ভাষার লড়াই জন্ম দিল নতুন মুক্ত দেশ
বিশ্ব মাঝে উদয় হলো স্বাধীন বাংলাদেশ l
এই লড়াই এর মান রক্ষায় মাতৃভাষা দিবস
বছর বছর ফেব্রুয়ারি একুশ আনে হরষ l


২) দুঃখবাদ / যাদব চৌধুরী


চাইটা কী যে আমরা সবাই জানি কী তা ?
দুঃখ ভরা জীবন মাঝে দাঁড়াই কোথা ?
সময় পেলে স্বজন মিলে গল্প ধরি
দুঃখ বেঁটে মনটা সবাই হাল্কা করি l
পরব মাঝে সময় করে সিনেমা যাই
মশকরাতে হাসির চোটে খিল ধরে যায় l
এমন বাজে সিনেমা দেখে খুশি মাটি
পরের বছর খবর নিয়ে টিকিট কাটি l
সিনেমা শেষে কাঁদতে কাঁদতে হলের বাহির
নায়ক মরে নায়িকা মরে শোকের জাহির l
বুক ফেটে যায় দুঃখে তাদের চোখটা কাঁদে
মন খুশিতে যায় যে ভরে ভালো ছবির সেই স্বাদে l
আমরা নিজে চাই যে কি যে অর্থ দিয়ে কান্না কিনি
হাসলে পরে ছবির মাঝে বাজে ছবি এটাই মানি l
জীবন মাঝে দুঃখ এত দুঃখে তবু মনটা ভরো
খুশির আশা সুখের চাওয়া রহস্য তার কেমনতরো l


৩) ফেরা / যাদব চৌধুরী


কেটে যায় দিন
স্বপ্ন রঙিন
চাওয়া সীমাহীন
যেন কেউ আছে বসে
দাতা আলাদিন l


সময় হারায়
বিকাল গড়ায়
কি যে হয় হায়
থেকে যায় কতো ফাঁক
চাওয়া পাওয়ায় l


আসে শেষ ডাক
সবকিছু থাক
তীর্থের কাক
পারানির কড়ি সহ
যাক্ চলে যাক্ l


পান্থ পথের
স্বপ্নের ঢের
চলে যায় ফের
যেথা হতে আসা তার
পঞ্চ ভূতের l


যায় কি চলে
সদলবলে
সমস্তটা ?
থাকে না কি
কর্ম কৃতি
তার কিছুটা ?


৪) বাবা / যাদব চৌধুরী


মা নিয়ে সবে ছড়া লেখে কত আর লেখে কতো গান
বাবাটি আমার চেয়ে চেয়ে দেখে বিষাদগ্রস্ত প্রাণ l
ঘুম থেকে উঠে যায় ছুটে ছুটে সংসারে কতো দায়
প্রয়োজন তার মেটাতেই হয় করতেই হয় আয় l
বিপদ যখন মাথার ওপর চিন্তায় থাকে সব
নিমেষেই হয় সঙ্কট দূর পিতারুপী ভৈরব l
মা দেয় স্নেহ ভালবাসা যতো সোহাগ কতো না তার
পৃথিবীতে লড়ি বীরবিক্রমে সাহস, সে তো পিতার l
ছোট্ট সে সোনা কিবা সোনামণি আনাগোনা ঘরে তার
দিন দুনিয়ার হালচাল শেখে সবকটা পায় পিতার l
ভালোবাসা ব্যাংক মা যদি হয় টাকা ব্যাংক বাবা থাকে
বাবার ভালোবাসা অন্তঃসলিল লুকিয়ে লুকিয়ে রাখে l
মা বাবা দুয়ে দুখ সয়ে সয়ে সন্তানে দেয় চাঁদ
জগতের যেথা সেরাটুকু আছে কুলায় যতটা সাধ l
মা মা করো অতি উত্তম বাবাটাকে পাশে রেখো
মায়ের সে ঋণ শোধবার নয় বাবাটাকে তবু দেখো l


৫) মনবিহারী / যাদব চৌধুরী


যখন আমি ছাত্র ছিলাম ছিলাম আমি ছাত্র
যতই পড়ি যতই পড়ি দিবস এবং রাত্র
বাবা তবু হন না খুশি পড়াতে পান ঘাটতি
দিবস রাত্রি গঞ্জনাতে জীবনটা হয় কাটতি l
যা হোক উচ্চ ডিভিশনে পাশ করে যাই কলেজটা
রাজ্য জুড়ে নিয়োগশূন্য বছর দেখি কয়েকটা l
দিনের শেষে ছাদে এসে চাঁদ তারাদের তাকিয়ে দেখি
কতো কবি তাদের নিয়ে পদ্য লেখেন তাই পড়েছি !
সুন্দর সব বর্ণনাতে মন ভরে যায় আবেগ জাগে
আজকে কেন চাঁদ তারাদের দেখতে কেমন অন্য লাগে ?
মনের মধ্যে গ্লানি ভরা বেকার জীবন ভয়ংকর
চার পাশেতে তাকিয়ে খুঁজি কোথায় আছে কি সুন্দর l
ফুলের শোভা চাঁদের কিরণ তারার মালা বেকার সব
এক বেকারের চোখে বেকার দিনদুনিয়ার যা সৌরভ l


হঠাৎ বিধি চোখটা মেলে সদয় হলেন একটিবার
চাকরিখানি গেল জুটে বেকার জীবন - ইতি তার l
চোখের দেখা মনের ভাবা নতুন দিশা নতুন রঙ
সেই ছাদেতে তারার মেলা চাঁদের হাসি ফুলের ঢঙ l
মন নেচেছে ছন্দে যখন যা দেখি তা সোনার বরণ
কবিতা জুড়ে গানের সুরে মনবিহারীর মন হরণ !


৬) দৃষ্টি / যাদব চৌধুরী


আমার কথার অর্থ তুমি খোঁজ
সকল কথার অর্থ কি হয় বলো
মনটা যখন উদাস নদীর পানে
মেঘটা যখন নিকষ ঘন কালো l
পাতার ফাঁকে রৌদ্র ঝিলিক মারে
হাওয়ার মাথায় খেলে পাখির কুল
কাঠবিড়ালী এ ডাল ও ডাল ছোটে
বনাঞ্চলে ফোটে কত ফুল l
সব কিছু তো অর্থ মেনে হয় না
মাঝ সমুদ্রে ওঠে কতো ঢেউ
গাছ গাছালি পাখপাখালি নাচে
পাহাড় মাথায় উঠছে কতো কেউ l
সব জিনিসই সাদামাটা বটে
যখন দেখি সাদা চোখটা দিয়ে
অর্থটা তার ভিন্ন যে হয় গড়া
হঠাৎ কখন দৃষ্টি মিলে গিয়ে l
হঠাৎ হঠাৎ অর্থটা তার মেলে
জগৎ জুড়ে চলছে যত খেলা
দেখার মতো চক্ষু যখন জোটে
অতিক্রান্ত নিত্য বাঁচার খেলা l


৭) পরিবর্তন / যাদব চৌধুরী


সময় কতো পাল্টে গেছে
ভাবছি এমন শুধুই মিছে l


সব আছে আগের মতো
এক ব্যাকরণ এক গুতো l


আগের দিনে
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হতো
উলু খাগড়ার প্রাণ যেত l
জনসাধারণ সেই তিমিরে
অধিকারবোধ ফুসমন্তরে l


নতুন যুগে
যুদ্ধ এখন নতুন রূপে
ই ভি এম বা ব্যালট ছেপে
অধিকার করতে প্রয়োগ
চাপের দাপে যোগ বিয়োগ l


স্বাধীন আমরা বলছি কাকে
মানুষ তো নয়, পতাকাকে l


৮) নির্বিকার / যাদব চৌধুরী


যতই ভাবি যতই ভাবি বলব নাকো
যতই মনে নির্বিরোধের ছবি আঁকো
বেচাল দেখলে মুখ ফুটে যায় স্বভাব দোষে
যখন তখন তাইতো পড়ি সুহৃদ রোষে l


ঠান্ডা মাথায় ক্ষমা স্বীকার সেটাও চলে
এই আচরণ ভালোর জন্য সেটাও বলে
কিন্তু ক্ষত মোছে না তো অপমানের
পরের ভালো করতে গিয়ে গালিস্নানের l


প্রতিবারেই শপথ নেয়া পাল্টে যাবার
দিন দুনিয়া যেখানে যাক যেথায় আবার
অভিজ্ঞতা জ্ঞানের আলো বুদ্ধি সাবাড়
নিজেরটুকু বুঝে নিয়ে চুপটি থাকার l


কিন্তু যখন সামনে পড়ে অন্য রকম
কি কারনে মাথাটা হয় বেজায় গরম
সব প্রতিজ্ঞা শপথটুকু ভুলে গিয়ে
ভুলটা ধরি কর্তা টাকে বাঁচাতে গিয়ে l


কৃতজ্ঞ পাই এদের মাঝে অনেক জনে
রুক্ষতাকে স্বীকার করে খুশি মনে
উপকারটা বুঝে নিয়ে আল্হাদেতে
জড়িয়ে গলা খুশির প্রকাশ উচ্ছাসেতে l


তাই তো যত শপথ করি বারে বারে
ভেঙেও ফেলি যখন পড়ি এমন ধারে
ভাগ্যে যখন যেমন জোটে সেটাই স্বীকার
গালিগালাজ কৃতজ্ঞতা নেইকো বিকার l