আজো মনে পড়ে সেই মাতৃরূপিনী নারীকে
আটপৌরে শাড়িতে অপূর্ব মোহনীয় রূপ
মুখে স্মিত হাসি
মাথায় ঘোমটা
কপালে লাল টকটকে সিঁদুর


ফাগুনের পড়ন্ত বিকেল--
মেলা থেকে ফিরছিলাম আমি, নিখিল আর রঞ্জিত
জল পিপাসায় কাতর হয়ে উঠেছিলাম পথের
পাশের এক বাড়িতে
জল খেতে চাইলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন তিনি
অতঃপর জানতে চাইলেন- আমাদের বাড়ি কোথায়
উত্তর শুনে বললেন--
সে তো অনেক, অনেক দূর!!
উদ্বিগ্ন ভাবে তাকিয়ে মৃদু হেসে শুধালেন--
তোমরা কিছুই খাওনি সারাদিন, না?
নীরবে মাথা নেড়ে সায় দিলাম
মধুমাখা স্নেহের স্বরে বসতে বললেন আমাদের
সোহাগ ভরা অমিয় কন্ঠে বললেন--
আগে তোমরা খাবার খাবে, তারপর জল খেয়ো
সে সময়ে ছিলাম আমি আর নিখিল
পথের মাঝখান থেকে রঞ্জিত-কে পুনরায়
মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে গেছে বড়দা
সে কথা জানাতে মায়া ভরা কন্ঠে বললেন--
আগে তোমরা খেয়ে নাও না
ভেবো না; এলে ওকেও খেতে দেবো--


অন্যান্য অভ্যাগতদের খাওয়া শেষ হলে
আসন পেতে খেতে দিলেন আমাদের
সোহাগিনী মায়ের মমতায় সম্মুখে বসে
সে সময়ের গ্রাম-বাংলার আরাধ্য খাবার খেলাম
চিড়া, মুড়ি, আর খই
সঙ্গে নানা রকমের মিষ্টি এবং দুধ
সারাদিনের অভূক্ত, ক্ষুধার্ত শরীর
দুজনে খেলাম পেট পুরে, দারুণ তৃপ্তি নিয়ে
তখন আমাদের বয়স এগারো কি বারো হবে
তিনি হয়তো ত্রিশের আশেপাশে
সে অনেক বছর আগের কথা--


আজো ভুলতে পারিনি সেই মাতৃরূপিনী নারীকে
হয়তো এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ
হয়তো বা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে
না ফেরার দেশে
আজো তার হাসি মুখ জেগে ওঠে হৃদয়ের মাঝে
ছড়ায় ফুলের সৌরভ
হে আবহমান বাংলার চিরন্তন স্নেহশীলা জননী!
যেখানেই থাকো, ভালো থেকো
অন্তর থেকে তোমার প্রতি জানাই অনন্ত কৃতজ্ঞতা--


২২/০৭/২০২১ ইং


(আমার ছেলেবেলার একটি ঘটনা)