কর্মরত অবস্থায় তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে সঞ্জয়,
পৌরসভার সাফাই কর্মী সে।
এক বাড়িতে এসে বলে,
কাকিমা, এক বোতল জল হবে?
পিপাসায় বুক ফেটে যাচ্ছে।
বাড়ির কর্তা জল নিয়ে এলো।
হাত ধুয়ে সঞ্জয় জলের বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয় অনেকটা জল।
জলের বোতল ফিরিয়ে দিতে গিয়ে বিপত্তি!
ওটা তুই নিয়ে যা। আমাদের আর দরকার নেই।
অবাক হয়ে সঞ্জয় বলে, কেন কাকু?
কেন বুঝিস না? তোরা ছোট জাত! আমরা ব্রাহ্মণ!
তোদের ছোঁয়া জিনিস আমরা ব্যবহার করি না।


সঞ্জয়ের মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু ভদ্রভাবে বলে,
আপনাদের অনেক দয়ার শরীর। কিন্তু...
কিন্তু কিরে?
না মানে ভাবছি, আপনারা তো ছোঁয়াচে রোগী।
বাঁচেন কি খেয়ে? হাওয়া খেয়ে বাঁচেন?
অবাক কথা! তা হবে কেন?
আমাদের ছোঁয়া জিনিস ব্যবহার করেন না যে!
প্রশ্নে সূচক দৃষ্টিতে তাকায় উদার মনের বড়লোক কর্তাবাবু।
আপনারা যে চাল, ডাল, তরি-তরকারি খরিদ করেন,
তা কারা জন্মায়?
আমাদের মতো নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা!
গরিব কৃষক, মজুরেরা!
তাতে আপনাদের জাত যায় না?
এই যে আপনারা ডিম, দুধ, ঘি, মাখন, গুড়
ইত্যাদি ভক্ষণ করেন; এগুলো কারা জন্মায়?
তারা আমার মতো নিম্ন বর্ণের লোক!
এগুলো খেলে আপনাদের জাত যায় না?
আপনারা যে কাপড়-চোপড় পরিধান করেন,
কারখানায় সেগুলো কারা তৈরি করে?
আমাদের মতো অচ্ছুত লোকেরা!
এতে আপনাদের জাত যায় না?
বাবু রেগে বলেন, তুই যাবি?
বড্ড বেশি কথা বলছিস। তোর হাতে ময়লা ছিল না?
সে তো আমি ধুয়ে ফেলেছি! আপনার-ই সামনে!


ভাবছি, আপনাদের কি হবে....?
আমাদের আবার কি হবে?
সাবান দিয়ে শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা যায়।
পরিষ্কার করা যায় নোংরা কাপড়-চোপড়ও।
কিন্তু মনের ময়লা পরিষ্কার হবে কি করে?
আপনাদের মন কয়লার চেয়ে কালো,
আপনারা নর্দমার কীটের মতো!
আপনার বাড়ির জল খেয়ে আমি অপবিত্র হয়ে গেছি।
গঙ্গায় স্নান করে আমি পবিত্র হয়ে যাব।
কিন্তু আপনাদের মনের ময়লা পরিষ্কার হবে কী করে?
টনকে টন ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুলেও পরিষ্কার হবে না।
আপনারা গঙ্গা স্নান করলে গঙ্গা অপবিত্র হয়ে যাবে!
তখন হাজার হাজার টন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলেও
গঙ্গার অপবিত্রতা দূর হবে না।


২৬/০৯/২০২০ ইং