টুনটুনি একদিন একটা কবিতা লিখে ফেলল।
টগবগে প্রেমের কবিতা,
যুবক-যুবতীর হাবু-ডাবু প্রেম কাহিনী।
কাকাতুয়া, বুলবুলি, ফিঙে, চড়ুই
আরো অনেক পাখি ভিড় করে,
মশগুল হয়ে,
টুনটুনির কবিতা শুনতে লাগলো।


কাকাতুয়া বাদে সবাই বলল--
দারুণ হয়েছে বন্ধু!
চালিয়ে যাও,
আরো অনেক, অনেক প্রেমের কবিতা চাই।
তারা বলল--
প্রেমের কবিতা
সমাজ থেকে হিংসা, ঘৃণা, দলাদলি,
ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ,
সব, সব ঘুচিয়ে দিতে সহায়তা করে।


ধমকে উঠলো কাকাতুয়া।
চুপ কর সব।
এসব কবিতা
বাচ্চাদের খেলনা স্বরূপ,
যুবক-যুবতীদের
সময় কাটানোর উপকরণ স্বরূপ,
এসব বড়দের জন্য নয়!


টুনটুনিকে উদ্দেশ্য করে কাকাতুয়া বলল--
ভাই, প্রেমের কবিতা লিখতে কোন মানা নেই,
কিন্তু দু'চারটে দ্রোহের কবিতাও লিখ।
এসব কবিতা
সমাজ-রাষ্ট্রের কোনো কাজেই আসবে না।


টুনটুনি ভড়কে গিয়ে বলল--
সে কিরকম শুনি!


কাকাতুয়া বলল--
কবিতা হবে
ধারালো তলোয়ারের মতো; যা--
সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে
তার শানিত শব্দবাণে
সব ভেঙেচুরে তছনছ করে দেবে,
টুকরো টুকরো করে দেবে,
ফালা ফালা করে দেবে সব।


কবিতা হবে
মধ্যাহ্ন মার্তন্ডের তির্যক রশ্মির মতো; যা--
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে
ঘুষখোর ও পেটোয়া চাকরিজীবীকে,
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদকে,
ভেজাল মিশ্রণকরী ব্যবসায়ীকে,
সমাজের চরিত্রহীন লম্পটকে,
যেন কেউ বাদ না যায়।


টুনটুনি ফোড়ন কেটে বলল--
কিন্তু এতে তো নানা রকম ফ্যাসাদ আছে,
বিপদের আশঙ্কা আছে।


বিপদ ভাবলেই বিপদ।
ওই সব ম্যাদ-ম্যাদে, বস্তাপচা প্রেমের কবিতায়
কী উপকার হবে দেশ ও সমাজের?


কবিতা হলো--
সমাজ ও রাষ্ট্রের
প্রাতিষ্ঠানিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।


কবিতা হলো--
সমাজের শান্তিময় পরিবেশ নষ্টকারী
উগ্র, মদন্মত্ত, বেসামাল,
নর-নারী, যুবক-যুবতীদের
বেলাল্লাপনার বিরুদ্ধে
শাণিত কৃপাণ!


কবিতা হল--
সমাজ ও রাষ্ট্রের
কু-শাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে
সু-শাসনের অঙ্গীকার!
সমাজ ও রাষ্ট্র বদলের
হাতিয়ার!


০২/০৭/২০২০ ইং।