ছোট্ট ছেলে শুধায় মাকে, ধর্ম কি, মা?
ধর্ম কি গো কোন গাছের ফল?
খেলে আমার বাড়বে গায়ে বল?
মা হেসে কয়, দুষ্টু ছেলে ধর্ম কিছু নয়,
ভালো কর্ম করলে লোকে তাকেই ধর্ম কয়।
মিথ্যে ছেড়ে সত্য বলা তাকেই বলে ধর্ম,
পরহিতে কর্ম করাই জীবন পথের বর্ম।
মাঝে মাঝে মিথ্যে বললেও হয় না কোন পাপ,
মিথ্যে বলার অপরাধে দেবে না কেউ শাপ।
মিথ্যে বললে যদি বাঁচে ভালো লোকের প্রাণ,
অন্য লোকের ক্ষতি ছাড়া হয় যদি তার ত্রাণ।
তবেই জেনো, মিথ্যে বলা মস্তবড়ো ধর্ম,
সত্য ছেড়ে মিথ্যে বলা তখন পুণ্য কর্ম।
পরনিন্দা, পরচর্চা নয় তো ভালো কাজ,
ভদ্র, সভ্য আচারকারী সবার মাথার তাজ।
মা-বাবাকে যে সব ছেলে করে না কো সেবা,
তার মতো আর এই দুনিয়ায় মন্দ আছে কে বা!
আরো জেনো, গরিব দুখির করলে উপকার,
তাদের ভালোবাসাই হবে তোমার উপহার।
ভালো শিক্ষা ও ব্যবহার ধর্ম গাছের ফল,
খেলে খোকা অবশ্যই তোর বাড়বে গায়ের বল।


ঠাকুরঘরে তুমি যে মা নিত্য পূজা দাও,
ঠাকুরকে কি কখনো মা তুমি দেখতে পাও?
খোকার গালে চুমু খেয়ে গভীর ভালোবেসে,
আদর করে বিস্ময়ে মা বলে মিষ্টি হেসে!
ঠাকুর কি আর তোর মতো বাপ একটি ঘরে থাকে?
পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ তাকে ডাকে!
যখন-তখন ডাকলে কি আর দিতে পারে সাড়া,
তোর মতো কি ঠাকুর বেকার ঘুরে বেড়ায় পাড়া?


পূজা দিলে পাও না তুমি যাকে,
তবে তুমি কেন ডাকো তাঁকে?
মা কেঁদে কয়, আমার দুষ্টু খোকা,
ছোট্ট আছিস, তুই তো দারুণ বোকা!
মনে আমার আসে যখন দুখ,
ঠাকুর ঘরে পুজো দিয়ে পাই অন্তরে সুখ।
অশান্ত মন একটু শান্ত হয়,
দুঃখ-আঘাত এক নিমিষে হয় খানিকটা লয়।
তোর অসুখে এলে চোখে জল,
পুজো দিয়ে তখন মনে পাই খানিকটা বল।


খোকা বলে, মোটা মোটা পুঁথি কেন পড়ো?
মাঝে মাঝে প্রণাম করো দুহাত ক'রে জড়ো।
আজকে মায়ের অবাক হওয়ার পালা,
প্রশ্নবাণে কান দুটো তার হচ্ছে যেনো কালা।
হেসে বলে, এ সব পুঁথি মস্ত জ্ঞানের আধার,
অর্জন করলে পার হতে তুই পারবি অকূল পাথার।
এর ভেতরে সঞ্চিত যে জ্ঞান,
পাবি না বাপ যদি করিস হাজার বছর ধ্যান।
মোটা মোটা পুঁথি করে অমূল্য জ্ঞান দান,
তাই পুঁথিকে প্রণাম করে দেই পুঁথিকে মান।
আরো প্রশ্ন করতে খোকা উদ্যত হয় যেই,
মা হেসে কয়, কাজ আছে বাপ আর তো সময় নেই।


১৫/০১/২০২২ ইং