মেয়েটির নাম নীলাঞ্জনা, কেউ কেউ ডাকে নীলা,
মায়ের বকা খায় সারাদিন, কাজে ভীষণ ঢিলা।
বারান্দাতে যায় সারাক্ষণ, এদিক ওদিক চায়,
মায় ডেকে কয় পোড়ারমুখী, করিস কি হোথায়?
বা রে! তখন তুমি বললে আমায় দিতে রোদে ঘি,
এখন আবার বলছ ডেকে, করিছ হোতায় কি?
এমন সময় দেখলো নীলা ছাতা মাথায় দিয়া,
রাস্তা দিয়া যায় হেঁটে ওই পাশের বাড়ির হিয়া।
টুক করে এক ছোট্ট পাথর ছোড়ে তার ছাতায়,
চোখ পাকিয়ে হিয়া মশাই উপর দিকে তাকায়।
চোখে যখন পড়লো ও চোখ ডাগর আঁখি মেলি,
হাত ইশারায় বললো হেসে, যাবে তুলতে বেলি?
এখন আমার সময় নেই, যাচ্ছি আমি বাজারে,
তোমার সাথে গেলে হোতায় খাব যে কিল হাজারে।
অকারণে কষ্ট পেয়ে ঢুকল নীলা নিজের ঘর,
মা ডেকে কয়, ওরে বাছা, আমি কি তোর এত পর?
তখন থেকে চলছিস ছুটে নাইতো কাজে মন,
মায়ের কাজে চলছে না হাত কেমন আচরণ?
মিনসে আমার এসেই বাড়ি চাইবে খেতে ভাত,
ভাত না পেলে মারের চোটে ধরবে আমার বাত।
নীলা বলে দোহাই তোমায় মন যাহা চায় কর,
আমার জ্বালায় আমি মরি, তোমার কজ কি বড়?
তোমার কাজের চাপে আমি পারিনা পড়তে মোটে,
পারিনা পড়া তাই প্রতিদিন স্যারের বকা জোটে।
এই না বলে নীলা রানীর জানালায় পড়ে চোখ,
সেথায় দেখে হিয়া সাহেবের চওড়া হাসি মুখ।
বিকেল বেলায় বকুলতলায় যাওয়ার কথা বলে,
হিয়া সাহেব চুপটি করেই যায় ভিতরে চলে।
সময় মত বিকেল বেলায় যায় সেখানে নীলা,
কোথাও নেই হিয়া সাহেব তারটি তাহার ঢিলা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে নীলা বসে গাছের নিচে,
চুপি চুপি এসে হিয়া বাবু দাঁড়ায় নীলার পিছে।
আলতো করে পিছন থেকে ধরে নীলার নয়ন,
রাগ কোরনা বলেই করে মধুর শব্দ চয়ন--
তুমি আস বলে এই বাগানে ফুটে হাজার ফুল,
তুমি না এলে এই বাগানে হাসেনা পাখির কুল।
তোমার হাসির ঝরনা ধারায় আমি আত্মহারা,
তুমি না এলে নীল আকাশে উঠবে না কোন তারা।
হিয়ার কথায় নীলার মনে খুশির বন্যা বয়,
তোমাকে ছাড়া জীবন আমার শুধুই বিষময়।
তুমি আমার স্বর্গ পথের সরল সুখের হাসি,
তুমি আমার বৃন্দাবনের মোহন সুরের বাঁশি।

১৩/০৬/২০২০ ইং।