এই কে আছিস--?
ওই ভিখিরিকে ধর
রোজ এসে জ্বালায় আমায়
"দুটো টাকা দেবে বাবু, তিন দিন কিছু খাইনি"
বলি, টাকা কি গাছে ধরে?
নাকি জমিয়ে রেখেছো আমার কাছে?
একটুও শান্তি পাইনে কোথাও
অফিসে কাজের পাহাড়
ভূতের মতো খেটে মরছি রোজ
সাত-সকালে ভিখারির উৎপাত
কত কষ্ট করে, বুদ্ধি খাটিয়ে টাকা কামাতে হয় জানো?
কারো বৈধ কাজ না করে ফেলে রাখি টেবিলে
উপযুক্ত পারিতোষিক পেলে, করি তবেই
কারো অবৈধ কাজ করে দেই পেলে সম্মানী
ধারি না কোন ন্যায়-নীতির ধার
বেতনের চেয়ে বেশি উপার্জন করি এভাবেই
বড়বাবু বলে, মধু বাবু, আপনার খুব বুদ্ধি
স্যারকে বলি, বুদ্ধি আছে বলেই তো আপনার পকেটও খানিকটা গরম হয় স্যার
এই বুদ্ধি খাটানো টাকা রোজ দেবো তোমাকে?
কাজ করে খেতে পারো না?
কারো কাছে হাত পাততে লজ্জা করে না তোমাদের?
লজ্জা কি আপনারও আছে, স্যার?
অফিস থেকে মোটা মাইনে পান
তার পরেও ফাইল ঠেকিয়ে হাত পেতে ঘুষ খান
আমরা তো ঘুষ চাই না, চাই সামান্য ভিক্ষে
তবে রে--!!
যতো বড়ো মুখ নয়, ততো বড়ো কথা--!
জানিস, এ পাড়ায় আমার কত সম্মান?
প্রতিবছর মোটা অংকের চাঁদা দেই ক্লাবকে
তাই আমাকে ভীষণ সম্মান করে ওরা
সব সময় এগিয়ে দেয় বড়ো চেয়ারটা
আর সুধাকর বাবু--?
দারুণ সততার মূর্ত প্রতীক
নেই ভালো পোশাক-আশাক, নেই কোনো গাড়ি
এটা নেই ওটা নেই বলে রোজ ঝাড়ি খায় স্ত্রীর কাছে
আর আমি--?
রোজ রোজ স্ত্রীকে কিনে দেই নতুন নতুন শাড়ি
দামি দামি হীরের গয়না
আর তুই আমাকে বলিস কিনা ঘুষখোর--!?
ভুল বলেছি স্যার "ঘুষখোর" নয় "ভিক্ষুক"
আমাদের থেকে আপনার অবস্থা আরো খারাপ
আমরা অল্পে তুষ্ট
পেটের ধান্দায় ঘুরে বেড়াই এ বাড়ি ও বাড়ি
কারো পকেট কাটি না
আপনারা ভদ্রভাবে পকেট কাটেন
আবার মুখে বলেন বড় বড় কথা--!
আপনার অনেক আছে
ভিক্ষা করেন তবুও
তাছাড়া পেশাদার চোরও বটে
তবে রে, হারামজাদি--!!
দেখাচ্ছি তোকে মজা--
আমার সাথে ইয়ার্কি--!?


এমন সময় দরজায় খটখট আওয়াজ হয়
বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দেয় মধু বাবু
অবাক বিস্ময় বলে, এ কী! আপনারা--!?
দরজায় দাঁড়িয়ে পুলিশ
ঘুষ খাওয়ার জন্য ওয়ারেন্ট আছে আপনার বিরুদ্ধে
গ্রেফতার করা হলো আপনাকে
মধু বাবু একবার পুলিশের দিকে
একবার ভিখারির দিকে তাকায়--!
মুচকি হেসে চলে যায় ভিখারি--


৩০/১১/২০২১ ইং


# একটি কাল্পনিক চিত্র। #