পদ্মার চরে বসবাস করি পদ্মার চরে ঘর,
রাতের আঁধারে জোনাক পোকার যেন নীল সরোবর।
যেদিকে তাকাই নীল নীল আলো ভেলার মতন ভাসে,
আদরে ভাসায় দখিনা বাতাস জোছনা নীরবে হাসে।


রাতের আঁধারে দূর থেকে আসে শিয়ালের হাঁক -ডাক,
নবীন প্রভাতে পাখির কাকলি ক'রে দেয় হতবাক!
পদ্মার চরে ছড়ানো-ছিটানো ছোট ছোট ঘর-বাড়ি,
অভাব এখানে ওত পেতে থাকে শান্তিও আছে ভারি।


ঘরে ঘরে জ্বলে মাটির প্রদীপ নরম আলোর রেখা,
আমরা এখনো পাইনি এখানে বিজলি বাতির দেখা।
শিক্ষার আলো ঢোকেনি এখানে রবির তুমুল আলো,
জমাট আঁধার দূর করে দেয় মন ক'রে দেয় ভালো।


হিংসা-ঘৃণার অভাব এখানে, ভালোবাসা হয় চাষ,
বিপদে-আপদে পাশে থেকে সবে ছড়ায় পুষ্প বাস।
প্রকৃতির সাথে মিতালি সবার ভীষণ উদার মন,
পাবে না কখনো খুঁজে গো তোমরা পঙ্কিল কাঁটা বন।


আমরা সবাই শ্রমজীবী লোক ভোরের আলোর বানে,
ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়ি চটুল ছন্দ গানে।
পদ্মার বুকে ছোট ছোট নায়ে মৎস্য শিকার করি,
নানান জাতের ছোট-বড়ো মাছে নৌকার খোল ভরি।


গনগনে রোদে তামাকের ঘ্রাণে খানিক জিরিয়ে নিয়ে,
সারাদিন ভাই মাছ ধ'রে যাই বড়ো বড়ো জাল দিয়ে।
সন্ধ্যা নামার খানিক আগেই ঘরে ফিরে আসি রোজ,
গরম গরম মাছ ভাজা দিয়ে করি আনন্দে ভোজ।


নিদাগ দুপুরে চান করি রোদে শীতে কাঁপি শীতকালে,
বর্ষায় ভিজে মাছ ধরি রোজ এটাই লেখনি ভালে।
গ্রীষ্ম-বর্ষা, শীত-বসন্তে পদ্মার বুকে থাকি,
কাজ করে করে জীবন চালাই দেই না নিজেকে ফাঁকি।


বৈশাখি ঝড়ে কুড়ে ঘর ভাঙে অশেষ দুঃখ পাই,
নব চেতনায়, নব উদ্যমে জীবনের গান গাই।
জীবন এখানে পদ্মার মতো ভাঙনের খেলা খেলে,
নীরব ঘাতক অসুখ-বিসুখ ছুটে আসে ডানা মেলে।


এমনি করেই প্রকৃতির সাথে নিত্য যুদ্ধ করি,
মরণের ডাক যদি এসে যায় বক্ষে জাপটে ধরি।
সুখ-হাসি আর কান্না মেশানো জীবন এভাবে শেষ,
কেউ চলে গেলে পরিবারে থাকে দুখের বিপুল রেশ।


০৩/০৭/২০২২ ইং