ঘুম থেকে উঠে টোটো নিয়ে আমি পথে-পথে রোজ ঘুরি,
নানা কিসিমের হরেক মানুষ দেখি আমি ভুরি ভুরি।
কেউ উঠে বলে তাড়াতাড়ি চলো অফিসের ক্ষণ যায়,
বিলম্ব হলে জ্যেষ্ঠ কর্তা মাথা ও মুণ্ডু খায়।
বাবা ও মায়ের নাম তুলে শালা গালাগালি করে রোজ,
ইচ্ছে হয় যে, হারামজাদার মাথা মুড়ে করি ভোজ!


কেউ উঠে বলে ধীরে ধীরে চলো জীবন অনেক দামি,
তাড়াহুড়া করে দুর্ঘটনায় জীবন দেবো না আমি।
কথা শোনাবার অফিসে আমার কেউ নেই ভাই ব'সে,
বিলম্ব হলে অম্বর থেকে পড়বে না তারা খ'সে।
কী চাকরি করো? শুধালেই বলে- আদার ব্যাপারী হয়ে,
কী লাভ জেনে গো তটিনীর বুকে কত জল যায় বয়ে!


আর একদিন- যায় নাকো ভোলা মসিময় এক মুখ,
রোদন পিয়াসি মেঘের মতন মনে অনন্ত দুখ।
বিমর্ষ মুখে আমার টোটোতে উঠে বলে ভাই, চলো,
সুধালাম তাকে- কী হয়েছে দাদা? একটু আমায় বলো।
ঝর ঝর ক'রে বারি ঝরে চোখ ডুকরে ডুকরে কয়,
কী আর বলবো- চারিদিকে চোখ মনে জাগে বড়ো ভয়!
আমার অবোধ অসুস্থ ছেলে হাসপাতালের বেডে,
জননীকে তার বারে বারে ডাকে কচি হাত দুটি নেড়ে।
জননী যে তার ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার ওই দেশে,
সোনা রে আমার! মানিক বলে সে বলবে না কথা হেসে।
একা ঘরে পেয়ে শিয়াল-শকুনে আবরু নিয়েছে কেড়ে,
সেই লজ্জায় নীরবে গিয়েছে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।
কী করে বাছারে সান্ত্বনা দেবো! কী করে বাঁচবো নিজে!
শূন্য এ বুকে হাহাকার ভরা তুষের আগুন কী যে!
আমি বলি দাদা- থাক তবে থাক, শক্ত করো না মন,
খোকন সোনাকে বাঁচাতে হবে যে কায়মনে করো পণ।


এমনি অনেক ঝাঁঝালো গল্প আমার ঝুলিতে ভরা,
সুখ-হাসি আর কান্না জমানো পাথর প্রতিমা ধরা।
নীরব স্রষ্টা নীরবেই আছে বুকে নেই তার ক্ষত,
আমার মতন কালের সাক্ষী না জানি রয়েছে কত!
দয়াময় তুমি মহান স্রষ্টা- তোমার আঁখি কি বন্ধ?
ধৃতরাষ্ট্রের মতো কি তোমার নয়ন যুগল অন্ধ?


                                   আমি এক টোটো চালক,
তোমাকে আমরা ভগবান মানি, জানি জগতের পালক।
সেই তুমি কেন নিশ্চুপ রও? পাপীকে দাও না দণ্ড,
তবে কি তুমিও এই ধরণীর নেতাদের মতো ভণ্ড?
চোখ মেলে চাও, পাপ মুলুকের পাপী-তাপী করো সাফ,
নয়তো তুমিও প্রস্তুত হও নিতে ঘোর অভিশাপ।


২৫/০৬/২০২২ ইং


বিঃ দ্রঃ একজন টোটো চালকের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি নিয়ে লেখা।