আমি না একদিন ঠিক দাঁড়িয়ে যাব।
পাহাড়, নদী, দ্বিপ, উপত্যকা পেরিয়ে
তপ্ত বালুরাশির বুকে,
একদিন ঠিকই হারিয়ে যাব।

চার পাশের যত সজীবতা যত পূর্নতা
যেন, ভোরের টকটকে লাল সূর্যের মত রক্তিমতার রক্তাক্ত প্রান্তর মনে হয় আজ,
কালের লক্ লকে জিহবায়।
ককিলের ডাকও মর্টার শেলের মত কানে বাজে।
বসন্তের ফুটে  ওঠা ফুলেও ধরে বারুদের গন্ধ।।

না না.. এমন সজীবতা চাইনা আমি -
এমন সবুজের পূর্নতা বড্ড বিষাক্ত লাগে।  

এমন স্বাধীনতা চাই না,  
যে স্বাধীনতা পায় রক্তপিচাশ।
নর কঙ্কালের মুন্ডমালা গলে পরে,  
মেতে উঠে করে রক্ত উল্লাস।

এমন অধিকার চাইনা আমি,
যে অধিকারে তরুনীর বুকে ভ্রুকুটি করে।
সংযমের পাথর ভেদীয়া অস্ত্র ধরে,
করে হরিনীর নিরীহ রক্ত পান।
কিছু প্রানী থাকে নির্বাক বসে, কিছু হয় প্রানহীন অকারন।।

এমন ক্ষমতা চাইনা আমি,
যে ক্ষমতার বাদ্য কেবল গোলাবারুদ আর ককটেল।
অবরোধে হরতালে বেচারা শিক্ষার্থী আর মজদুরের হাহাকার।
বদ্ধ উন্মত্ত ক্ষমতার নেশায় মোড়ে মোড়ে,
মিঠিং-মিছিল, সভা অনশনের নামে পিচাশের হুঙ্কার।।

আমি এমন পৃথিবী চাইনি,
যেখানে আশীর্বাদের রূপে ফোটে মিথ্যা আস্ফালন।
রাজপথে ভবিষ্যৎ বোদ্ধার রক্তস্নাত ক্ষরন।  
তার সাথে ফিরে আসে,
আরও একটি নিষিদ্ধ বদ্ধভূমির, বুকভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাস আর অতৃপ্ত আর্তনাদ।।
  
না আমি একদিন ঠিক তলিয়ে যাব।
সাগর অরন্যের গভীরতম অতলে,
একদিন ঠিকই মিলিয়ে যাব।।

এমন বাতায়ন চাইনা আমি,
যে বাতায়নে বিশ্বায়নের মোড়ক খুলে বনহীন করে ভূখন্ড।
করালগ্রাসে কালোত্রাসের স্টিমার চলে সকল নির্জনতা ভেদ করে,
আর বন্য জীবন আশংকার প্রহর গুনতে গুনতে একদিন ঠিকই বিপন্ন।।
  
এমন পৃথিবীতো কখোনো চাইনি আমি....

আর এরা চোরাবালিতে দেখে স্বর্গ-সুখের স্বপ্ন!
ধিক্ ধিক্....
এর থেকে বালুঝড়ে ঢাকা পড়া উটের সওয়ারীর
বেঁচে থাকার আর্তচিৎকার ঢের ভাল।
বালির উপর বালি জমে একটা উঁচু ঢিপিই না হয় হল।  
হয়ত এটাই তার শেষ সমাধিস্থল যা, সবার চোখে পড়ে।
একটা একটা করে স্বপ্ন বুনে,
একদিন ঠিক সৃতির পাহাড়ও গড়ে।।
কিন্তু, আমি এখন দাড়িয়ে আছি একটা চোরাবালির সামনে।
যে কেবল নিচে নামতেই জানে, আর নিচে নামাতে।।


আমি আবার চলতে থাকব, চলতেই থাকব অনন্তের পথ ধরে।
যখন দুপা বিষিয়ে উঠবে,
কোথাও একটা দাঁড়িয়ে দু-দন্ড বিশ্রাম নিয়ে আবার চলব।
যখন বিশ্রামের পূর্নতাও অসহ্য লাগবে,
তখন একদিন ঠিক স্থির হব।
দু-পা শরীরের ভার বইতে না পেরে হাল ছেড়ে দেবে।
ক্লান্ত হৃদয় শ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষমতা হারাবে।
মহাকর্ষের টানে ধপ করে পড়ে যাবে শরীর,
লক্ষ লক্ষ বছরের অভিশাপ ধারন করা জরাজীর্ণ জমিনে।
ব্লাকহোলের কালগহব্বরে দুমড়ে মুচড়ে মিলিয়ে যাবে,
যত সব রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, অভিমান, আবেগ, ক্ষমতা, অধিকার, স্বাধীনতা আর বিষাক্ত যত পূর্নতা।
সব মিলেমিশে একাকার হয়ে চোখের কোনে একফোঁটা অশ্রুবিন্দু রূপে জমবে।
ক্লান্ত শরীরের ঘাম ভেবে ভুল করবে অনেকে।
তপ্ত বালুতে ঘামও যে শুকিয়ে যায় সেটাও তাদের অজানা।
তারপর হটাৎই একসময় বুকের গভীর হতে শেষ প্রশ্বাসটুকু এই রুক্ষ মরুর কঠোর বিধাতার বুকে,
আর একটি অজানা আশংকায় আছড়ে পড়ে,
কেঁপে কেঁপে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে যাবে চারিপাশ।
কোন এক অপূর্ন হওয়ার অভিশাপে।।

                  - সমাপ্ত -


( সময়:- সকাল ৬:২১, তাং:- ০৬.০৮.২০১৮ )