আটার বছর আগের কথা, অনেক কথা , তখনো প্রবাস কি -কেমন জানার বোজার সুযোগ ছিল না
কত লোক যায় বিমানে , তাদের আনতে বা বিদায় দিতে এয়ারপোটে যেতে হয় ।
গেছি শত বার , বার বার তারা কাদে আবার হাসে ।
হাসি কান্নার দুটো গল্প এরাইভাল  ডিপারচারে চলমান , আমি শেষ দৃশ্য দেখব বলে দাড়াই হাত নাড়ি ৤


একদিন ভাবলাম আমি যাব, তবে কাদব না । বাবার দেয়া শেষ সম্বলটা ৭ কাঠার জায়গাটা দিয়ে দিলাম জমির কে ।
সে অনেক দিন থেকে ঘুরছে এটা নিবে বলে, যে দিন কাল পড়েছে সেটা  রাখাটাও  দায় । বেশ কয়েকজন ঘুরছেন । আমার মুল্যহীন জায়গাটাই অনেকের স্বপ্ন জগত ।


আমি শুধু প্লেনের শ্বব্দ শুনি দিনরাত ।  দালাল বলল সব সময়  তৈরী থাকতে ।  
একটি ছোট ব্যাগে ককয়েকটা কাপড় , একটা কোরআন শরীফ, একটা নামাজ শিক্ষার  বই , কয়েকটা ক্যাসেট ও মিতালীর কয়েকটা চিঠি ।
মা জানত তাই বাড়ীতে ভাল মন্দ রান্না হয় ইদানিং , সব প্রিয় খাবার খাওয়ানো হচেছ । মা জোর করে আত্বীয় স্বজনদের বাড়ীতে পাঠাচেছন ।
ভেতরের ভেতরে পুরো প্র¯‘তি সম্পন্ন । মিতালীর সাথে দেখা হচেছ ঘন ঘন । তাকে বলা হয়ছে বিদেশ যাবার চেষ্টায়, সে যেন মন দিয়ে পড়াশুনা করে- আর যেন অপেক্ষা করে ।
একদিন ভোর বেলা জয়দেবপুৃরের শিমুল তলী বাস ষ্টেশন থেকে ভোরবেলা রওয়ান হয় শামিম আহমদ, কাক ডাকা ভোরের বাড়ী ছাড়ে প্লেনের শব্দ বুকে নিয়ে ।  মা তখন কাদতে চেয়েছিল -কাদতে পারে নি ঠিকমত ।
হাতে নেই পাসপোট , নেই টিকেট তারপর ও বিদেশ যাবার জন্য শাহজালাল বিমান বন্দরে উপস্তিত ।  ছোট ব্যাগের ভেতর ম্বপ্ন গুলো উকি মারে বার বার ।
বিমান বন্দরের একটি রেস্তোরায় ট্রাভেলস এর দুজন লোক তাকে পাসপোট , টিকেট দিয়ে বলে আজ দুপৃুরে ফ্লাইট ।
প্রাথমিক শেষ গন্তব্য মেস্কিকো , তবে বেশ কয়েকটা দেশ ঘুরে প্নেন ও সড়ক পথে যেতে হবে । ভয় নাই সব জায়গায় লোক থাকবে । শেষ গন্তব্য আমেরিকার ট্রেস্কাস তবে সব মিলিয়ে ত্রিশ দিন লাগতে পারে বা কম বেশী । নতুন দেশ , নতুন জায়গা তাও চারটি দেশ ঘুরে স্বপ্নের দেশে ।
ডিপারচারের যাত্রী শামিম আহমদ তখন বুঝতে পারে মানুষ এর কান্না বিমান বন্দরে এত ভারী হয় কেন । অনেক টা চাপা কষ্টে মা ও মিতালীর মুখটা বার বার ভেসে উঠে বার বার । পচিশ টা বান্ডিলে পচিশ লাখ টাকার যে মুল্য তার চেয়েও মুল্যবান হয়ে যায় মিতালীর মুখ খানি । মা বার বার বলেছিল দেশে কিছু একটা করতে পারলে ভাল হত । বিদেশের পাগল করা নেশা কতটা খারাপ তার ভুক্তভোগীরাই জানে ।
মিডল ইষ্ট হয়ে আফ্রিকায় পৌছে শামিম আহমদ , দুপ্তাহ একটি হোটেলে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয় , তারপর তিনটা বর্ডার ক্রস করে বন জঞ্জল হয়ে মেষ্কিকো পৌছে ।
এর মধ্য রাস্তায় আরও তিন লাখ নিয়ে গেল নানান দেশের দালালরা ।  তিন মাসে একবার দেশে কথা বলার সুযোগ পেল শামিম -মাকে বলল ভাল আছি ্ দোয়া কর ।


৪ জুলাই খুব ভোর  বেলা মেস্কিকোর দালালরা তাদের টেস্কাসে ঢুকিয়ে দিল , কথা ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে বর্ডার তেমন কড়া কড়ি হবে না । সহজে ঢুকে যাবে ।
হল তার উল্টোটা । আমেরিকান নতুন সরকার সিমান্তকে রেখেছে এথন ভাবে কারও ঢুকে পালাবার পথ নেই ।
ইমিগ্রেশন ধরে নিয়ে যায়  শামিম সহ আরও ১০০ জনকে, জেলে পুরল ।
আমেরিকার আকাশটা  মেঘাচছন্ন থাকায় দেখা হল না ।
৪০ দেশের ১০০ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর মধ্য একজন বাংলাদেশী শামিম আহমদ ।
বাংলা কাগজে নিউজ ছাপা হল । কয়েকজন যোগাযোগ করার চেষ্টা করল ।
কিন্তুু ইমিগ্রেশন কোন সহয়োগীতা করতে চায় না ।
তিন মাস জেলে থাকা শামিম আহমদ বাংলাদেশ ফিরে যাবার দিন ঘুনছেন ।
একদিন খবর এল কাল তাকে দেশে পাটানো হবে । তিন টা মাস আমেরিকার জেলে থেকে শামিম হাপিয়ে উঠেছিল ।
তারপর একদিন ভোর বেলা তাকে নিয়ে বিমান ছাড়ল বাংলাদেশের পথে ।  এরাইভেলের কাউন্টারের সবাই যখন হাসে তথন বিধ্বস্ত  শামিম কাদে ।
কেন কাদে কেউ জানতে পারে না । চাপা কষ্ট নিয়ে যখন শিমুল তলীর বাস ষ্টেশনে তখন ফটো কপির দোকানের ছেলেটা দৌড়ে এসে জানায় গত সপ্তাহে মিতালীর বিয়ে হয়ে গেছে -ছেলে আমেরিকায় থাকে ।
মিতালী এখন টাকার উত্তরায় ।
শামীম অসম্ভব চ্যিকারে কেদে উঠে ঠিক তখনই একটি প্লেন ঠিক তার মাথার উপর দিয়ে যায় ।


ফ্লোরিডা, আমেরিকা
২৯ অক্টোবর , ২০১৮