আজ ক্লান্ত আমি
-জিহাদ হাওলাদার


একদা এক রাস্তা দিয়ে একজন পথিক হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ, সে দেখতে পায় রাস্তা দিয়ে একজন দরিদ্র (ছেড়া ফতুয়া,এলো-মেলো চুল, পায়ে ছেড়া চটি,এক বোঝা দাড়ি) লোক হেটে যাচ্ছে।


লোকটিকে দেখে পথিক বললঃ


পথিকঃ এই যে শুনবেন?
লোকঃ জ্বি বলেন,কি বলবেন?
পথিকঃ জ্বি-না-মানে, বলতে চাইছিলাম আপনাকে অস্থির মনে হচ্ছিল কেন জানি? আপনি কোথায় যাচ্ছেন?


লোকটি পুনরায় হাটা শুরু করলো কোনো জবাব না দিয়েই,  পথিক তার আচারণে কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।
অতঃপর পথিক ও হাটা শুরু করলেন।
(পথিকের নাম ছিল রামু; গন্তব্য পথ'; মনের অজানা পথে হাটা। বয়সঃ ২৫-২৮ শ্যামলাবর্ণের গায়ের চামড়া, সুন্দর তার চাঁদমুখ, পরিপাটি চুল সাথে বড় ব্যাগ। তার মা-বাবা করোনা ব্যাধীতে অসুস্থতার বাড়ে পরলোক গমন করছেন। আপন বলতে ছোট একটা বোন ছিল। কিন্তু সে ও পানিতে পরে মারা যায়। তবে অনেক চেষ্টা করছিল রামু তার বোনকে বাঁচাতে।  কিন্তু টাকা এবং সময় দুটোর কাছেই হেরে যায় রামু। তার একজন বন্ধাবী ও ছিল, তাদের  বন্ধুত্ব অনেক মধুর ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কাছে তাদেরকে পরাজিত হতে হয়। এরকম এতিম বেকার ছেলের হাতে সন্তানের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, বলেই তার বান্ধবীকে দূরে বিবাহ করিয়ে দেয় তার বাবা-মা।
এই কঠিন সিদ্ধান্ত রামু মেনে নিতে পারেনি। রামু মনের দুঃখে কঠোর ও অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অজানা পথে হাটার কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।


রামু হাঁটতে হাটঁতে ছাড়িয়ে আসে তার এলাকার সীমানা। তার সকল টাকা-পয়সা ও যা কিছুই ছিল সকল কিছু নিয়েই তার যাত্রা শুরু করে। তিনি হাটঁতে হাটঁতে ক্লান্ত  হয়ে গিয়েছেন। একটা বড় বট গাছ দেখতে পান দূর থেকে, দৌড়ে সেখানে গিয়েই মুচড়ে পড়েন তিনি। হাতের ব্যাগ থেকে পানি ও হাল্কা মুড়ি খেয়ে নিজের মনকে সন্তুষ্ট করেন,বিশ্রামে যান। (৩০মিনিট পর)
অতঃপর তার বিশ্রাম শেষ হলে, তিনি আবার পথিকের ন্যায় হাটা শুরু করলেন।  অবশেষে হেটে প্রায় শহরে চলে এলেন, এখানে বিভিন্ন রকমের দোকান ও ঘর-বাড়ী দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান তিনি। এদিকে তার পানি তৃষ্ণা লাগছে,  ব্যাগের পানিতে সংকট। পানির উদ্দেশ্য নিয়ে একটা বাড়িতে ঢুকেন।(ইয়া মস্তবড় বাড়ি, রং-বেরঙের সাজ, কত রকমারি ফলের গাছ)
ভিতরে ঢুকতেই তাকে একজন বাঁধা দিলেন,  হাতে তার লাঠি আর পালোয়ানের মত শরীর।
রামু ভয়ে বলে উঠে,  আমি কিছু করেনি! আমি কিছু করেনি!


দারোয়ানঃ কে তুমি? এখানে কি চাই?
রামুঃ না ইয়ে, মানে,  
দারোয়ানঃ কি বলো? মানে মানে করছো কেন? তোমার নাম কি বাসা কোথায়? কেন এসেছো? কি চাই?
রামুঃ আমি রামু,
দারোয়ানঃ বাসা কোথায়? কেন এসেছ? কি চাই এখানে?
রামুঃ জ্বি আমার বাসা অনেক দূরে, আমি একটু পানির খোঁজে এসেছি।
দারোয়ানঃ আচ্ছা এদিকে আসো।(সে ভালো করে রামুর শরীরের প্রত্যেকটা যায়গায় ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে।)
আচ্ছা ভিতরে আসো আমার সাথে।
[এই বলে রামুকে নিয়ে ভিতরে ঢুকল দারোয়ানটি]


ভিতরে গিয়ে হাঁক দিয়ে হুজুর বলে ডাক দিলেন। ভিতর থেকে বেরিয়ে আসল এক অপরূপা সুন্দরী মেয়ে, ঘোমটা দিয়ে চেহারার সর্বত্র ডাকা, বিশাল এক লেহেঙ্গায় সর্বশরীর ডাকা তার। বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ তিনি। নাম গঙ্গা!
দারোয়ান জিজ্ঞেস করে,


দারোয়ানঃ হুজুর কে ডাক দিবেন, একটি লোক পানি পিপাসায় কাতর হয়ে পানির সন্ধানে আমাদের এই মহলে প্রবেশ করছেন।
গঙ্গাঃ দারোয়ান! আব্বাজানের শরীর ভালো না। তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। আপনি লোকটিকে বসতে দেন, আমি পানি নিয়ে আসতেছি।
দারোয়ানঃ আজ্ঞে! ঠিক আছে। [ভিতরে নিয়ে এসে তাকে বসালেন এবং একটু অপেক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ পরে গঙ্গা পানিসহ সুস্বাদু ফল ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হলেন।]
রামুকে দেখে হতভম্ব হয়ে বললেন দারোয়ান তুমি নিচে যাও।(দারোয়ান স্থান ত্যাগ করলেন।)


গঙ্গাঃ রামু তুমি এখানে কি করে আসলে?
রামুঃ জ্বি আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
(গঙ্গা তার ঘোমটা খুলে রামুর দিকে তাকালেন।)
রামুঃ গঙ্গা তুমি!(গঙ্গাই হল সেই রামুর বান্ধবী)
গঙ্গাঃ হ্যা রামু, আমার এখানে বিবাহ হয়েছে।  তোমাকে দেখিনা অনেক দিন হল। (রামু সকল কথা খুলে বলে।)
গঙ্গাঃ আমি এখানে অনেক সুখেই আছি রামু, প্রথম প্রথম তোমাকে খুব মনে পরতো। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে খুব ভালোবাসে। তার অতিরিক্ত ভালোবাসা তোমাকে ভুলতে সাহায্য করেছে।  তিনি খুবই ভালো একজন মানুষ। আমি তাকে তোমার আমার সকল কথা বলছি। তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এসব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
রামু কেঁদে দিল; আর বললঃ
যদি ভুলে যাও কখনো এই আমাকে,
ভুলে যেও না এই আমার স্মৃতিকে।


রামু কোনো খাবার না খেয়েই স্থান ত্যাগ করলেন। গঙ্গা তাকে বাধা দিলেন না।
অবশেষে মনের দুঃখে পাহাড়ের দিকে হাটা শুরু করলেন। হাঁটতে হাটঁতে চলে আসলেন ছোট একটা পাহাড়ের দিকে,অল্প জঙ্গলের মত পাহাড়ি এলাকা। কোনে মানুষের চিহ্ন এখানে দেখতে না পেয়ে তিনি একটু ভয়ে কুঁকড়ে মুকরে যাচ্ছিলেন।
তবুও তিনি পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। চোখে অশ্রু টলটল  করছিল, মনের দুঃখে তিনি বেঙে পড়ছেন। পাহাড়ের দেশে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছেন।  অবশেষে চলে আসলেন পাহাড়ের গায়ে,  দেখলেন ছোট্ট একটা ভাঙ্গা ঘর। দেখেই মনে হলো তার এটা হয়ত অনেক যুগের পুড়ানো কোন ঘরের অংশবিশেষ।
তিনি ঘরের ভিতরে ঢুকলেন চোখে জ্বল, করছে টলমল।

হঠাৎ একটা ভয়ংকর আওয়াজ শুনলেন! তিনি চিন্তিত মাথায় ঠান্ডা মস্তিষ্কের মাধ্যমে চিন্তা করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু এখন তার মাথায় কিছু  আর আসে না শুধু চিন্তা আর চিন্তা। তার মাথার শিরা-ধমনী গরম হচ্ছে,  তবুও হাল ছাড়লেন না। ঘরের গভীরে যাচ্ছেন তিনি,  হঠাৎ পায়ে কি জানো বাঝল, পড়ে গেলেন তিনি। ভয়ে ভয়ে হাত দিলেন,  দেখলেন ছোট্ট একটা বাক্স। বাক্সটা  খুললেন,  আহা তিনি অবাক!
বাক্সের ভিতর শুধুই চাবি দেখে ভাবলেন হয়তো এখানে লুকায়িত গুপ্তধন রয়েছে। তিনি ভিতরে যাচ্ছেন আর ভাবছেন আমি ফিরে যেতে পারবো কি? আবার হেসে বলে উঠেন,  আমার তো কেউ নাই! আমার তো কেউ নাই! ফিরে গিয়েও বা কি হবে?


তিনি চাবিগুলো নিজের পকেটে রাখেন। সামনে আগিয়ে দেখছেন বিশাল বিশাল দুটো কালো ধূলোময়লা যুক্ত বাক্স। বাক্সে ঝুলানো রয়েছে বিশাল তালা।  তখন তিনি তার চাবিগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।  তিনি তালা খুলবার জন্য চাবি বাহির করে, তার ওখানের সকল চাবি দিয়ে চেষ্টা করেও খুলতে সক্ষম হয়না।
পরে তিনি আরো গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সামনে তিনি আরে দুটো বাক্স দেখতে পারেন।  বাক্স দুইটা আগের বাক্সের মতই  ভারি ও তালা যুক্ত আর এবার ও ওই চাবি দ্বারা বাক্স খুলতে অক্ষম হন।
আরো গভীরে গিয়ে আবার দুটে বাক্স দেখতে পান। এই বাক্স দুটি লোহার ঝালি দিয়ে তৈরি ছিল। তাই এপাশ -ওপাশে সব দেখা যায়, তিনি ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারছেন প্রত্যাশার চেয়েও অধিক পরিমানে গুপ্তধন এখানে লুকায়িত রয়েছে। কিন্তু তালা দেওয়ায় তিনি শুধুই দেখেই চোখ শান্ত করবার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার মন তাকে হাত দিয়ে গুপ্তধন  দরবার জন্য আকৃষ্ট করে। তখন তিনি দিশেহারা হয়ে চাবি দিয়ে তালা খুলবার চেষ্টা করেন।  হঠাৎ করেই তালা খুলে  যায়!


তার চোখে মুখে হাসির ছাপ, তিনি বাক্স খুলতে দৌড় দেন তিনি। অবশেষে  এত গুপ্তধন দেখে তার মাথা ঘুরে যায়। তিনি এতকিছুর মালিক এটা ভেবেই অস্থির হয়ে যান। হাসতে হাসতে বলেন "আমার কাছে এখন অনেক আছে,  কিন্তু আজ আমার আপন বলতে কেউ নেই।  সে কাঁদতে কাঁদতে হেসে দিলেন আর বললেন।
আজ বড় ক্লান্ত আমি!!!