হ্যালোওও মাই ডিয়ার লিশনার্শ... আপনাড়া ক্যামন আচেন? আমড়া বালো আছি। ডিয়ার লিশনার্শ অ্যাজ কিন্টু ওন্য ডিনের মটো কোন সাঢারণ কোন ডিন নয়। অ্যাজ মহান মহান ইকুশে ফেবড়োয়াড়ী। শেই নাইন্টিন ফিফটি টু সালের অ্যাজকের এই ডিনে আমাডের মহাণ ল্যাঙ্গুয়েজ ওয়ারিওররা বুকের ফ্রেশ ব্লড দিয়ে আমাডের এই মহান বেঙ্গলী ল্যাঙ্গুয়েজ আমাদের গিফট করে গেছেন। সো লেটস গো টু সেলিব্রেট দিস ডে উইথ শোয়িং হাম্বল রেসপেক্ট টু দেম। ডিয়ার লিশনার্শ টাহলে চলুন একন আমড়া একটা আউসম সং প্লে করি... দিল নে ইয়ে কাহা হ্যাঁয় দিল সে, মহব্বত হ গায়ি হ্যাঁয় তুমছে, মেরি জান মেরে দিলবর......


আরে দাদা আমার উপর কি চটে গেলেন? কোথায় যাচ্ছেন? উঠবেন না, উঠবেন না দয়া করে একটু বসুন (পড়ুন) কি ভাবছেন পাগল হয়ে গেছি? আবোল তাবুল যা মুখে আসছে তা-ই বকে যাচ্ছি। তাহলে শুনুন হাঁড়ির খবর। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবন যাত্রাকে শুধু সহজ করেনা মাঝে মধ্যে নিজেকেই দুর্বোধ্য করে তোলে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার পর বাঙ্গালী জাতিরা এক লাফে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই দেশে যুক্ত হয় কথার মেলা। মোবাইলের ক্যারামতিতে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে মন্দিরের ব্রাহ্মণ, গীর্জার পাদ্রী, প্যাগোডার ভিক্ষুকেও প্রায় মিথ্যে কথা বলতে হয় আসন্ন বিপদ মোকাবিলা করতে। ডিজুস কালচারের আগমনে প্রেমের মতো জটিল বিষয়টাও সহজ হয়ে যায় রাতা রাতি রাত ভর কথার গুঞ্জনে। তারপর দেশে আসে এফ.এম রেডিও (Frequency Modulation) শুরু হলো নতুন এক কালচারের। তথাকথিত আধুনিকতার মোড়কে শুরু হলো বাংলা ভাষা বিকৃত করে নানান ঢংয়ে উপস্থাপনার বানিজ্যিক প্রতিযোগিতা।


উপরের প্রথম কয়েকটা লাইন যদি কোন এফ.এম রেডিওর RJ (Radio Jockey) বা উপস্থাপকের মুখ থেকে শুনে থাকেন তবে মোটেও ঘাবড়াবেন না ওটাই হলো আধুনিক বাংলা ভাষা! ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেটে সহ আরো কিছু শহরে এখন এফ.এম রেডিও অনেক বড় একটা গণমাধ্যম। এখনকার প্রায় প্রতিটা মোবাইল ফোনে এফ.এম রেডিও শোনার সুবিধা থাকায় স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী তথা তরুণ সমাজের প্রায় সবাই-ই এফ.এম রেডিওর বিভিন্ন চটকদার কন্ঠের বিকৃত বাংলা শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। যার ফলে সেই বিকৃত বাংলা তাদের ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করে শুদ্ধ বাংলাকে ভুলতে বসেছে। বহির্বিশ্বে চলাফেরা করতে হলে ইংরেজী ভাষার কোন বিকল্প নেই তা সর্বজন স্বীকৃত ও ভোক্তভোগী মাত্রই জানেন কিন্তু যখন দুই বাংলাভাষী একে অন্যের সাথে কথা বলার সময় ফাঁক ফোকর পেলে কিংবা জোর করে দুই চারটা ইংরেজী (অনাবশ্যকীয়) শব্দ না ঢুকালে স্মার্টনেস বা কেতাদুরস্ত ভাবটা যেন ঠিক মত ফুটে উঠেনা।


আমাদের মহল্লার অশিক্ষিত সোয়া মিয়ার কথাই ধরুন ব্যাটা ক'দিন আগেও মানুষের কাছে হাত পাততো দুমুঠো খাবারের আশায়। কিন্তু কি একটা দুই নম্বরী ব্যবসার জোরে তার আঙ্গুল ফুলে ফেঁপে বট গাছ হয়ে গেছে। এইতো ক'দি আগে একটা জার্মান শেফার্ড কিনলো কিন্তু ওটা ত আর বাংলা জানেনা। আসো বললে আদরের সারমেয়টা আর কাছে আসে না ঠিক তেমনি যাও বললেও না গিয়ে সোয়া মিয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তাই সোয়া মিয়া এবার একটা ইংরেজী ওয়ার্ড বুক কিনে প্রিয় জার্মান শেফার্ডের সাথে অতি প্রয়োজনীয় কথা বার্তা আদান প্রদানের জন্য টুকটাক ইংরেজী শিখতে লাগলো। তার বন্ধু হারুন মিয়া সোয়ার এহেন কর্ম কান্ড দেখে জিজ্ঞেস করলো কিরে এই বয়সে তুই কুকুরের জন্য ইংরেজী শিখতে শুরু করেছি তুই কি শিউর ইংরেজী শিখতে পারবি এই বয়সে? সোয়া মিয়া পানের পিক থুক করে ফেলে সহাস্যে বললো ইয়েস আই অ্যাম শুয়োর!


ইদানিং যুবক ছেলে মেয়েদের মাঝে বিদেশ যাবার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে তা দেখে আমার এক বিদগ্ধ বন্ধুকে হেতু জিজ্ঞেস করায় সে বিজ্ঞের মতো জবাব দিলো হবেনা বা কেন বিদেশী কৌটার গুঁড়ো দুধ খেয়ে খেয়ে বেড়ে উঠা শরীর কি আর এদেশে পড়ে থাকবে? আমি বেশ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম কথাটা খুবই যুক্তিপূর্ণ। আমি মনে মনে ঠিক করেছি আমার সন্তানকে কখনো কৌটার দুধ খাওয়াবোনা তারচে বরং স্বদেশীয় খাবার খাইয়ের স্বদেশী করে তুলবো। বাঙ্গালীদের ছেলে মেয়ের নামেও ভিনদেশী নামের ব্যবহার ঢুকে পড়েছে অনেক আগে থেকেই। ভিক্ষুক বাদশা মিয়া থেকে শুরু করে কোটি পতি গরীবুল্লাহ খানের ছেলেমেয়েদের নামেও ইদানিং শোভা পাচ্ছে টম টমি নাট বল্টু ইত্যাদি। সেদিন ফুটপাত ধরে হাঁটছি একটা চায়ের স্টল দেখে চা খেতে ইচ্ছে করলো দোকানীকে একটা চায়ের অর্ডার দিয়ে সামনে পাতা মোড়াতে বসতেই চোখ আটকে গেলো দোকানের নাম দেখে "তেরে নাম টি হাউজ"!


আমার চার বছরের ভাতিজা "রমি" নার্সারীতে পড়ে। ইদানিং লক্ষ্য করছি Yes No এর ব্যবহার খুব ভালো করে রপ্ত করে ফেলেছে। হপ্তায় চার দিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া হলেও তার মা তাকে নিয়ে রোজ সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসেন। আ-তে আমের বদলে সে এখন পড়ছে A-তে Apple. তার মা'কে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যপার সে কি বাংলা অক্ষর গুলো কি শিখে ফেলেছে? উত্তরে জানালেন বাংলার চাইতে সে ইংরেজীতে অনেক বেশি পারদর্শী। আমি আর কোন কথা না বলে চুপসে গেলাম। হয়তো আমাদের পরিবেশটাই পাল্টে গেছে। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার কোন প্রয়োজন বোধ করছিনা। এদিন এলেই আমরা বাংলা ভাষার প্রতি দরদী হয়ে উঠি। ব্যানারে, ফেস্টুনে, গাছের ডালে, দেয়ালে দেয়ালে শোভা পায় বাংলা বর্ণ মালা। এসবকে ছাপিয়ে এই ভাষার মাসে কোন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যদি দেশের প্রথম সারির কোন শিল্পী যদি উর্দ্দু গান গেয়ে দর্শক শ্রোতার মন জয় করতে চান তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই বরং গ্যালারীতে বসে থাকা আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই গান শুনে হাত তালি দিয়ে মনে মনে বলতেই পারেন, আহ! ক্যায়া আচ্ছা গানা হ্যাঁয়, মেরে দিল খোশ হো গায়া...


জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
২১শে ফেব্রুয়ারী, ২০১১ খৃষ্টাব্দ।


বিঃ দ্রঃ এটা কোন কবিতা নয়, কবিতার বাইরে যা বলবেন তাই হতে পারে। কবিতার আসরে কবিতার বাইরে কোন কিছু প্রকাশ করা হয়তো নীতি বহির্ভুত বা ধৃষ্টতার শামিল। আজ দ্বিতীয় বারের ক্ষমা মতো এই আসরে আমি নীতি লংঘন করলাম আমার বিদগ্ধ পাঠক বন্ধুদের সম্মতি বা উৎসাহক্রমে। আশা করি আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমার এই নীতি লংঘনকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন। ধন্যবাদ সব্বাইকে।