কাকভোর পূবের সালোক মোরগের ডাকে
সবুজ দিগন্তে সকাল পাখিদের কলতানে ,
প্রহর ছাড়ানো চাষ জমি জুড়ে রোদের খেলা
বয়স মাপা গাছের ছায়াঘেরা সাঝার পুকুরে
সিঁদুরের টিপ পরা যুগের মাছেরা খেলে,
দৃষ্টি সীমার চৌহদ্দি ধরে দীর্ঘদেহী দাদুর
সাত ছেলের অভিন্ন দিনভরের সংসার।
গোয়াল ভরা গরু ছিল মানুষেরই সাথী
মানুষের মতো আরও পুষ্যি ছিল বেশী
প্রভু ভক্ত সারমেয় যত গুলো ছিল
বিড়ালের সংখ্যাও অগুন্তি মানো
চড়াইের ঘর-বাড়ি খড়ের আটচালে
টিয়ার বাচালতা অসয্য দিনে রাতে;
সুখের বেড়া টানা শান্তি খোলামেলা
স্বাদ-আল্লাদের তলানি পড়েনি কোন বেলা
আজন্ম জীবন সাধ স্বস্তির শ্বাসে।


বাবার অটুট সুখ আটচালা ঘরে
ছড়ানো উঠোন গোবরছড়ার সকালে;
জামরুল-লিচু-সবেদা-কলা কত-শত ফল
পুকুরে পোনা মাছ খাবি খায় সকালের ঘাটে
নারিকেল সারি সেঁকুলের বেড়া ঘেরা
দৃষ্টি ছাড়িয়ে যাওয়া বাড়ির বাগানে,
প্রাতকর্ম দুরের পোতায় নারকেল সুপারি
কাশবন ঘেরা পুকুরে ভাষা মাছ ভরা
সাপ ব্যাঙ কচ্ছপের খেলা সারা বেলা
আম বাগানে কসরত পশ্চিমে বাঁশঝাড়ি,
উঠোনে পাকা ধান ফষলের গাদা
ঝুনো নারকেল ধানে ভরা গোলা
ডোল ভরা চাল সরষে তিল আর কত ডাল
সোনামূগ-মুসুর-অড়হর-কলাই-বুট-ছোলা
চালেরও প্রকার ছোট মোটা স্বাদ-সুগন্ধে
পান সবজি বাগান ছিল আটপরে শাড়ী
ঘুরে এলে দু-সাঁজের পাত পোরা ঝুড়ি
আলু কপি মূলো গাজর বীট পালং শীতে
গরমে ওল-মুখি-ভোট-মান-পদ্ম কচুর আবাদে,
জীবনে জোয়ার ছিল পয়সায় চলে যেত দিন
টাকার অভাব বোধ ছোঁয়নি সে-প্রানে।


আমরা উঠেছি এসে বর্গফুটের ফ্লাটে
দুটো ঘরে সংসার মাটি গেছে ছেড়ে;
অঢেল সুখ নিয়ে সুখ খুঁজি বেড়ে
ব্যাঙ্কে টাকা আছে শান্তি টানাটানি,
একটা লঙ্কা চারা টবের মাটিতে মৃতপ্রায়
না পেয়ে আলোর ছটা সবুজে কটা-রঙ ছায়
আমরাও ধুকছি এই বুঝি দমবন্ধ হয়
হাত পা লেগে গেছে ছড়াবার জায়গা কোথায়
আজীবন পড়ে না পা মাটিতে ও ঘাসে
মাথা ঊঁচু করা নিয়ত প্রয়াসে নিচু হয়ে থাকা,
দাহনের কাঠ বাড়া মরনের পরে
এত লোক দেখি দায়হীন অবস সমাজে
বিদ্যূত-চুলা শকটে বায়ু-মেঘে মেশা
আবার আসব না ফিরে এই ধরাধামে
আশাহত নই তবে জায়গার একান্ত অভাবে।