সেই কবে থেকে শুরু পথ চলা,
নিজে থেকে যাবেনা তা বলা।
জীবন জীবিকার এই লীলা ভূমিতে,
চেনা অচেনা কত পথে অলিতে গলিতে।
শত সহস্র প্রিয় মুখ যারা ছিলো চেনা,
সময়ের তালে নিরুদ্দেশ তাই আজ অজানা।
শিশু হতে শৈশব পথে প্রান্তরেই দুরন্তপনা,
সেখানে ছিলোনা ভেদ, ছিলোনা কোন সীমানা।
কিশোর হতে যুবক হলো পার আড্ডায়,ফুর্তি আর মাস্তি,
স্কুল/কলেজ ফাঁকি দিয়ে গ্যারিসনের সিনেমায় ছিলো যত শান্তি।
আমাদের সময়ে ছিলোনাতো স্মার্ট ফোন ,
তাই গোল হয়ে বসে মাঠের ঐ কোণ ।
কত মজা গল্প আড্ডা আর গান,
মুরাদ মামার কন্ঠে জুড়াইতো মনো প্রাণ।
স্কুলের বেঞ্চি আর বারান্দায় কত স্বপ্ন আছে আঁকায়,
যাকিনা দোলা দেয় মাঝে মাঝে মোর নিজ ভাবনায়।
প্রাইমারীর বন্ধু দীপ্ত , জহুরুল , রহুল, আরো অনেকের মধ্যে টনি ,
যে যার মত আছে হয়না আর আগের মত জানাজানি ।
স্যারের টেবিলে কলম খেলতাম ক্যারামের আদলে ,
আহ্ কত মজা ছিলো , এখন পাইনা আর অন্য খেলা খেলে ।
ছুটির ঘন্টা দিতে যত দেরী ,
এক ছোটে দিতাম সবাই খেলার মাঠটা পাড়ি ।
বাড়ি এসে কোন মতে বই খাতা রেখে ,
উতালা থাকতো মন, মা কি দিয়ে দিবে খেতে ?
পুকুরের ওপাশ থেকেই মায়ের হাতের ইলিশ ঝোলের সেই ঘ্রাণ ,
সাথে মোটা ভাত যা আজও স্মৃতীতে অম্লান ।
রেললাইন , কালিবাড়ী আর সাকোতে বর্শিতে মাছ ধরা ,
আমি , সাইদুর আর শহিদুল হতাম যেন দিসেহারা ।
বিশ পচিশ জন গ্রুপের লিডার ছিলো আলিম ভাই ,
কত কাছের মানুষ তবুও এখন দেখা মেলা দায় ।
আমাদের সবার প্রাইভেট শিক্ষক ছিলেন নাম তার আলাউদ্দিন,
আমার শিক্ষা ক্ষেত্রে শোধ হবে না তার ঐ ঋণ ।
মাদ্রাসা, স্কুল , আর প্রাইভেট হলে কামায়,
ছিলোনা সাধ্য কারো তার মার থামায়।
অনেক ভালোবাসা আর শাষণের ফলে বুঝি পৃথিবীতে আমি কত নগন্য ,
তার শাষণে আমার এ জীবন অনেকটাই হয়েছে ধন্য ।
ক্রিকেট /ফুটবল খেলায় আমি মিজান , সাদ্দাম, খাইরুল আর মিঠু ,
রান / গোল নিয়ে কত চেচাচেচি হারতে চাইতোনা কেউ কভু ।
ব্যাট হাতে দেখলে দাদী বলতো খ্যাটি নিয়ে কই যাস ?
আজও খুব শুনতে ইচ্ছে করে সে কন্ঠ দিবস রজনী বার মাস ।
ছোট বেলার নিজের তৈরী সাধের সেই সোলেমানী তলোয়ার ,
যা নিয়েই তৈরী থাকতাম সাত সমুদ্র দিব বলে পার ।
লাটিম , গুলি , গুল্লাছোট , বদন আর পলানটুক্কা ,
ঝান্টু, কানামাছি ,ঘূড়ি আর লুডুতে সেই ছক্কা ।
চিনচিন করে আজও সে খেয়ালে আমার বুকটা,
কতইনা উজ্বল উচ্ছল ছিলো সে সময়ের দিনটা ।
কত স্মৃতী শরীফ , হালিম কে নিয়ে ,
মনোকৌঠায় আজও আছে ঘিরে ।
খেজুর ডালের গরু, মহিষ আর ঘোড়া আমরাই বানাইতাম ,
আম কাঠালের পাতা টাকায় তা আবার বিক্রিও করিতাম ।
আইসক্রিমের মাইকের শব্দ কানে আসে ঐ দূর থেকে ,
তা নিয়ে তৈরী হতাম যা লুকিয়ে রেখেছিলাম ঢেকে ।
কতদিন আব্বার রেডিও/ লাইটের ব্যাটারি দাতের কামড় বসিয়ে ,
দেখিয়ে বলতাম এই দেখ নরম হয়েছে বরফ খায় গিয়ে ।
এখনো মনে আছে কালো দাদীর সেই স্বাদের কেক ,
যা খেতে মনে থাকতো উড়ন্ত সম উদ্বেগ ।
সময় কাটতো বড়আব্বার পোষা লাল কুকুরের সাথে ,
অন্য কুকুরের সাথে মারামারিতের পারতোনা তাই থাকতাম ওর পিছে ।
রোডের ঔ বাটুল গাছের মূলে উঠে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ,
সে সময়ের গাছ গুলো যায় নাতো আর দেখা ।
ঐতিহ্যের সে মাচা কাটতো সময় অনেক ,
সেখানে ঠাই ছিলো সবার কে গরিব কেবা ধনেক ।
গ্রামের পাশের সে জুলা আজো আছে তার জায়গায় ,
শুধু ছেলে বুড়ো মিলে এক হয়ে মাছ ধরা আর নাই ।
ঘুম থেকে উঠে স্যাড়ে করে দেয়া মায়ের হাতের সেই গুড় আর ভূজি,
শীতের সকালটা শুরু হতো সাজাল পোহাইতাম রোজি ।
পড়ে থাকতো মন নানীদের সেই বাড়ী,
যেতে না দেওয়ার কারণে করেছি যে কত আড়ি ।
হাই স্কুলের স্মৃতী সব থেকে ছিলো বড় মধুর ,
যদিও স্যারদের মারের কথা মনে পড়লে বুক এখনো করে দূর দূর।
বাদসা , বুলবুল , পল্টন , রহিম মেহেদি , আজিম , বাবুল আর বকুল ,
তাদের সাথে কাটানো সময় এখনো মন থাকে ব্যাকুল ।
ওয়ান থেকে ইন্টার পর্যন্ত সব থেকে বেশি সময় এক সাথে ছিলাম ,
আজিম তুই ওপারেতে ভালো থাকিস সে দোয়ায় তোকে দিলাম ।
জানতাম না এভাবে চলে যাবি মরণ ক্যানসারে ,
তোর কথা মনে পড়ে বন্ধু আজও ভিষমভাবে ।
ইন্টার স্কুল খেলায় , কিভাবে যেন পুড়ায় রাশেদ আমায় ভুলায় ,
ভালো গোলকিপার সে , সে কথা আমায় বুঝায় ।
তার কথা শুনে, সালাউদ্দিনের কথা না শুনে ,
১১ টা গোল খেলাম আমরা সকলে গুনে ।
মমিনুল স্যারের শিখানো খেলা লাফ ধাপ ও ঝাপ ,
পা ভেঙ্গে চিল্লাইছিলাম ডেকেছিলাম মা আর বাপ ।
পড়া মিছ করায় , অংক না পারায় কানে ধরে ঘুরতে হতো সাড়ি সাড়ি তালগাছ ,
মনি স্যারের সে শাষন , হাড়ে হাড়ে টের পাই এখন বুঝি কতো ভালো ছিলো আজ ।
হই হুল্লোর পিকনিকের আনন্দ কিযে ছিলো বাসে ,
ভালোলোগার প্রয়াসে এখনো বারে বারে মনে আসে ।
মোশাররফ স্কুলের সকল স্যাররা ছিলো অসাধারণ ,
সকল কাজে কুমেদ কাকারই ছিলো যত বারন ।
রসালো গল্পতে মাতাইতো ক্লাস আমাদের জামাল স্যার ,
সবথেকে বেশি মনোযোগী ছিলাম নইতো অন্য ক্লাসে আর ।
বরাত স্যারের শুনিপুন শিক্ষা শৈলী আর আপডেট ভার্শনের শাস্তি,
এর চেয়ে বেশি বিনোদন কিবা আর হয় কি ?
হেড স্যার পড়া ধরতো তাকিয়ে থাকতো বইয়ের পাতায় ,
সে সুযোগ কাজে লাগাইতাম পাশের বন্ধুর বইয়ে তাকায়।
এখনকার সময় বন্ধু আর বান্ধবীদের দেখি কত মিল,
আমাদের সময়েই ছিলো যত গরমিল ।
সাবিনা , রুম্পা , নীলা ,ইতি, সুস্মিতা, অনেকের মধ্যে আরো তুসি
ঝগড়ায় ছিলোনোতো না কেউ কারো জুড়ি ।
বকুল মামা চিমটিতে ছিলো বড়ো পটু ,
বাদশার মাস্তানিতে সবাই আবার কাবু ।
স্যারদের কাছে বলে দেয়ার অভ্যাস ছিলো বেশি রহিমের ,
তাইতো একদিন মেঝ মামা আমায় মার দিল জম্মের ।
সেদিন টিফিনে নানি বাড়ি গিয়েছি খেতে ,
মামা নানিকে বল্লো তোমার নাতিকে আজ দিয়েছি মার জেতে ।
ষ্ট্রোক হওয়া সত্ত্বেও দেখেছিলাম বুকের তোলপার তার চেহারায় ,
সে কথা মনে পড়ে আজও পানি আসে দুচোখের কিনারায় ।
ভালোবাসার হাত গুলো এখন আর মাথা বুলাইনা,
সাড়া পৃথিবী জুড়ে এমন ভালোবাসা আর পাইনা।
ঈদের রাতের সে সময়ের হইচই,
সে মজা এখন আর পাই কই ?
অনেক ভালো লাগার মাঝে সব থেকে বড় ভালো লাগা,
সেই ছোট থেকেই বাবা মা আর ভাই বোনের অসীম ভালোবাসা ।
সবশেষে একটি কথা জানাই,
স্মৃতীতে মধুময় আমার ছেলে বেলা, বিদায় ।