ছত্রাক


আছি আমি শুয়ে লাশকাটা ঘরে ,
নগ্ন কলেবরে চোখ ঠিকরে, লাশের গাদার মাঝে !
জন্মলগ্নে ছিলাম না বেওয়ারিশ ,
মা-বাপের একমাত্র ফুটফুটে বিশেষ স্নেহাশীষ I
বিধাতারে করলো কে যে নালিশ ! -
আধপেটা খাওয়া ঘরে “ফুল্লোরা”, এ কেমন আশীষ !-
অভাবী ঘরে দু’কলম অক্ষর জ্ঞান হতে না হতে ,
যোগ দিলাম জোগালীর কাজে ; বাপ-মা যেথায় জন খাটে মাঠে-ঘাটে I
পড়েছি সবার নজরে বয়সের ধাপে ধাপে ,
অভাব বেড়েছে পাল্লা দিয়ে সাথে I
বয়সন্ধির গোড়ায় পড়শীর হাত ধরে ,
পেলাম শহুরে কাজের খোঁজ I
সান্তনা দিল সবে, এবার মিটবে হাভাতে রোজ I
অন্ধ মনে ফুটলো যে আশ, মন্দ দিন এবার হবে বুঝি নাশ I
বুঝিনি অপেক্ষায়মান বিভীষিকা ,
দুর্বিষহ জীবন প্রতিক্ষণ যাতনায় ভরা I
অদৃষ্টের পরিহাসে সাদা বিছানা ভরল লাল সাজে ,
তীব্র যন্ত্রণায় সাদা মুখ-বুক রাঙালো আমার কঠিন লাল রঙে ;
তবে পেয়েছিলাম সেদিন প্রথম যৌবনের স্বাদ ,
জোৎস্নার আলোয় ‘তাকে’ জড়িয়ে ধরে কেটেছিল সারারাত I
সে বলেছিল আসবে আমায় নিতে ,
হাত ধরে নিয়ে যাবে মানুষের সমাজে I
বুঝিনি ভালোবাসা সে তো নয় ,
শরীরের তৃষ্ণা মেটানো তাই যে হয় !
হিংস্র কুকুরগুলোর রাতের পর রাত ,
খুবলে খেয়েছে আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছাকে !
সকাল হলে মাসি বলে, ‘তুই যে আমার 10 নম্বর কোঠের – পতিতা , নাম দিলাম মমতা ’
‘খাওয়া-পরার বদলে দিবি তুই শরীরটা, পাবো আমি টাকা I’
হল বছর চারেক পার ,
লাইনে দাঁড়িয়ে মেকি চোখ খিদে মেলে -
রোজ রোজ সেজেগুজে “ফুল্লোরাকে”
বেচতে ভালো লাগেনা আর !
দিনে দিনে হয়ে গেছি চেতনাহীন মাংসপিণ্ড ,
রেখে কি লাভ প্রাণহীন এ হৃদপিণ্ড ;
অপেক্ষা করবো আর কার জন্য ?
একখণ্ড দড়ি তাই নিলাম আপন করে ;
তোমারই পথ চেয়ে চেয়ে  -
নিলাম বেছে সোজা রাস্তা ,
মুক্ত করলাম বাপ-মায়ের বোঝা I
মুক্তি দিলাম ‘তোমাকে ! –‘
মুক্ত করলাম নিজের পাপী শরীরটাকে !
রেহাই দিলাম বিধাতাকে সকাল-সন্ধ্যে শাপান্তর হতে -
শান্তি পেলাম এ জীবনে লাশকাটা ঘরে
তোমারই পথ চেয়ে চেয়ে .... !
দেখা দিও এবার, খোঁজ যদি মেলে আমার
নগ্ন কলেবরে দু’চোখ  ঠিকরে, দেখব ‘তোমাদের ‘একটিবার I