কক্সবাজার থেকে ইনানি বিচের
যাবার রাস্তায়
একটি পুরনো কবরস্থান পড়ে।
কবরস্থানের নাম"দক্ষিন পেঁচার দ্বীপ
কবরখানা"! গত মাসে কক্সবাজার
যাবার পথে কৌতূহলবশত...
গাড়ি থেকে নেমে যাই
সাইনবোর্ড দেখে।
রাস্তা ধরে হেঁটে ১০ মিনিট হাঁটার
পর কবরস্থানের দেখা পেলাম।
ভাঙাচোরা একটা পুরনো কবরস্থান।
মাঝে বিরাট এক অশুথ গাছ।
আসে পাশের
রেলিং গুলো ভেঙ্গে গেছে।
আমি গাড়ি থেকে একা নেমেছিলাম।
সাথে মামা এবং উনার পরিবারের
সবাই আছে। তবে উনারা আমার
সাথে না এসে রাস্তার পাশের এক
দোকানে চা নাস্তা খেতে লাগলেন।
যাই হোক,
আমি চারিদিকে ভালো করে খুঁজেও
কাউকে পেলাম না।
আরো খানিকটা এগিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ
করলাম। পাঠক বাড়িয়ে বলার কিছু
নেই, তবে দিনের আলোতে আমি খুব
সাহসী! ভয় ডর যা লাগে তা রাতের
অন্ধকারে। কবরস্থানে পারা দেয়ার
সাথে সাথে একটা হিমশীতল
বাতাস বয়ে গেলো। শীতের দাপট
কমে গেছে এখন। তাই আমার
গায়ে একটা হালফ হাতা হাওয়াই
শার্ট। এতক্ষণ তেমন একটা টের
পাচ্ছিলাম না সমুদ্রের পাশের
ঠাণ্ডা হাওয়া তবে কবরস্থানে ঢোকার
সাথে সাথে কেনো যেনো গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো শীতে।
মাটি ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে।
আসে পাশে কাউকে না দেখে ভাবলাম
ফিরে যাবো ঠিক তখনই চোখের বাম
কোণে কিছু
একটা নড়ে উঠতে দেখলাম। এক
পা দুপা করে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম
এক বুড়ো লোক। চোখ বন্ধ
করে কি যেনো বিড়বিড় করছেন।
উনাকে ডিস্টার্ব
করবো কিনা বুঝতে পারলাম না।
এতক্ষণ যাবত ঘুরছি,
কারো দেখা পেলাম না, এখন হটাত
এই
বুড়ো কোত্থেকে এলো বুঝতে পারলাম
না।
আস্তে করে গলা খাঁকারি দিলাম।
সাথে সাথে বুড়োর বিড়বিড়
করা থেমে গেলো। তবে চোখ খুলল
না। নিচু কিন্তু স্পষ্ট গলায় জিজ্ঞেস
করলো, কি চাই? উনার
আচরণে আমি কিছুটা বিভ্রান্ত
হলাম। আমতা আমতা করে বললাম,
না মানে ইয়ে কবরস্থানের
সাইনবোর্ড দেখলাম রাস্তা থেকে,
তাই একটু দেখতে এলাম আর কি!
বুড়ো তখনো চোখ খুলে নি। বলল,
কবরস্থান দেখার কিছু নেই।
এখানে অনেক রকমের জিনিস
ঘুরাঘুরি করে। হুট
করে পুরনো কবরস্থানে ঢোকার
আগে কাউকে সাথেনেয়া ভালো।
নাহলে বিপদ হতে পারে।
আমি বললাম, দিনের
আলোতে কিসের ভয়? এবার
সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল বুড়ো।
বলল, দিনের আলোতেও
তারা আসতে পারে।
সাবধানেচলাচল করা ভালো। মঙ্গল,
অমঙ্গল দুরকমের বায়ু আছে। মঙ্গল বায়ুর
পরেই অমঙ্গলবায়ু আসে।
আমি আরো কিছু জিজ্ঞেস
করতে নিলাম কিন্তু বুড়ো কড়া গলায়
বলে উঠলো, এবার গাড়ির
দিকে যাও। তোমার ছোট মামাত
ভাই রাকিব গাড়ির
দরজা লাগাতে গিয়ে হাতে ক্যাঁচা খেয়েছে।
তোমার মামা মামি দুজনেই খুব
অস্থির। তোমার মোবাইলে কল
দিচ্ছে তারা কিন্তু তোমার
নেটওয়ার্ক নাই তাই ফোন আসছে না।
আমার চোখ যেনো কোটর
থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবে! এই
বুড়ো এইসব কি বলে?
ব্যাটাহয়তো পাগল ছাগল, কিন্তু
রাকিবের
নামটা জানলো কিভাবে?
আঁধারে ঢিল মেরেছে হয়তো।
সেখানে থাকাটা আর নিরাপদ
মনে করলাম না। পিছন
ফিরে হাঁটা দিলাম। হটাত খেয়াল
হলো, লোকটির শরীরের উপরের অংশ
দেখা গেলোও নিচের
অংশটি দেখিনি আমি।
সেটা কি মাটিতে পুঁতা ছিলো?
ঘার ঘুরিয়ে দেখে আমার
হৃৎপিণ্ডটা একটা বড়সড় লাফ মারল।
বুড়ো তো দূরের কথা,
কারো টিকিটা পর্যন্ত
নজরে আসছে না।
তবেবুড়ো যেখানে বসে ছিলো সেখানে একটা গরত
মতন দেখলাম।
এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম
এটা একটা ভাঙা কবর। অনেক পুরনো।
ভিতরে সূর্যের
আলো পৌঁছাতে পারছে না।
আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম।
ঘুরে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে চললাম
গাড়ির দিকে।দৌড়ে আসার
ফলে ১০ মিনিটের
রাস্তা হয়ে গেলো ৩ মিনিটের
দূরত্ব। দূর থেকে দেখলাম
মামা গাড়ি ঘুরিয়ে কক্সবাজারের
দিকে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পিছনের
সিটে মামি রাকিবকে বুকের
সাথে চেপে ধরে আছেন।
দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
এবং সাথে সাথে জানতে পারলাম,
গাড়ির
দরজা লাগাতে গিয়ে বেখেয়ালে হাতেক্যাঁচা ।।