রাস্তার পাশে দাওয়ালটা দেখে  থমকে দাঁড়ালো অচিন্তবাবু । অনামিকা কে সে ভোলেনি । দাওয়ালটা যখন তৈরি হচ্ছিল অচিন্ত র বয়স ছিল 10 । বাচ্চুকাকু বলেছিলেন এখানে বড়ো শপিংমল হবে । জিনিস পত্তর কেনাট জন্য আর শহরে যেতে হবে না । কিন্তু অচিন্ত আর অনা র এটাই ছিল লুকোচুরি খেলার এক মাত্র সঙ্গী ।
অচিন্তর বয়স এখন প্রায় 49 ।মাথায় কাঁচাপাকা চুল আর বুকের নীচে অল্প ভুড়িও হয়েছে । বাবা মারা যাবার পর তার পৈতৃক সোনার দোকান টা তার হয় আর মাত্র 7 বছরে সেটা ফুলেফেঁপে এক বড় জুয়েলারি শপ তৈরি হয়েছে । আদিত্য জুয়েলারি ।
অনেক দিন পর গ্রামে এল অচিন্ত ।আসলে আদিত্য জুয়েলারির শাখা এখন তাদের নিজের গ্রামেও হয়েছে ।


দেওয়ালের গায়ে এখন ফাটল ধরেছে র ছোটবেলার খোদাই করা অচিন্ত র আনার নামটা এখোনো আছে । এইটা তখনই লেখা হয়েছিল দোসরা  জুলাই ।আনার জন্মদিন । তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিল অচিন্ত । আর পড়া সোনা করার জন্য বাইরের কলেজে এডমিশন হয়ে গেছিল । অনেকদিন ধরে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে অনেকের একটা সোনার লকেট দিয়েছিল অচিন্ত জন্ম দিনে । আনার  চোখে জল ছিল সেদিন । গলার লাল কারের সাথে লকেট তা পরে বলেছিল " কেমন লাগছে অচিন্ত দা ? " বলেছিলাম খুব ভালো । তারপর অচিন্ত বাইরে চলে যায় আর পরে জানতে পারে আনার বিয়ে হয়ে গেছে কোনো এক সরকারি কর্মচারী সাথে ।
পুরোনো দিনের কথা হঠাৎ মনে পড়ে ভালোই লাগতে লাগলো অচিন্তর ।


দোকানে ঢুকতেই ডোনা অর্থাৎ অচিন্তর সেক্রেটারি জানায় আজকের কিকি বিজনেস হয়েছে । একটা সোনার ঘট 7590 , একটা নেকলেস 14750 । আর একটা সোনা কে যেন বন্দক রেখে গেছে আর তার জন্য নিয়ে গেছে 10000 টাকা । ডোনা জানায় এক বৃদ্ধা এসেছিলেন তার স্বামী খুব অসুস্থ তাই একটা সোনার লকেট বন্দক রেখে টাকা নিয়ে গেছে । আর বলেছেন এটা খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবেন তিনি । সোনার লকেট টা হাতদিতেই চমকে উঠল অচিন্ত এটা সেই লকেট টা যেটা অচিন্ত তার অনাকে দিয়েছিল তার জন্মদিনে । জানলা থেকে সেই দেওয়ালটা দেখা যাচ্ছে । কালো মেঘে বৃষ্টি নামল । অচিন্ত দেখতে পেল সেই দেওয়ালের ফাটল আর তাতে জন্ম নিয়েছে নবজাত শ্যাওলার দল ।।