গতরাতে সুর্মিকে স্বপ্নে দেখলাম।স্বপ্নের ঘোর এখনো মাথায় গেঁথে আছে।ফোন করে সুর্মিকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে:
সুর্মি, তোকে গতকাল স্বপ্নে দেখলাম
সুর্মি বলবে: কী দেখলেন

কী দেখলাম সেটা সুর্মিকে বলা যাবে না।মিথ্যে করে  বানিয়ে বলতে হবে:
দেখলাম- তুই আমি মুখোমুখি বসে
তুই পরে আছিস একটি নীল শাড়ি
তুই খুব হাসছিলি
তোকে মেঘমালার মতো শুভ্র মনে হচ্ছিলো
হঠাৎ তোর মোবাইল বেজে উঠেলো
চৌধুরী অবিনাশ নামে কেউ একজন ফোন করেছে
আমি বললাম- অবিনাশ কে
চিনি না
তাহলে ফোন করেছে কেনো
প্রায়ই ফোন করে
মানে কি
মানে তো উনি জানেন
বাজে বকছিস

তুই হো হো করে হেসে উঠলি
সেই হাসির অর্থ খুঁজতে হলে একটা জীবন কেটে যাবে তবু খোঁজা শেষ হবে না

কিন্তু স্বপ্নে আসলে এসব কিছুই দেখিনি
স্বপ্নে দেখলাম- সুর্মি পরে আছে সাদা জর্জেট শাড়ি
ওর চাঁদ দুটি ফুটে আছে গন্ধরাজের মতো - ঠিকরে বেরুচ্ছে সৌরভ
আমি সেই চাঁদের ঘ্রাণ নিতে চাইলাম আর অনন্তকাল ধরে অপেক্ষমান রইলাম সেই চাঁদের মাঝখানে হারিয়ে যেতে কিন্তু অনন্তকাল আর শেষ হলো না-
এসব কি সুর্মিকে বলা যায়!ভাববে- ছিঃ জাজান ভাইয়াটা খুব বাজে।

আমি সুর্মিকে ফোন না করে মেসেঞ্জারে টেক্সট করি: কিরে, ভুলে গেছিস?

২ সপ্তাহ কেটে যায় সুর্মি তবু টেক্সট সিন করে না
১৫ তম দিনে ফোন করি
ফোন রিসিভ হয় না।ঘটনা কী!
আমি অপেক্ষা করি।সুর্মি নিশ্চয়ই ব্যাক করবে।
না, সুর্মি কল ব্যাক করে না
ঘটনা কী!
আমি আবার ফোন করি
নো রেস্পন্স নো কল ব্যাক
আমার দিনগুলি সব রাত হয়ে যায় আর রাতগুলি গভীর অন্ধকার
সুর্মিকে সেই স্বপ্নের কথা আর বলা হয় না
রাতের বেলা নিজের অজান্তেই সুর্মি সুর্মি বোলে চিৎকার করি
সুর্মিকে কি আমি ভালোবাসি
সুর্মি কি আমাকে ভালোবাসে
না আমি ওকে ভালোবাসি না
সুর্মিও আমাকে বাসে না
তাহলে এই যে চিৎকার করে সুর্মি সুর্মি বলি- এর মানে তাহলে কী? এর মানে কি ভালোবাসা নয়!
আমি আসলেই জানিনা এসবের মানে কি।
মানে খুঁজতেও ভালোলাগছে না,কিন্তু ওর সংগে তো যোগাযোগ হওয়া দরকার।
আচ্ছা ওর কি স্বপ্নের অই চৌধুরী অবিনাশ ছোকরাটার সংগে  বিয়ে হয়ে গেলো নাকি!
হলে তো anyhow খবর পাওয়া যেতো।এমনও অবশ্য হতে পাতে বিয়ে হয়ে গেছে খবর এখনো এসে পৌঁছে নি,
খবর জ্যামে আটকে আছে।
হ্যাঁ,খবর আটকেই ছিলো, সুর্মির বিয়ে টিয়ে হয় নি।
চাকুরীর ইন্টারভিউ ছিলো। এই ক'দিন সিরিয়াসলি পড়াশুনা করেছে।

সুর্মি নিজে থেকেই ফোন দিয়েছিলো:
কেমন আছেন?
ভালো নেই
কেনো?
সেটা কি বোলে বোঝাতে হবে?
হ্যাঁ
কেনো?
কেনো তা জানি না তবে বোলেই বুঝাতে হবে
তাহলে বুঝার কোনো দরকার নেই
রাগ করলেন?
হ্যাঁ
রাগ ভাঙাতে হবে?
হুম
আমি রাগ টাগ ভাঙাতে পারি না
তাহলে ভাঙবে না
না ভাঙুক
তাতে তো তোর কিছুই যায় আসে না,  তাইনা?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তাই
তাহলে রেখে দে
আপনি কি সত্যিই রাগ করেছেন?
না, মিথ্যে মিথ্যে করেছি।
আমি তো চেয়েছিলাম সত্যি সত্যিই রাগ করাতে
হেরে গেলি
মানে?
এই যে যা চেয়েছিলি তা হলো না
মানুষ যা চায় সব সময় কি তা হয়?
না, হয় না।
তাহলে মাঝে মাঝে তো হেরে যেতেই হবে, তাইনা?
হ্যাঁ, তাই।
তবে?
কিছু না
কিছুই না কিচ্ছু না?
"তোমাকেই শুধু তোমাকেই"
বুঝিনি
এটা একটা কবিতার লাইন
কোন কবিতা
"তোমাকে"।শুনবি?
শোনা যায়
খুব একটা ইচ্ছে না থাকলে শুনার দরকার নেই
আহা বড্ড ত্যানা পেচ্চাচ্ছেন
ওকে। শুনাচ্ছি
"ভালো লাগে না কিচ্ছু ভালো লাগেনা
আমাকেও না?
তোমাকেই শুধু তোমাকেই।"
ভালোই
ভালো মন্দ শুনতে চাই নি
আবারও ত্যানা পেচাচ্ছেন?
ত্যানা পেচানোই ছিলো
রাখছি

সুর্মি ফোনটা রেখে দিলো
সেই স্বপ্নের ঘোর আমার এখনো কাটেনি
এখনো আমি গন্ধরাজের মাতাল মাতল সৌরভ পাই
এখনো সুর্মির ৩৬ চাঁদের মাঝখানে অনন্তকাল হারিয়ে যেতে চাই কিন্তু অনন্তকাল শেষ হয় না।

তারপর একদিন আশ্বিনের দিনে একদিন আশ্বিনের রাতে যখব পৃথিবীতে জোৎস্না সবেচেয়ে গাঢ়,সুর্মির ফোন।ওর মনটা কী কারণে খুব ফুরফুরে চনমনে।
কথা বলতে বলতে সুর্মি কোথায় কোন গহনে হারিয়ে যাচ্ছিলো এবং ক্রমাগত হারিয়ে যেতেই চাইছিলো।
ওর আর আমার কথোপকথন সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছিলো যদিও সীমা বলে কিছু নেই তাই সীমা লঙ্ঘন কথাটাও বাতুলতা।
আমি সাহস করে সেই স্বপ্নটি ওকে হুবহু বর্ণনা করে দেই।
যদিও মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম সুর্মি না আমাকে আবার নক আউট করে দেয়!
কিন্তু সুর্মি পরিবর্তে আমাকে যেন কিছুটা প্রশ্রয়ই দিয়ে যায়।
আমিও "বসতে দিলে খেতে চায় খেতে দিলে শুতে চায়" পদ্ধতিতে এগিয়ে যাই।
এক সময় আমি সত্যি সত্যিই ওর ৩৬ ইঞ্চির ঘ্রাণ নিতে নিতে ৩৬ ইঞ্চির খুব মধ্যে ডুবে যাই হারিয়ে যাই হারাতেই থাকি।
সুর্মিও আমাকে হারিয়ে যেতে বলে খুব বেশি ডুবে যেতে বলে।
তারপর আহা তারপর একদিন আশ্বিনের দিনে একদিন আশ্বিনের রাতে যখন পৃথিবীতে জোৎস্না সবচেয়ে গাঢ়, সুর্মির বিয়ে হয়ে গেলো কোনো এক চৌধুরী অবিনাশের সংগে।যদিও আমি কখনো প্রেম নিবেদন করিনি সুর্মিকে,  সুর্মিও আমাকে;তবু ওর বিয়েতে কেমন একটা ধাক্কা খাই।
সুর্মিও কি সেরকম?- নাকি চৌধুরী অবিনাশকে নিয়ে সে অবলীলায়  ডুবে যায় আশ্বিনের দিনে আশ্বিনের রাতে!অবিনাশও হারিয়ে যায় ৩৬ ইঞ্চি চাঁদের গহীনে?
হ্যাঁ,হারিয়েই তো যাবে।চৌধুরী ছোকরা যে ওর হাসবেন্ড। ওর প্রতিটি অস্থিমজ্জা নিংড়ে নেবার সে একমাত্র অধিকর্তা।
যাক না ওরা গভীর করে ডুবে যাক প্রতিটিক্ষণ- আমার তাতে কি!

আমি আর সুর্মিও তো কতো রাত কতো দিন কতো বিষন্ন দুপুর ডুবে গিয়েছিলাম দু'জনে দু'জনার অস্থিমজ্জার ভিতর।
কিন্তু অইভাবে ডুব সাঁতারের পরও প্রেম নিবেদন করি নি আমি সুর্মিকে, সুর্মি আমাকে, আমরা আমাদেরকে।
তাহলে অইসব ডুবে যাবার মানে কি দাঁড়ায় আর ব্যাখ্যাই বা কি?
ব্যাখ্যা কি এরকম যে প্রেম মানেই শরীর নয়। যদি তাই হতো তাহলেতো ওর আর আমার মধ্যে প্রেম হয়েই গিয়েছিলো।
শরীরে শরীর মিশে গিয়েও প্রেম হয় না,আবার অনন্তকাল না দেখে না ছুঁয়েই প্রেম হতে পারে।
কিন্তু না দেখে না ছুঁয়ে এসবও কেমন আঁতলামো মাতলামো আর বিচ্ছিরি লাগছে।

বিতর্ক আর ডিসকোর্সের তবু কি শেষ আছে? মুখ ফুটে বললেই কি প্রেম? সব কিছু কি মুখে বলতে হয়? বুঝে  নিতে হয়।
হায়! কি বুঝে নিয়েছিলাম আমি
সুর্মিই বা কী বুঝেছিলো
তবে কি আমরা বুঝে নিয়েছিলাম আমাদের সেই প্রেম ছিলো শরীরী প্রেম!
আবারও সেই বিতর্ক সেই ডিসকোর্স। শরীর ছাড়া কি প্রেম হয়? প্লেটোনিক বা পেত্রার্কান প্রেম বোলে কি আদৌ কিছু হয়!
হোক চাই না হোক
সুর্মির ৩৬ ইঞ্চির গহীনে হারিয়ে যাওয়া আমার কাছে প্রেমের চেয়েও গভীর আর মহৎ কিছু মনে হয়েছিলো।সেই মাহাত্ম্যের নাম আমার জানা নেই কিন্তু তা ছিলো মহৎ তা ছিল প্রেমের চেয়ে বেশি কিছু কিংবা মহৎ কোনো প্রেম।৩৬ ইঞ্চির মধ্যে যদি না হারিয়ে  যেতাম তখন সেই না হারানোকেও কি প্রেম বলা যেতো?না হারিয়েই কি প্রেম হতে পারে?নিশ্চয়ই হতেই পারে।কিন্তু আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।হারিয়ে যাওয়া কখনো প্রেমের প্রতিবন্ধকতা নয়।হারিয়ে যাওয়া মানে অপ্রেম নয়।হোক প্রেম কিংবা অপ্রেম।৩৬ ইঞ্চির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শিল্প।আর সেই শিল্প সৃষ্টির পেছনে যারা কুশিলব তারাও কি শ্রেষ্ঠ শিল্পী নয়!

সুর্মির ৩৬ ইঞ্চির চেয়ে শ্রেষ্ঠ শিল্প পৃথিবীর আর কিছু নয় অন্য কিছুই নয়।