আত্মীয় স্বজন যারা ছিলো সবাই যার যার বাড়ী ছেড়ে আজ পৌছালো মৃত্যুর বাড়ীতে, একটি অনিবার্য মৃত্যু সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে উন্মুক্ত হয়ে, হঠাৎ কিছু একটা হয়ে যাবে, আসলে মৃত্যুটা বড়ই অদ্ভুত, আমি যখন একবার রাগ করে বাড়ী থেকে চলে যাচ্ছিলাম তখন একটা মৃত্যু হয়েছিলো, কিন্তু সারাক্ষণ উনার পাশে থেকে কতো দুষ্টুমি আর ছেলে বেলার প্রেম কাহিনী শুনাতাম, নানা হাসতেন আর বলতেন বাস্তবটা বড় কঠিন রে যোশেফ ঠাঁই পাওয়া দায়, সেখানে প্রেমের স্থানটা খুব তুচ্ছা, আমি হাসত হাসতে বলতাম তুমি তো বুড়ো হয়েছো মৃত্যুর ভয় তোমাকে পাগল করে দিচ্ছে, তুমি অযথা টেনশন করে মাথাটা খাচ্ছো। নানা বলতেন তুর কি মৃত্যু ভয় নেই? আমি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে নানার চোখে চোখ রেখে বলতাম, শোনো নানা,-জীবন যখন অাছে তখন একদিন মরতেই হবে,! তা তো জানাশুনা।
তো ভয় কিসের? সময় হলে কেউ আটকাতে পারেনা।
কি ভেবে তখন নানা উঠার চেষ্টা করলেন
আমি মাথায় ধরে আবার শুইয়ে দিলাম,
কি যে করো তুমি?
কি বলবে শুয়ে থেকে বলো, উঠা লাগবেনা,
তখন নানার তীক্ষ্ম দৃষ্টি আমার চোখে,
কি অদ্ভুত!
নানার চোখ সবুজ হয়ে যাচ্ছে,
আসলে তোর কথা শুনে ভাবলাম তোকে নিয়ে একটু হাঁটবো,
কি আশ্চর্য!
তুমি তো উঠতেই পারোনা''।
আমি উঠতেই যাচ্ছিলাম,
তুই ই তো আবার শুইয়ে দিলি,
কি হচ্ছে বুঝতে পারছিনা!
আরে নানা তুমি তো গত চারমাস ধরে উঠতে পারো না, একথা শুনে নানা রেগে উঠলেন,
কি বললি?
আমি উঠতে পারিনা?
দেখবি তুই?  
দেখ
আমি উঠতে পারি কি না? দেখ!
এই যা...হ...তাইতো!!
নানা তো সত্যি সত্যিই উঠে গেলো! তেমন অবাক হইনি! হয়তো নানার রোগ সেরে গেছে,
চল....
কোথায়?
তোকে আমার সাথে আসরের নামাজ পড়তে হবে।
এ আর এমন কি? মরার আগে সখ করেছো আমি তো না করতে পারি না,   চলো....
ঘরের সব্বাই অবাক! কিন্তু কেউ কোন কথা বলতে পারছেনা,
তারা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছেনা!
আমরা সোজা মসজিদে চলে গেলাম,
নামাজ সেরে বাজারে গিয়ে দুজন ঝালমুড়ি খেলাম, চা খেলাম, তারপর নানা বেশ কয়েকটা দোকানের খাতা চেক করলেন কারো সাথে কোন দেনা পাওনা আছে কিনা,
না, নাই, সবার দেনা পাওনা মামা শোধ করে দিয়েছে।
দোকান থেকে বেড়িয়ে নানাকে বললাম,
আমার তো মনে হয় তুমি অল্প দিনে মারা যাবে,
তখন নানা আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, মরতে হবে যখন জানি তো ভয় কিসের? বলে হাসলেন। আমিও হাসলাম, বাড়ীতে গিয়ে নানা ওযূ সেরে মাগরীবের নামাজের জন্য অপেক্ষা করছেন,
আমি চলে গেলাম আমার জীবন যুদ্ধে,
যেখানে মৃত্যুর মুখোমুখি একটি দিগন্ত ছোঁয়া ভালোবাসা,
আজ সে ভালোবাসার  মৃত্যু হবে,
কি অদ্ভুত লাগছে সবকিছু!
আজ সবাই হাসবে, কারো বুক ভরবে কারো ভবিস্যৎ ভাঙবে,
শুধু তিনজন কাঁদবে!
যাই হোক প্রেমের কবর দিয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি মধ্যরাতের শিঁকের পথ ধরে,
মৃত্যু হলে তো কষ্ট হবার কথা
কই? কষ্ট তো মনে হয় মৃত্যুর ফুল সজ্জায় নাচতে গ্যাছে,,,
তারপর?
নাইবা বললাম,!::


তিনমাস পড়ে শুনি সেদিন দুটো মৃত্যু হয়েছিলো,
তখনো কষ্ট হয়নি, স্বাভাবিক ভাবে নেবার অভ্যাস অাছে।
তারপর যখন রাগ ভাঙার পর বাড়ীতে এলাম,
কেউ কোন কথা বলেনি, কিছুক্ষণ পর,
দাদা ডাক দিলেন,
গেলাম,,,
দাদার মাথার পাশে বসলাম,
দাদা একটু নড়ে বলে উঠলেন,
আমাকে ক্ষমা করিস;;


কি বা এমন অন্যায় করেছেন?
কপালের হালে কি আর লাঙল লাগে?
যা হবার তা এমনিতেই হয়ে যায়,
কারো দোষ থাকেনা।
বলে চলে এলাম,
আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো,
খাটে গিয়ে শুলাম,
অনেক দিন পড়ে মা তাঁর ছেলেকে পেয়ে ছাড়তে চায়না, সারাক্ষণ পাশে থাকতে চায়,
মাকে বললাম,
মা
আমার মাথাটা এতো ব্যথা করছে কেনো?
মা চোখের বাঁধ ভেঙে ঢুকরে উঠলো,,
আসলে,,,,তুই খুব বোকা ছেলে,,,নাহলে....
নাহলে....
থাক মা,
আমি ঘুমাবো,
অাচ্ছা তুই ঘুমা, আমি তোর মাথাটা বুলিয়ে দিচ্ছি।
আচ্ছা মা.....তুমার হাত আমার মাথায় থাকতে থাকতে যদি আমি মরে যাই তাহলে জীবনে আর কিছু লাগবেনা,,এটা জানো?
মা তক্ষনই আমার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলেন,,,
কি বলছিস সব বাজে কথা, তোর কিছু হলে আমাদের কি হবে?
তোর বড়ভাই আমার কোলে থাকতে থাকতে হঠাৎ  ক্যামন করে যে ওর প্রাণ পাখিটা চলে গেলো আমি বুঝতেই পারিনি, আর তুই এ্যামন কথা বলছিস?
আচ্ছা মা, তুমি যদি ঐ পাখিটাকে ধরতে পারতে তো কি করতে? মা বললেন, ওই পাখির পায়ে ধরে জীবন কাটিয়ে দিতাম য্যানো তোকে অমর করে রাখে।
আর তুমি যদি মারা যাও?
তখন ঐ পাখিটাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো,
তোর কাছে আসতে দিবোনা,
কেনো জানি চোখের জল আটকাতে পারছিলামনা,
তুমি এমন কেনো গো মা?  :S
তুমি আমাকে মরতেও দিবেনা?
চুপ কর, আর কোন কথা বলবিনা,
ঘুমা,
ঘুমানোর চেষ্টা করতে করতে
কখন জানি ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি!
হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙলো, প্রায় বিকেল ফুরোয়, কি হচ্ছে বুঝা যাচ্ছেনা,
মা আমাকে দেখে আসলেন,
তোর দাদা মারা গেছেন,
ও...কখন?
তুই ঘুমানোর পরেই,
আমাকে ডাকোনি কেনো?
তোর দাদা নিষেধ করেছেন,
উনি মারা যাবার অাগে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি বলেছি তুই ঘুমিয়ে আছিস,
তিনি বললেন পাগলটাকে ডেকোনা ও ক্লান্ত ও খুব কষ্ট চেপে রেখে ঘুমিয়েছে, পাগলটাকে ঘুমাতে দাও, ও নিজের বুঝ বুঝেনা,,,মা কাঁদছে,
কাঁদছো কেনো? কেঁদোনা, যা হবার তা তো হবেই।
যা তোর দাদাকে দেখে আয়,
দেখবোনা,,
কি? কেনো?
দাদা কষ্ট পাবেন,
কেনো? এটা কোন কথা?
অবাক হচ্ছে কেনো?
তাই বলে তোর দাদাকে,,,???
থাক মা,,,,,জানাজা কখন?
এইতো কিছুক্ষণ পরেই,
আচ্ছা, আমি কবরের পাশে গিয়ে দেখে অাসি,
কবর খুঁরা হয়েছে কি না,
ওগুলো সব শেষ, তোর মেজো চাচা চলে এসেছে, এখনই জানাজা শুরু হবে, তুই ওযূ করে আয়, আমি বাহিরে গেলাম, দেখলাম অনেক মানূষ, বাড়ীর সব জায়গা ভরা,
জানাজা শেষ হলো,  সবাই যার যার মতো করে চলে গেলো, আমি সন্ধার পরে দাদার কাছে গেলাম, দাদাকে দেখা যাচ্ছেনা, তবুও বললাম, আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন,
সেদিন ওনাকে একটা গল্পও শুনিয়েছিলাম, মনে আছে কি না, একদিন দেখা হলে জিজ্ঞেস করবো,
আজ কতোদিন পরে আবার ওনার ছোট ভাই আমার মেজো দাদা, উনারও একই অবস্থা, তবে উনি দুদিন ধরে কথা বলতে পারছেননা বলে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছিনা, উনাকে শুধু বলতে চেয়েছিলাম, এখন তোমার কেমন লাগছে, ভয় করছে নাকি, তবে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, তোর বৌ কে মনেহয় দেখতে পারবোনা রে,,, একটা ছবি দেখাবি? আমি আমার ফোন বের করে দুজনের একটা এট্রাস্ট ছবি দেখালাম, উনি হেসে বললেন, তোদের দুজনের হাসিটা একই রকম, দোয়া করি তোদের স্বপ্নটাও যেনো একই হয়,তোর বৌয়ের নাম কি? আমি বললাম শিউলী, ওর কে কে আছে? মা, ভাই আর ও,
বাবা নেই?
না, মারা গেছেন,
ওহ.....মেয়েটা মনেহয় খুব দুখী,!
দুঃখ তো মানুষের জন্যই দাদা।
আসলে তুই সহজ ভাবে কিছু নিতে পারিসনা, তবে এটা খারাপ না, ভালোই। কিন্তু তোর কিছু একটা করা দরকার, এইভাবে কবিতা টবিতা লিখে জীবন চলেনা, একটা কিছু কর,
করবো দাদা, তবে চেষ্টাও করেছি, হয়না,
কেনো?
চাকরী করতে কপাল লাগে দাদা, আমার কপাল তো পোড়া তাই আসতে চায়না,
দাদা হাসতে হাসতে বললেন শিউলীকে বলিস,
ও ওষুধ দিয়ে দিবে।! সেদিন আর কথা বললামনা, তাড়া ছিলো, বাড়ী থেকে বেড়িয়ে গেলাম,  রাতে মা ফোন করে বললেন, তোর দাদার অবস্থা ভালোনা, আমি বললাম, ঠিক অাছে সকালে ভোরে চলে আসবো,
সকালে এসে দেখি বাড়িতে ভীর, অবশ্য কান্নাকাটি নেই, বুঝা গেলো এখনো বেঁচে আছেন, তবে দেখে মনেহলো হয়তো আর কিছুক্ষণ পরেই উনি চলে যাবেন অনন্ত সুখের দ্যাশে।
আমারও মনেহয় এই জীবনটা যেনো অনন্ত তৃষ্ণার দ্যাশে মরতে মরতে বেঁচে আছে,
কখন জোয়ার ভাটার তীব্রো আক্রমনে বিলীন হয়ে যাবো তার কোন ইয়ত্তা নেই, অথবা কোন অজানা অভিমানে শিউলী বৃক্ষের ছায়ায় স্বইচ্ছায় প্রাণ ত্যাজিবো,
নাহয় বেঁচেই থাকবো কোন অন্যমানুষ হয়ে!
আজ সারাটা দিন ইচ্ছে করছে কিছু একটা করি,
শুধু একটি উড়নার অভাব,
তবে মৃত্যুটা একটা হবে সেটা বুঝা যাচ্ছে,
বুকের ভিতরে হাঁতুরী পিটাচ্ছে, একটা সংকেত পাচ্ছি,
দেখি কোনটা হয়, ভালোবাসার না জীবনের,,,,!!!!