উনিশের ডিসেম্বরে প্রথম সে ভাইরাসটির কথা শোনা যায়,
সালটিকে অমর করে রাখার জন্য নাম দেয়া হয় ‘কভিড-১৯’।  
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণঘাতি এ জীবাণুটি কিন্তু দেখতে ভারি সুন্দর,
গ্রহণকালে দেখা চন্দ্র-সূর্যের চারিদিকে চক্রাকার বেষ্টনীর মত,  
এ জন্যই কাব্যরসিক বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছিল শখ করে
‘করোনা ভাইরাস’, সাথে সালটাকে যোগ করে ‘কভিড-১৯’!


কিন্তু না, এ নয়নাভিরাম জ্যোতির্বলয়টা গ্রাস করে নেয়-  
চন্দ্র নয়, সূর্য নয়, শুধু মানবদেহের গোটা ফুসুফুসটাকে!  
নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ছাড়া-নেয়াটাকে মানুষ এতদিন কত সহজ,  
কতটা আয়াসহীন প্রক্রিয়া হিসেবে নিশ্চিত ধরেই নিয়েছিল!    
কিন্তু সুন্দরী করোনা এবারে বুঝিয়েই ছাড়লো, একটু বাতাস
শ্বাসনালীতে নেয়া-ছাড়াটা কত বড় একটা মহাযজ্ঞের কাজ!    


মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়লো এক অভূতপূর্ব জীবন প্রণালীতে।
নতুন কিছু শব্দ মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকলো,
অভিধানে কতক নতুন শব্দের মানে মানুষ খুঁজতে থাকলো,  
২০২০ এর ‘বর্ষ সেরা’ শব্দে ভূষিত হলো ‘কোয়ারেন্টাইন’!
মানুষ নিজগৃহে গুটিয়ে নিল নিজেদের; এর নাম দেয়া হলো
‘হোম কোয়ারেন্টাইন’। এতে পশু, পাখি, প্রাণীরা মুক্তি পেল!      


গরুর মুখের টোপা যেন এসে বসে গেল মানুষের নাকেমুখে,
তার এক বাহারি নাম দেয়া হলো-‘মাস্ক’। ছোটবেলায় মা
আমাদের যে কথাটা বারে বারে বলতেন- ‘হাত ধোও’, ঠিক
সে কথাটাই ‘হু’ বারে বারে মনে করাতে থাকলো বিশ্বব্যাপী।
সাথে যোগ হলো ‘হ্যান্ড-স্যানিটাইযার’। বিদেশে জারি হলো
‘লকডাউন’, এদেশে অতিরঞ্জিত হয়ে ‘কমপ্লিট লকডাউন’!  


স্কুল কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ হয়ে গেল; নতুন পদ্ধতি
চালু হলো ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। এ যেন এক অবাধ স্বাধীনতা!
মানুষ ক্যাজুয়াল পোষাকে ঘরে বসে কাজ শুরু করে দিল।
ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক ঘরদোরের কাজও সেরে নিতে থাকলো।
‘ওয়েবিনার’, ‘যুম মীটিং’, ইত্যাদিতে ধাতস্থ হতে থাকলো,
ধীরে ধীরে ‘সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং’ কিছুটা শিথিল হয়ে গেল।


এরই মাঝে করোনার দ্বিতীয়, তৃতীয় তরঙ্গ আসা শুরু হলো।
আবার মিউট্যান্ট, ভ্যারিয়্যান্ট, ব্ল্যাক আর হোয়াইট ফাঙ্গাস,  
ইত্যাদি নতুন নতুন শব্দাবলী কানে আসতে শুরু করলো।
আবার প্রয়োজন হলো অক্সিমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডারের,
অক্সিজেন স্যাচিউরেশন মাত্রার প্রতি দৃষ্টি রাখা শুরু হলো,  
‘ডাবল ডোয ভ্যাক্সিনেশন’ হয়ে উঠলো কিছুটা রক্ষাকবচ!  


(কবি'র কথাঃ করোনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী মহামারি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকতে পারে ইতিহাসের পাতায়, যেমন হয়েছিল ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লু। তাই আজ অব্দি চোখে দেখা, কানে শোনা করোনার ইতিহাসটুকু কবিতায় সামান্য টুকে রাখার চেষ্টা করলাম আর কি!)


ঢাকা
০৪ জুন ২০২১