অনুবাদিত হাইকুঃ এক এক করে


এক এক করে ওরা চলে যায়
আমার সবগুলো চড়ুই উড়ে যায়
আমার আকাশ নিঃসঙ্গ পড়ে রয়!


মূলঃ Susan Williams
অনুবাদঃ খায়রুল আহসান


কবি পরিচিতিঃ কবি Susan Williams একজন আমেরিকান সৌখিন কবি। তিনি ওয়াশিংটনের রিচল্যান্ডে বসবাস করেন।


মূল কবিতাটি (হাইকু) নিম্নে দেয়া হলোঃ


One by one
By- Susan Williams


one by one they leave
all my sparrows fly away
lonely are my skies


অনুবাদকের বক্তব্যঃ


সুসান উইলিয়ামস এ যুগের কোন নাম করা কবি নন। তিনি শখ করে কবিতা লিখে থাকেন, তবে প্রচুর কবিতা পড়েন। কোন কবিতা পাঠের পর তিনি যে মন্তব্য করে থাকেন, তাতে বোঝা যায় যে কবিতা সম্পর্কে তিনি ভাল জ্ঞান রাখেন। তিনি একটি ইংরেজী কবিতার ওয়েবসাইটে প্রায় নিয়মিতভাবে নিজের লেখা কবিতা প্রকাশ করেন এবং অন্যদের কবিতায় তার মন্তব্য রাখেন।


৫-৭-৫ ধ্বনিবিন্যাসে (সিল্যাবলসে) লিখিত এই ইংরেজী হাইকুটি হাইকু’র শর্তাবলী সঠিকভাবে পূরণ করেছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। ‘হাইকু’ সম্পর্কে সবাই জানেন, এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবুও, অতি সংক্ষেপে বুঝানোর জন্য আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু টিটো মোস্তাফিজ (Tito Mostafiz) কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত তার একটি পোস্ট থেকে কিছু কথা উদ্ধৃত করা হলোঃ


“সপ্তদশ শতাব্দীতে জাপানী সাহিত্যে কবিতার ক্ষুদ্রতম রূপ হাইকুর উদ্ভব ঘটে। শিরোনামবিহীন এ কবিতায় তিনটি লাইন থাকে। প্রথম ও তৃতীয় লাইনে পাঁচ এবং দ্বিতীয় লাইনে সাত, মোট সতেরটি অক্ষর/মাত্রা/শব্দাংশ ( ‍Syllable or morae ) নিয়ে হাইকু লেখা হয়। হাইকুর দুটি অংশ। কিগো আর কিরেজি। হাইকুর প্রথম লাইন কিংবা ‍তৃতীয় লাইনে সাধারণত কোনো ঋতু বা প্রকৃতির উল্লেখ থাকে। প্রকৃতি সম্পর্কিত এই এক লাইন কিগো। অন্য দুটি লাইন কিরেজি, যাতে হঠাৎ দেখা কিংবা অনুভবের কথা বলা হয়। কিগো এবং কিরেজির সম্পর্ক-সূত্রটি বৈপরীত্য কিংবা তুলনায়। এ দুটি অংশ একসাথে একটি দৃশ্যকল্প তৈরী করে”।


হাইকু লেখা তুলনামূলকভাবে সহজ বিধায় এটা বেশ জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা লাভের সাথে সাথে এর নিয়মাবলীও বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও প্রকৃতির সাথে তাল মিলাতে গিয়ে যে যার মত অনেক শিথিল করে নিয়েছে। মূল জাপানী হাইকু প্রথাগতভাবে সাধারণতঃ এক লাইনেই লেখা হয়ে থাকে। শিরোনামহীন হবার কথা থাকলেও, অনেকে হাইকুতে শিরোনাম ব্যবহার করে থাকেন। জাপানী ভাষায় কোন বহুবচন নেই বিধায় হাইকু একবচনে লেখা হয়, কিন্তু অন্যরা বহুবচনও ব্যবহার করেন। তবে আরো কিছু মূল নিয়ম মানা হয়ে থাকে, যেমন হাইকু সবসময় ‘বর্তমান কাল’ এ লেখা হয়, অতীত বা ভবিষ্যৎ কালে নয়। হাইকুতে কোন যতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয় না, ইংরেজী হাইকুতে কোন ‘ক্যাপিটাল লেটার’ ব্যবহার করা হয়না, ইত্যাদি।


যে কারণে এ হাইকুটি অনুবাদকের ভাল লেগেছেঃ


হাইকুটি হাইকু’র শর্তাবলী পূরণ করা ছাড়াও এর অভ্যন্তরে একটি রূপক অর্থ তথা চিত্রকল্প অন্তর্নিহিত রয়েছে। প্রকৃতির মত মানুষের জীবনকেও চারটি কিংবা ছয়টি ‘ঋতুবৈচিত্রে’ ভাগ করা যায়। সে বিভাজন অনুযায়ী অনুবাদকের জীবনে এখন হেমন্তকাল, এ মুহূর্তে প্রকৃতিতেও তেমনি। এ সময়ে বাগান থেকে যেমন একে একে ‘চড়ুইগুলো’ উড়ে যায়, মানুষের জীবন থেকেও তেমনি একে একে বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনের বিদায় নেয়ার খবর আসতে থাকে। এ বিদায় কখনো লোকান্তরজনিত, কখনো স্থানান্তরজনিত (পরিযায়ী পাখির মত অভিবাসনে যাওয়া/থাকা)।


মাত্র গতকালই একদিনে আমি তিনজন প্রাক্তন সহকর্মীর ‘উড়ে যাবার’ খবর পেয়েছি। তাদের মধ্যে একজন বয়সে আমার সামান্য বড়, বাকী দু’জন সামান্য ছোট। এভাবেই একদিন পাখিহীন আকাশটাকে বড় ‘নিঃসঙ্গ’ মনে হয়। মাত্র তিনটি লাইনে প্রকৃতির সাথে মানব জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি বাস্তব চিত্রকল্প এত সুন্দরভাবে আঁকা হয়েছে বলেই আমি এ ছোট্ট কবিতাটি অনুবাদে অনুপ্রাণিত হয়েছি।


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ টিটো মোস্তাফিজ (Tito Mostafiz)


ঢাকা
৩০ কার্ত্তিক ১৪২৭
১৫ নভেম্বর ২০২০