আদর করে যতবারই আমি তাকে প্রশ্ন করি,
“আমায় ছেড়ে তুমি কি কানাডা যাবে, বুড়ী?”
আমার কথার অর্থ সে কী বোঝে, তা কে জানে,  
মাথাটা তার দুলিয়ে দু’পাশে, বলে সে কানে কানে    
‘না, যাবো না’! তখন তার মাথার প্রতিটি দোলায়
আমার মনটা মায়ায় মায়ায় সয়লাব হয়ে যায়।
অন্তঃপ্লাবিত হয়ে আমি আঁকড়ে ধরি তাকে বুকে,
কপালটা চুমে শোনাই তার প্রিয় গানটি তাকে।    


আমি জানি, না বুঝেই সে দিয়েছে তার আশ্বাস
শীঘ্রই তার মা বাবা যাবে গড়তে নতুন নিবাস
বরফের দেশ কানাডায়, আমাদের থেকে বহুদূরে,
আমরা শুধু দেখবো তাকে ফোনের পর্দা জুড়ে।
গৃহবন্দী হয়ে থাকবে সেখানে, চুপিচুপি বড় হবে
বিদেশী ভাষায় বলবে কথা, আমাদের ভুলে যাবে।  
মাতৃভাষা ক্রমেই আড়ষ্ট হবে, ইংরেজী স্বচ্ছন্দ
আমাদের ভাষা বুঝবে না সে, জানবে না ভাল মন্দ।  


অবশেষে ওরা মিশে যাবে ধীরে ওদেশের মূল স্রোতে,  
বুঝবে না তার দাদার দীদার বুক কেন কেঁপে ওঠে।  
ভালোবাসাময় বুকগুলো সব এভাবেই খালি হয়,
কচি প্রাণগুলো দেশ দেশান্তে এভাবেই পড়ে রয়।
শক্ত বাঁধন শিথিল করে ওরা প্রবাসে চলে যায়  
পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকে কে বা ওরা কোথায়!  
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে আমাদের নাড়ি ছেঁড়া ধন
চলে যায় সব দূর দেশে, করে তাদের শোভা বর্ধন।  


ঢাকা  
২৭ এপ্রিল ২০১৬